ধারাবাহিক গল্প - দোস ডেজ (তৃতীয় পর্ব)

ধারাবাহিক গল্প - দোস ডেজ (তৃতীয় পর্ব)

তৃতীয় পর্ব 

দোস ডেজ - দ্বিতীয় পর্বের লিঙ্ক

রোহিতের কথায় তাদের 'ফেভ প্লেস' অর্থাৎ রিহার্সালের প্রিয় জায়গা তাদের কলেজের অদূরেই একটা পরিত্যক্ত গ্যারেজে। আগে ভালোই চলত, এখন বন্ধ হয়ে গেছে। রোহিত, স্যাম, জিকো, জিনি এরা সব একাউন্টস অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।  আরুষি আর পিউ ইংলিশ অনার্স ফার্স্ট ইয়ার। আরুষির এখানে আসা অব্ধি ওই একটিই বন্ধু। খুব ভাললাগে তার এই সরল মনের মেয়েটিকে। আরুষি নিজেও যথেষ্ট মর্ডান, কিন্তু অসভ্য বা আল্ট্রা মড নয়। তাই পিউএর সাথে অসভ্যতাটা সে একদম বরদাস্ত করতে পারে না! তার মনে হয় পিউ এই গ্রুপে কোনোভাবেই খাপ খায় না! কথাটা ভুল নয়, হয়তো খেতোনা.. যদিনা কলেজ ফেস্টের জন্য হওয়া অডিশনে রোহিত পিউএর গান শুনতো। তবে থেকেই পিউ ওদের গ্রুপে প্রবেশ করেছে। ব্যাপারটা বোধহয় বাকিদের বিশেষ একটা পছন্দ হয়নি, বিশেষত জিনির, কিন্তু রোহিতের মুখের ওপর কথা বলার সাহস কারুরই খুব একটা নেই। 

ADVERTISEMENT
Swades Times Book

জিনি এমনি খুবই উগ্র মেয়ে, কিন্তু রোহিতের উপর ওর কেমন একটা সফট কর্নার আছে... ওর আশেপাশে কোনো মেয়েকে সহ্য করতে পারে না।

আরুষি আর পিউএর আজ একটু বেশীক্ষণ ক্লাস ছিল। সাড়ে তিনটে অব্ধি। পিউ তখনো ফোঁপাচ্ছে....

"দেখলি জিনি কেমন করল আমার সাথে! ও আমায় দেখলেই অমন করে!!"

আরুষি হাত রাখলো বন্ধুর হাতে...

"ছাড় তো, একদম পাত্তা দিবি না। অসভ্য মেয়ে একটা, কোনো কালচার নেই! ক্লাসের পরে কি ওদের রিহার্সালে যাবি??"

"হ্যাঁ, রোহিত বলল তো!"

কথাটা এমন আদুরে গলায় বলল আরুষি অবাক হয়ে তাকালো তার দিকে।

"তুই কি পছন্দ করিস ওকে??"

"না, না, ধুর, ও খুব ভাল বন্ধু। খুব ভাল করে কথা বলে আমার সাথে।"

আরুষি মনে মনে হাসল। মেয়েটা সত্যিই খুব সরল।
তবে রোহিতকে সে যতোটুকুনি দেখেছে বা চিনেছে, তাতে তারও ওকে বেশ ভালো ছেলে বলেই মনে হয়। 

পিউ খুব ভাল গান করে, আর সামনেই ওদের কলেজ ফেস্ট। তাই যেতে ইচ্ছে না করলেও ক্লাসের পর পিউএর হাত ধরে সেও গুটি গুটি পায়ে গ্যারেজের দিকেই এগোলো। 

আরুষি নতুন, তাই পিউ যেতে যেতে তাদের গানের গ্রুপের ব্যাপারে সব বোঝাতে লাগলো তাকে। রোহিত আর পিউ মেইন ভোকাল, জিনি আর জিকো গীটার বাজায় মেইনলি, মাঝে মাঝে গান আর স্যাম ড্রামার। বিভিন্ন ধরনের গান করে ওরা লোকগীতি বা বাংলা গানও চলে। বিখ্যাত সিনেমার গানও চলে। যেখানে প্রয়োজন হয় ড্রাম ইউস হয়, নয়তো হয় না।

গ্যারেজটার ভিতরে কেমন একটু অন্ধকার মতোন। যেইখানটায় তারা প্যাকটিস করে, সেখানে মাথার ওপর হাল্কা দুটো আলো লাগিয়ে নিয়েছে। দরজা বন্ধ করে দিলে আলো খুব একটা প্রবেশ করে না। ওরা দুজন ঢুকে দেখল খালি জিনি আর জিকো বসে আছে। আর কেউ তখনো আসেনি। দুজনকে দেখে জিনি বিরক্তি সহকারে তাকালো একবার তাদের দিকে। কিন্তু সকালেই রোহিতের ধমক খাওয়ার পর নতুন করে আর ঝামেলা করার সাহস পেল না।।

জিনির কথাঃ পুরো নাম জিনিয়া সেন। বড়োলোকের বখাটে মেয়ে বলতে যা বোঝায়, একদমই তাই। বাবা বিকাশ সেন বিশাল গার্মেন্টস বিজনেসের মালিক। এ ছাড়াও গাড়ির বিজনেসও আছে তার। দু তিনটে শোরুম, নিজেদের গাড়িও বেশ কয়েকটা। এতো কিছু থাকার পরেও যেটা একেবারেই ছিল না জিনির কাছে.. তা হল বাবার সময় তার জন্যে আর তার মা। মাকে হারিয়েছিল জিনি অনেক ছোটো বয়সেই.. সেই অভাব আর কোনোদিনই পূরণ হয়নি। বাড়িতে কাকা কাকিমা আর ভাইও ছিল। জিকো জিনিরই খুড়তুতো ভাই। তাই কাকিমাকে যখন ভাইকে আদর করতে দেখতো, আরো বুকটা খাঁ খাঁ করে উঠতো জিনির। আর তাই বড্ড বেশি মাত্রায় জেদি আর একরোখা হয়ে গেছিল ছোটবেলা থেকেই।।

ক্রমশ

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait