ছোট গল্প - অন্য মা

ছোট গল্প - অন্য মা

অফিস থেকে বেরোতে একটু দেরী হয়েছিল অনুমিতার। খুব দরকার তাই একবার আসতে হয়েছিল অফিসে। কয়েক ঘন্টার জন্য। আসার একদম ইচ্ছা হচ্ছিল না। বাড়ি ভর্তি লোক প্লাস রন আর ব্রুনোর জন্য। তার দুই ছেলে, মাত্র আট মাসের দুটি গোল্ডেন রিট্রিভার। পুজো জাস্ট দুদিন হল শেষ হয়েছে। এখনো দীপ্তর গুয়াহাটির মাসি আর বম্বের কাকা বাড়িতে। এক দুদিনেই চলে যাবে। তাই খুব তাড়াহুড়োতেই বাড়ি ফিরছিল সে। হঠাৎ জায়গাটা একটু ফাঁকা, কানে এল একটা চিৎকার। একটি বছর দশেকের বাচ্চা মেয়েকে জোর করে টেনে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করছে দুজন। দেখেই বোঝা যাচ্ছে গরীব ঘরের। দোষের মধ্যে মেয়েটির চেহারাটা বুঝি একটু বড়সড়! রাস্তায় যে কটি লোক বা ছিল, তাদের যেন আর কারুর কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই! ভাবটা এমন আমাদের কি?

অনুমিতার হঠাৎ অসুর হওয়ার ইচ্ছা হল। নাঃ এদের সাথে মানুষ হয়ে কোনো লাভ নেই, হয়ে উঠতে হবে অসুর। মুখের চোয়াল শক্ত হল, হাত হল মুঠো। মন্ডপ খোলা সবে হয়েছে, পাশেই কিছু বাঁশ বুঝি পড়ে ছিল। তারই একটা তুলে নিল হাতে। রে রে করে ছুটে গিয়ে যেই হাতটা মেয়েটাকে নিয়ে ধস্তাধস্তি করছিল.. তার উপর মারলো খুব জোরে। আঃ বলে চিৎকার করে উঠলো। হকচকিয়ে গিয়ে অবাক দুটো চোখ তাকালো তার দিকে। তারপরেই ঝপাৎ করে গাড়ি থেকে নেমে পড়ল তিনজন। হিংস্র দৃষ্টি যেন গিলে খাচ্ছে তাকে। কিন্তু অনুমিতার তখন রোখ চেপে গেছে অসুর বধের জন্য। বাচ্চাটাকে বাঁচাতেও তো হবে! এলোপাথাড়ি চালাতে লাগলো তার অস্ত্রটি। একজনের মাথা ফেটে গেল। আরেকজন তার চুলের মুঠি ধরেছিল, তার পায়ে পড়ল এক মোক্ষম বাড়ি!! ককিয়ে উঠল। তিনজনকেই প্রায় ধরাশায়ী করে দিয়েছে... বাচ্চা মেয়েটা শুধু কাঁদছে.. একজনের হাতে হঠাৎ একটা ধারালো জিনিস চকচক করে উঠল। সেটা নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগলো অনুমিতার দিকে। মিতা ভাবলো এই বুঝি শেষ, আর শেষ রক্ষা হল না। খালি রন আর ব্রুনোর মুখটা মনে পড়ছে। কি হবে তার ছেলেদুটোর! হঠাৎ একজন ঝাঁপিয়ে পড়লো শয়তানটার উপর। না না কোনো মানুষ নয়, একটি শারমেয়! দুটো সাংঘাতিক গর্জন করে কামড়ে ধরে তার হাত ছিন্নভিন্ন করে দিল, যতোক্ষণ না তার হাত থেকে ছুরিটি পড়ে যায়। তারপরও তাকে আঁচড়ে কামড়ে যা করল অবর্ণনীয়। কিছুক্ষণেই তার বাকি দুই সাথীর মতোন সেও লুটিয়ে পড়ল মাটিতে। 

ADVERTISEMENT

অনুমিতার চোখে জল। হাত রাখলো শারমেয়টির মাথার ওপর। সেও গলা দিয়ে এক অদ্ভুত আওয়াজ বের করতে করতে তার হাত চেটে দিতে লাগলো। 

এখনো কাজ বাকি। ১০০ নম্বর ডায়াল করে জায়গা আর ঘটনাটা পুরো বলে মেয়েটাকে তার বাড়ি অব্ধি পৌঁছে দিল। কাছেই বাড়ি তার। পুজোর কদিন বেলুন আর বাচ্চাদের মুখোশ বিক্রি করছিল তার বাবার সাথে। আজ বাবার খুব জ্বর, তাই সে একাই বেরিয়েছিল কিছু আর আছে, সেগুলো যদি বিক্রি করা যায়। ঘরে তেমন কিছু নেই। মা তার নেই, আরো ছোটবেলায় মারা গেছে। বাবা আর সে। বেলুন, মুখোশ সব মাটিতে লুটোপুটি। খুব কাঁদছে। বিক্রি তো কিছুই হল না, উপরন্তু এই অবস্থা। এখন বাবাকে কি বলবে, আর খাবেই বা কি! বাবার ওষুধও তো নিতে হবে! 

অনুমিতা তার কর্তব্য স্থির করে নিল। বাচ্চাটির নাম ঝিমলি। ঝিমলিকে নিয়ে আগে ওষুধের দোকানে গিয়ে ওষুধপত্র কিনল.. তারপর একটা বেশ ভালো দোকান থেকে দু প্যাকেট ফ্রায়েড রাইস আর চিকেন প্যাক করে তাকে বাড়িতে নিয়ে এল মিতা। বাড়ির সামনে এসে পালাচ্ছিল, ঝিমলি জোর করে টেনে ভিতরে নিয়ে গেল। নিচে একটা মাদুরের উপুর একটা বছর চল্লিশের লোক শুয়ে আছে। দেখেই বোঝা যাচ্ছে অসুস্থ। ঘুমোচ্ছিল। মিতা ডাকতে বারণ করল। বদলে ঝিমলির মাথায় হাত বুলিয়ে আর তার হাতে কিছু টাকা ধরিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এল। চোখে তার জল। এ এক ভীষণ মন ভালো করা সন্ধ্যে তার কাছে। কোনোদিনও ভুলবেনা।।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait