গল্প প্রতিযোগিতা ভালোবাসার ঘর

গল্প প্রতিযোগিতা ভালোবাসার ঘর

◆আমেরিকা◆
“জানো সুমন আজ না বড় মা বাবার কথা মনে পড়ছে।” অলস দুপুরে আধখোলা বইটা উল্টে রেখে সুমনের কাছে সরে এলো দিয়া।”বলেছি না মনে এনো না। শুধু শুধু কষ্ট পাও সারাদিন বিশেষত এই দিন গুলো এলেই। ” আলতো হাতে দিয়ার চুলে বিলি কাটতে কাটতে বললো সুমন।”কি করি বলো ফোন খুললেই সবাই এই দিনের কত ছবি দেয়..মার সাথে.. সবাই লেখে..আমি শুধু ভাবি..আমার মা বাবাও তো বাঁচতে পারতো আরো কিছুদিন সবার মত।”সুমনের হাত দুটো দিয়ে নিজেকে বেঁধে নিলো সুমনের নিরাপদ আশ্রয়ে।

#Flashback
*ভারত*
উত্তর কলকাতার বনেদী পাড়া…পুরোনো বাড়ি রক লাল বারান্দা আর তার মধ্যে একটা বাড়িতে থাকে কাবেরী। গোলগাল মেয়ে..একমাথা চুল আর চশমা চোখে যেন গম্ভীর দিদিমণি..পাড়ার ছেলেরাও খুব একটা ঘাঁটাতো না কাবেরীকে..পড়াশোনায় ভালো কাবেরী ইস্কুল পেরিয়ে ঢুকলো কলেজে..আর এখানেই ঘুরে গেল মোড়।
“এই যে শুনছেন?” অফিস রুম টা কোথায় বলবেন?”আমায় বলছেন?” একমুখ দাড়ি Careless attitude নিয়ে ঘুরে তাকিয়ে জিগেস করলো অনিন্দ্য…3rd year ..ফিজিক্স Dept..”

ADVERTISEMENT

ঐদিকে..বোর্ড টা দেখুন..লেখাই তো আছে..””কি রাগী বদমেজাজী ছেলেরে বাবা” মনে মনে আউরে নিয়ে অফিস রুমের দিকে হাঁটা লাগালো কাবেরী।
আবার একদিন রাস্তা দিয়ে কলেজে আসছে কাবেরী..হঠাৎ একটা ঝামেলা মারপিট..
“ফের যদি ওদের ফুটপাথের বাচ্চা বলেছিস তো মেরেই ফেলবো শালা”..এগিয়ে গিয়ে দেখলো একটা বাইক ধাক্কা দিয়েছে একটা বাচ্চাকে..কপাল টা কেটে গেছে আর সেই রাগী ছেলেটা পারলে মেরেই দেয় বাইকের ছেলেটাকে…”
করছেন কি করছেন কি? ছাড়ুন…
দেখছেন না কপাল টা কেটে গেছে বাচ্চাটার আর আপনি..
“হঠাৎ করে এই ধমকটা ধেয়ে আসবে বুঝতে পারেনি অনিন্দ্য..তাই কিছুটা ঘাবড়ে গিয়েই কলার টা ছেড়ে দিলো..
“আপনি? আপনাকে কে বলেছে এই ঝামেলায় ঢুকতে? যান কলেজে যাবেন বলেই মনে হচ্ছে..সেখানে যান”স্বভাবসিদ্ধ রুক্ষতায় বললো সে।

“না যাবো না ..রাস্তা কি আপনার একার? বাচ্চাটার কপাল বেয়ে রক্ত পড়ছে সেটা দেখেছেন? চলুন আমার সাথে এখানে কোথায় ডাক্তারখানা আছে? চলুন বলছি।
“অগত্যা..একটু দূরে ডাক্তারখানায় বাচ্চাটার কপালে ওষুধ লাগিয়ে ও তার হাতে কিছু খাবার কিনে দিয়ে তাকে আস্তানায় পৌঁছে দিলো ওরা। সেই শুরু…
কলেজের অনুষ্ঠান..
নবীন বরণে “তোমার কাছে এ বর মাগি” গেয়ে খুব প্রশংসা পেল কাবেরী। কিন্তু চোখ খুঁজছিল একজন কে..মন জিগেস করছিল মনকে সে কি ছিল অনুষ্ঠানে?  “বলি শুনছেন?
কিভাবে গান এত ভালো.?.এমনিতে তো গম্ভীর হয়ে থাকেন বেড়ালের মত..তারপর ঐরকম ধমক দেন রাস্তায়…নেহাত একটা কাজে এসেছিলাম অডিটোরিয়ামে তাই কানে এলো”..

কি আমি বেড়াল”- উত্তর দিতে গিয়েই দেখলো কাবেরী একটা ঝড় এসে কথাগুলো বলে দিয়ে আবার চলে যাচ্ছে ..অনিন্দ্য।
যাদের গড়ে ওঠা সম্পর্কের ভিত্তি ই ছিল ঝগড়া তাদের এই ভাষাতেই যে প্রেমালাপ চলবে এতে আশ্চর্য কি…
বাড়িতেও জানাজানি হলো এক সময়..দিন এগোতে লাগলো..এখন অনিন্দ্য পিছিয়ে পড়া মানুষদের নিয়ে একটা NGO চালায় সাথে ভালো চাকরী আর কাবেরী গান শেখায়…বেশ চলতে লাগলো দিন…।
কখনো “তোমার খোলা হাওয়া” এসে উড়িয়ে নিয়ে যায় কখনো “বাঁধ ভেঙে দাও” এসে যাবতীয় দুঃখ কে ভাসিয়ে নিয়ে যায় এক ঝটকায়…। বিয়ের তোড়জোড়…।

মিটে গেল বিয়ে..আর পাঁচটা পরিবারে যেমন হয় তেমন ই আর কি..।
বড় হতে লাগলো তরতর করে…আর পাঁচটা মেয়ের মতই..রগচটা অনিন্দ্য আজ একটু শান্ত..।
 ধীরে ধীরে দিয়ার বিয়ের বয়স হলো..।
“জানো মাসী না আজ একটা সম্বন্ধ পাঠিয়েছে দিয়ার জন্য”..অফিস থেকে ফিরতেই কাবেরী বললো অনিন্দ্য কে..।
অনিন্দ্য যেন কদিন ধরেই চুপচাপ..।
“কি গো কিছু বললে না? কি হয়েছে?”
” না কিছু না।”
“বললেই হবে? অন্যমনস্ক হয়ে থাকছো..কথায় কথায় চিৎকার করছো না কি হয়েছে বলোতো?”
“কেন আমি বুঝি চিৎকার করি সারাক্ষণ.?”.এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো অনিন্দ্যর..।
“কি করে বলবে অফিসের অফিসারের অনৈতিক কাজ দেখে ফেলায় ওর চাকরী যেতে চলেছে” মনে মনে ভাবলো সে।
‘শোনো না ছেলের ছবি চেয়েছি..পড়াশোনায় ভালো.. ভালো চাকরী করে ..বিদেশে যাবে কদিন পরে..”।
“ঠিক আছে..ভালোই তো..”।
একদিন সুমন রা সবাই এলো ..কথা বার্তা হৈহৈ অবশেষে বিয়ে।

◆5বছর পর

“বাড়িটা আজকাল বড় ফাঁকা লাগে জান কাবেরী..কেমন যেন লাগে..”
“আবার ভাবছো তুমি ..বলেছি না একদম এসব ভাববে না অনিন্দ্য..আমি কাল ই ডাক্তারবাবুর কাছে যাব”..ঝাঁঝিয়ে উঠলো কাবেরী।
“আর ডাক্তার..আর কি সুস্থ হব আমি”
“শোনো অনিন্দ্য..যে গুন্ডাকে আমি ভালোবেসেছিলাম সেদিন সেই রগচটা গুন্ডার মুখে এই ন্যাকামো ভালো লাগে না..।
কেন তুমি ভাবছো এত..বরং তুমি চাকরী না ছাড়লেই আমি আশ্চর্য্য হতাম।”


“কিন্তু সংসার চলবে কি করে? তোমার ওই কটা টাকায়..আমার ওষুধ তোমার ওষুধ এত কিছু” ।
“সে তোমায় ভাবতে হবে না. আমাদের আর কিসের খরচ..এই তো দুজনে চলে যাবে..বলছি দিয়াকে বলবো?”
“না খবরদার নয়..ও বাইরে থাকে..বললেই আমেরিকা থেকে ছুটে আসবে..আমার চাকরী আছে কি নেই ওদের জানিয়ে ওদের কাছে হাত পাতার কি দরকার?”
“তুমি একই থেকে যাবে না অনিন্দ্য? সেই রগচটা গুন্ডা”..অনিন্দ্যর নিশ্চিন্ত আশ্রয়ে মুখ গুঁজলো কাবেরী।
দিন যায় রাত যায় বয়ে যায় সময়..সুখে দুঃখে থাকে ওরা..।
অনিন্দ্য বেরিয়েছিল বিকেলে একদিন..বড় রাস্তা..হামেশাই যাতায়াত করে বাস লরি..
একটা স্কুল আছে পথে..বাচ্চাগুলো বেরোয় ছুটির সময় দেখতে ভালো লাগে।
দিয়ার মত পুচকে গুলো যেন পিলপিল করে বেরতে থাকে ছুটির সময়..।


একটা দিয়া ছুট্টে রাস্তা পেরোচ্ছে মার কাছে যাবে বলে..ছুটে আসছে বাস..
হৈহৈ চিৎকার..
ঘ্যাঁচচচ.…..সজোরে break চিপলো বাস..মেয়েটার কান্না তার মার চিৎকার আর
বাসের তলায় পরে আছে কাঁচা পাকা দাড়ির একটা গুন্ডা…রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারিধার..মাথা চেপ্টে গেছে পুরো..শেষ মুহূর্তে বাচ্চা টাকে  ঠেলে সরিয়ে নিজে সরার সময় পেলো না গুন্ডাটা।
বয়স বাড়লেও গুন্ডামি যার গেল না…
আর কাবেরী..পুরো জীবন টাই যার কেটেছিল অনিন্দ্যর সাহচর্যে…বেশীদিন সেও আর বাঁচলোনা…
না মেয়ের কাছে সে যায়নি..তালে যে অনিন্দ্যর মাথা নীচু হবে..তার গানের স্কুল তার ছাত্র ছাত্রীদের নিয়েই কাটিয়ে দিয়েছিল জীবনের শেষ কদিন তার অনিন্দ্য কে আঁকড়ে ধরে…।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait