চিরঞ্জীৎ মুখার্জীর কলমে থ্রিলার গল্প :  তারা এসেছিলো ঘুলঘুলিয়ায়

চিরঞ্জীৎ মুখার্জীর কলমে থ্রিলার গল্প : তারা এসেছিলো ঘুলঘুলিয়ায়

গল্প প্রতিযোগিতা : থ্রিলারের থ্রিল
গল্পের নাম : তারা এসেছিলো ঘুলঘুলিয়ায়
কলমে : চিরঞ্জীৎ মুখার্জী

 

 রাত ২:৩০ বাজে; রোজের মতো ঘুমটা ভেঙে গেলো সদ্য ষাট পেরোনো ডাক্তার অনীলাভ সেনের। উফফফফ্! রোজই ঘরের ঘুলঘুলিতে ক্ষীণ ছন্দে রাতে শব্দ হয়। স্ত্রী সরলা তার কুম্ভকর্ণের ন্যায় নাক ডেকে ঘুমাচ্ছেন। যদিও ডাক্তারবাবু আগেও স্ত্রীকে জানিয়েছেন ব্যাপারটা। কিন্তু বউ এর বক্তব্য - "দেখো টিকটিকি - ফিকটিকি হবে"। এমনিতে ডাক্তারবাবুর ভালো চিকিৎসক হিসেবে নাম থাকলেও, পাগলাটে বলে বাদনামটাও অর্জন করেছেন বেশ কিছুদিন। কি আর করার; শীতের মাঝরাতে কে আবার উঠে দেখবে। গরম কালে হলে ফ্যানের শব্দে ঢাকা পরে যেতো। যবে থেকে শীতের জন্য ফ্যান বন্দ, তবে থেকেই এক জিনিস। অগত্যা বালিশটা কানে চাপা দিয়ে শুয়েই পড়লেন আবার।

ADVERTISEMENT

     পরেরদিন, নিজের ক্লিনিক থেকে বাড়ি ফিরছেন অনীলাভ বাবু। বাড়ি ঢোকার আগে ভাবলেন টর্চটা মেরে দেখলে কেমন হয় বাইরে থেকে! যদিও দোতলায়; তাও দেখাই যাকনা। সিঁড়িটা এড়িয়ে উঠানের বেল গাছটার পাশে গিয়ে ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে তাক করলেন ঘুলঘুলিতে। বামেরটা না ডানদিকেরটা, ওটাতেই হয় শব্দটা। কিন্তু আলো পড়তেই কয়েক মুহূর্তের মধ্যে একটা জোনাকির মতো কি ছিটকে বেরিয়ে গেলো মনেহলো। কিছুক্ষন ঠায় দাঁড়িয়ে থেকে ঘরে এলেন ডাক্তারবাবু। স্থির করলেন স্ত্রীকে বলবেন ঘটনাটা। কিন্তু সকালে উঠেই তোরজোড় দেখে মনে পড়লো - বউ তো আজ বাপের বাড়ি যাবে বলেছিলো। থাকবেও ওখানে কদিন। কাজের লোক ছুটকীকে কাজ বোঝাচ্ছে। এরম মাঝে মাঝেই হয়, ছুটকী নিজের কাজ সেরে যায়, বাবু নিজেই বাকিটা করে নেন তখন। ছেলে তার বউ বাচ্চা নিয়ে বিদেশে অনেকদিন হলো।

     সন্ধ্যায় বাড়িতে কেউ নেই বলে ক্লিনিক থেকে জলদি চলে এলেন ডাক্তারবাবু। একবার ভাবলেন কালকের মতো যদি করা যায় আরেকবার। তারপর ভাবলেন ধুর; ঘরে যাই, চা তেষ্টা পেয়েছে খুব। বাড়িতে ঢুকছেন; ঠিক এইসময় লোডশেডিং হলো। বেডরুমে গেলেন চাবিটা রাখবেন ভেবে। কিন্তু ঢুকতেই যা দেখলেন, তাতে তার শিরদাঁড়া দিয়ে ঠান্ডা স্রোত নামতে শুরু করলো। চারিদিক অন্ধকার, হাতের টার্চটা জ্বালিয়ে ঢুকেছিলেন। আতঙ্কে সেটা হাত থেকে পরে নিভে গেছে। সারা ঘরের সিলিং এ রামধনু রঙের ছটা বিভিন্ন ছন্দে জ্বলছে নিভছে। ডাক্তারবাবু বুঝলেন এই আলোর উৎস ওই ঘুলঘুলি। স্ত্রী যতই টিকটিকি বলুক, তিনিতো কোনোদিনও ঘরে টিকটিকি দেখেননি। আর যদি টিকটিকি হয়ই, তারা কি এভাবে ডিসকো করে নাকি!!! শব্দটা আজ অন্য রকম, কিন্তু হচ্ছে। ডাক্তারবাবু বোধশক্তি ফিরে পেলেন কারেন্ট এলো বলে। ভাগ্য ভালো ঘরের লাইটটা অভ্যাস বসেই জ্বালিয়ে ছিলেন ঘরে ঢুকেই, নয়তো মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাড়িয়েই থাকতেন। মনে মনে তিনি ঠিক করলেন কাল বেরোবেন না। ছুটকী চলে গেলে এই কৌতুহল নিবারণ করতেই হবে ।

     দুপুরের সব কাজ শেষ করে চিলেকোঠার থেকে ঘরঞ্চিটা নামিয়ে আনলেন ডাক্তারবাবু। টর্চ টায় নতুন ব্যাটারি ভরে নিলেন। সঙ্গে পকেটে আঁতোশ কাঁচ টাও নিলেন। ঘুলঘুলির তলায় মইটা লাগিয়ে ধীরে ধীরে উপরে উঠলেন। শব্দটা হচ্ছেনা যদিও, তাও একবার দেখাই যাকনা। উঠে প্রথমে আলোটা ফেললেন ভিতরের দিকে। তারপর আস্তে করে পকেট থেকে আঁতোশ কাঁচটা বের করে সবে মাত্র চোখের সামনে ধরেছেন। অমনি কি একটা কাঁচে লাগলো, আর কাঁচ ফাটিয়ে তার ডান চোখের চশমার কাঁচটাও ভেঙে গেলো!!! ভয়ে অনীলাভ বাবু প্রায় পরে যাচ্ছিলেন। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে লক্ষ করলেন একটা আলোর মতো কি জ্বলে উঠে বাইরের দিক থেকে বেরিয়ে গেলো। ঠিক একটা দেশলাই কাঠি জ্বলে উঠলে যেরম হয়, ঠিক সেই রকম। তবে আগুনটা যেনো আলাদা, সবুজের মতো রং। যাই হোক, ব্যাপারটা যে অতি গুরুতর সেটা তিনি বুঝলেন। ভাগ্যিস তার চোখে লাগেনি। আরেকটা চশমাও আছে তার।

     রাতে শুয়ে শুয়ে তিনি একটা ফন্দি আঁটলেন। আজকের ঘটনার পর তার কৌতুহল সীমাহীন হয়ে গেছে। কি এমন আছে ওখানে যা কিনা আত্মরক্ষা করতেও জানে!!! পরদিন পরিচিত মিস্ত্রী লোকু কে খবর দিয়ে ডেকে পাঠালেন। ছুটকীর মনেহলো বাবুর বুঝি শরীর খারাপ। জিজ্ঞেস করে উত্তর যা পেলো, ভাবলো বাড়িতে স্ত্রী নেই তাই বুড়োর আবার ভীমরতি ধরেছে। মিস্ত্রী এলে ডাক্তারবাবু তাকে বললেন একটা টিনের পাত দিয়ে ওই ঘুলঘুলি বাইরে দিয়ে আটকাতে হবে। মিস্ত্রী ডাক্তারবাবু কে কাল করে দেবে বলে চলে গেলো। যথারীতি পরদিন সকাল সকাল যন্ত্রপাতি, মই নিয়ে হাজির মিস্ত্রী। ডাক্তারবাবু নিচে গিয়ে দাড়ালেন, মিস্ত্রী মইতে উঠলো। সবে মাত্র দু ঘা শব্দ হয়েছে হাতুড়ির, অমনি এক বিকট আর্তনাদ। অনীলাভ কিছু বোঝার আগেই মিস্ত্রী মই থেকে নিচে পড়েগেলো। ছুটে গেলেন, সে এক বিভৎস দৃশ্য। একেতো পরে তার মাথা ফেটে, হাত ভেঙে সে অজ্ঞান। আরো না জানি কোথায় কোথায় তার চোট লেগেছে বোঝা দায়। কিন্তু যেটার জন্য ডাক্তারবাবু আঁতকে উঠলেন; তা হলো, লোকটার দুই চোখ দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। কালকের ঘটনাটা মনে পড়ে শিউড়ে উঠলেন তিনি। আশেপাশের লোক জন ছুটে এসেছিলো। ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলো তাকে। হাসপাতালে ডাক্তার সেনের ভালোই খাতির। চিকিৎসায় পরদিন বিকেলের দিকে মিস্ত্রীর জ্ঞান ফিরে এলো। হাসপাতালের ডাক্তার বললেন দুচোখেরই ক্ষমতা অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে, সারা শরীরে ১৩টা হাড় ভেঙেছে।

     এই ঘটনার পর প্রায় এক সপ্তাহ কেটে গেছে। সহৃদয় অনীলাভ বাবু সাধ্যমত সাহায্য করেছেন মিস্ত্রীর পরিবারকে। একদিন দেখা করতে গিয়ে তিনি লোকুর কাছে জানতে চাইলেন সেদিন ঠিক কি ঘটেছিলো। লোকু বললো, মই দিয়ে উঠে সে সবে টিনটা লাগিয়ে হাতুড়ি মেরেছে। অমনি কি যেনো ভিতরে নড়ে উঠলো আর সে মুখ সামনে নিতেই দু চোঁখে এসে কি একটা লাগলো। ব্যাস আর তার কিছুই মনে নেই। ডাক্তারবাবু দীর্ঘশ্বাস ফেলে সমবেদনা জানিয়ে চলে এলেন। বিহিত তো একটা দরকারই, কৌতুহল যে তাকে ডাকছে ওই ঘুলঘুলিতে। ফোন করলেন বাল্য বন্ধু নিরুকে। নিরঞ্জন সান্যাল, DRDOর প্রখ্যাত বৈজ্ঞানিক, অনীলাভ বাবুর হরিহর আত্মা। ফোনে সবটা জানালেন বন্ধুকে। শুনে রহস্যের আজীবনের পূজারী নিরু বললেন তিনি আসবেন ছুটি নিয়ে, কিন্তু একা, দিনসাতেকের জন্যে। অনীলাভ বাবু প্রীয় বন্ধুর আসার ব্যবস্থায় লেগে পরলেন।

     এয়ারপোর্ট থেকে বন্ধুকে নিজে নিয়ে এলেন অনীলাভ বাবু। দীর্ঘদিন পর একে অপরকে দেখে আত্মহারা দুজনেই। বাড়ি এসে বন্ধুর জবরদস্ত আয়োজন দেখে নিরু বেজায় রেগে। "এতো কিছুর কি কোনো দরকার ছিলো বৌদি"! - সরলার উদেশ্যে বললেন নিরু। প্রতিবাদ করে সরালাও স্বামীর সুর ধরলেন। বিকেলের দিকে দুই বন্ধু চা খেতে খেতে আলোচনায় বসলেন। যদিও নিরু সবটা আগেই শুনেছিলেন ফোনে, তবুও এবার সামনে বসে শুনলেন। বর্ণনা করার সময় অনীলাভর মুখে ভয় আর কৌতূহল পড়ার চেষ্টা করছিলেন তিনি। ঠিক করলেন তারা সরাসরি চোখ রাখবেন না ওখানে , আর রাখলেও অন্য পদ্ধতি নেবেন। রাতে সেদিন দুই বন্ধু ওই ঘরেই শোবেন বলে ঠিক করলেন। সরলা ব্যাবস্থা করে, সাবধান করে গেলেন যেনো দুই বন্ধু মিলে রাতে আবার কোনো বিপত্তি না ঘটায়। সেই রাতেও শব্দটা শুনতে পেলো তারা। মই তো লাগানোই ছিলো দেওয়ালে। নিরু এট্টু উঠে আরো কাছ থেকে শুনলেন কিছুক্ষন। তারপর বললেন অনেকটা ভ্রমরের মতো শোনালেও, আদতে দুর থেকে ভেসে আসা কোলাহলের গুঞ্জনের মতো এটা। তার মাথায় একটা ফন্দি আছে তিনি জানালেন। এখন ঘুমানো যাক কাল সেই ব্যবস্থা করা হবে।

     সকালে উঠে নিরুর কথা মতো দুজনে বেরোলেন কিছু জিনিস কিনতে। সারা সকাল ঘুরে ফিরলো প্রায় দুপুরের গড়িয়ে বিকেলের দিকে। সরলা রেগে আগুন। ডাক্তার আর বৈজ্ঞানিকের বন্ধুত্বে পৃথিবী রসাতলে যাবে এই নিয়ে বিস্তর জ্ঞান দিলেন। সব সেরে দুই বন্ধু বসলো পেরিস্কোপ বানাতে। স্কোপে একটি শক্তিশালী কাঁচ লাগলো, যাতে ঘুলঘুলির থেকে দূরে রেখেই দেখার ব্যবস্থা করা যায়। স্ট্যান্ড এর সঙ্গে তারা স্কোপ টাকে ধরাধরি করে সোজা করে দাড় করিয়ে দিলো। সেদিনও আবার লোডশেডিং হলো। অনীলাভ আগেই দেখেছে, এবার নিরঞ্জনও দেখলো সেই রামধনু রঙের আলো ডিসকোর ন্যায় বিভিন্ন ছন্দে জ্বলছে নিভছে। নিরু স্কোপে চোখ রাখলো। যা দেখলো তাতে তার নড়বার উপায় ছিলোনা। অনীলাভ প্রশ্ন করলো "কিরে কি দেখছিস"। নিরু বিস্ময় ভাবে সরে গিয়ে হাত বাড়িয়ে নিজেই বন্ধুর মাথা স্কোপের সামনে এগিয়ে দিলো। এবার অনীলাভও সেই দৃশ্য দেখে আতঙ্কে , কৌতুহলে, বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে গেলো। শেষে মাথা তুলে দুজনের ধরা গলায় বেরিয়ে এলো একসাথে - এলিয়েনস!!!???

     ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছয় পায়ের প্রাণী, পুরো ঘুলঘুলি টাকে নিজেদের গবেষণাগার বানিয়েছে! এক পাশে একটি সিগারেট এর মতন জিনিস দাড়িয়ে! অন্তরীক্ষ যান!! ওইটাকেই অনীলাভ বাবু সবুজ আলো ছেড়ে উড়তে দেখেছিলেন, তিনি এবার নিশ্চিত। সমস্ত প্রানী গুলো চেহারায় মানুষের মতন আকৃতি হলেও, তারা কখনও দুই, কখনও চার আবার কখনও ছয় পায়ে হাঁটছে। তাদের শরীরের যে পোশাক তার থেকেই আলো বেরোচ্ছে। দুই বন্ধু বুঝলেন এরা রক্ষী বাহিনী, হাতে এদের ছোট্ট একটা কাঠির মতো অস্ত্র। বাকিরা; যাদের শরীরে আলো নেই তারা বৈজ্ঞানীক। দুজনেই বিস্ময়ে চুপচাপ ঘুলঘুলির দিকে তাকিয়ে বসে আছেন। হটাৎ একটা হালকা তবুও অন্ধকারের জন্য বোঝা যায় এমন আলো বেরিয়ে এলো ঘুলঘুলি থেকে। সোজা গিয়ে লাগলো পেরিস্কোপ এর মাথায়। টক করে একটা আওয়াজ হলো, আর স্কোপ এর মাথা থেকে ক্লিপটা খুলে পড়লো। বুঝতে বাকি রইলনা ওরা টের পেয়ে অস্ত্র ছুঁড়েছে। এই একই ভাবে অনীলাভ আর লোকুকে ওরা আক্রমণ করেছিলো।

     নিরঞ্জন হটাৎ অনীলাভকে জিজ্ঞেস করল, " অনী ওই রকেট টায় একটা বিশেষ জিনিস লক্ষ করেছিস কি "? অনীলাভ বললো "না! কি জিনিস?" নিরু এবার বৈজ্ঞানিকের অবাক গলায় বললো ওতে নাসার লোগোর মতো একইরকম একটি লোগো আঁকা, কিন্তু তার ওপর একটা ক্রস চিহ্ন দেওয়া। অনীলাভ বললো "কই না লক্ষ করিনিতো", বলে আবার স্কোপ চোখ রাখতে যাচ্ছে। অমনি কতগুলো জোনাকির মতো আলো ঘুলঘুলি থেকে বেরিয়ে এলো। গোটা ১০তো হবেই। সবুজ আলোর বিন্দুগুলি কিছুক্ষন পেরিস্কোপের চারিদিকে ঘুরলো। বিস্ময় আর আতঙ্ক দৃষ্টিতে দুই বন্ধু দেখে চলেছে। বাইরে মনে হয় কারেন্ট এসে গেছে। ঘর অন্ধকার, হটাৎ আলোর বিন্দু গুলো একত্রে ছিটকে সামনের দিকে এগিয়ে এলো। এক মুহুর্ত অপেক্ষা না করেই নিরু বলে উঠলো "চোখ ঢাক অনীনীনীনীনী"! সঙ্গে সঙ্গেই দুজনেই এক সাথে খাটের ওপর বালিশে মুখ গুজলো।

     ঘুম ভাঙলো দুপুর বারোটার পর সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে। ঘরে প্রতিবেশীরা সব জড়ো হয়েছে। নিরুও পাশেই শুয়ে। ডাক্তার চ্যাটার্জি দেখছেন ওদের। সরলা কেঁদেই চলেছেন, আর বলছেন - " বলেইছিলাম তোমরা দুই ডাক্তার বৈজ্ঞানীক মিলে একটা বিপদ ঘটাবে, শুনলেইনা "। সারা পিঠে, পায়ে দুজনের অজস্র লাল লাল দাগ আর ব্যাথা। ডাক্তার চ্যাটার্জি বললেন নিশ্চই বিষাক্ত পোকায় কামড়েছে। কিন্তু কি যে হয়েছে তা তারা দুই বন্ধুই জানেন। কিন্তু সরলার জেদের কাছে শেষমেশ তারা হার মানলেন। আর ওই রহস্যের সমাধান করা হলোনা। নিরুর যাওয়ার দিন এয়ারপোর্টে গিয়ে ছেড়ে এলেন অনীলাভ। কি জানি আবার কবে দেখা হয়। অনেক আপত্তি সত্বেও নিরুকে দিয়ে পেরিস্কোপটা ঠিক করিয়ে নিয়েছিলেন অনীলাভ। বন্ধু যাওয়ার পর দিনই কৌতুহল নিবারণ করতে না পেরে আবার চোখ রেখেই ফেললন পেরিস্কোপে। কিন্তু কই কিছুইতো নেই, ফাঁকা সম্পূর্ণ, শুধু সর্বত্র পরিষ্কার আর একটা কেমন যেন নীরবতা রয়েছে ঘুলঘুলিটা জুড়ে।

     কিন্তু চমকতো তখন এলো, যখন প্রায় একবছর পর একদিন নিরুর ফোন এলো। যদিও এর মাঝেও অনেক বার কথা হয়েছে। ঘুলঘুলি ফাঁকা হয়ে যাওয়ার খবরও দেখার দিনই অনীলাভ নিরুকে জানিয়েছে। ওপাশ থেকে নিরুর গলা - "জানিস অনী আমরা মানুষরা খুবই তুচ্ছ এই মহাজগতে"। অনীলাভ বললো - "কি হয়েছে সেটাতো বল"। এরপর নিরু যা জানালো অনী শুধু শুনেই গেলো । নিরু বললো - "তোর নিশ্চয়ই মনে আছে আমাদের সঙ্গে ওই ঘুলঘুলিয়া রহস্য কবে ঘটেছিলো। আর আমি তোকে বলেও ছিলাম ওই রকেট টায় নাসার লোগোর ওপর কাটা চিহ্ন দেওয়া। আসলে আমাদের সঙ্গে ঘটনাটা যেদিন ঘটলো ঠিক সেই দিনকেই রাতে আমেরিকাতে, মানে আমাদের পরদিন সকাল হবে, একটা ঘটনা ঘটে। পেপারে এই সব বের হয়না। আমরা বৈজ্ঞানীক আমরা খবর পেয়েই যাই। নাসার ৫জন বৈজ্ঞানীক যারা আমেরিকার এরিয়া ৫১তে কর্মরত ছিলেন। এক অজ্ঞাত আক্রমণে মারা যান। ভিডিও ফুটজে তাদের আলোচনা চলাকালীন একটি সবুজ আলোকে প্রবেশ করে ছোট্ট বিস্ফোরিত হতে দেখা যায়, তারপরেই তারা একে একে মাটিতে পরে যান। ঠিক এর কয়েকদিন আগেও আরেকবার এরম হয়েছিলো। সেখানেও একই ভাবে ৫জন বিজ্ঞানী মারা যান। আমার মনে হয় যেদিন তুই প্রথম রামধনু রং দেখিস; সেদিনই। আর সবথেকে বড়ো কথা ওই ১০জন বৈজ্ঞানীক প্রত্যেকে ভিনগ্রহী অর্থাৎ এলিয়েন নিয়ে রিসার্চ করছিলেন। বড় বাঁচা বেঁচে গেছিরে আমরা অনী"।

     ফোন কখন ছেড়ে দিয়েছে নিরু কি জানি। অনীলাভ তাও কানেই ধরে আছে রিসিভারটা। হুঁশ ফিরলো সরলার গলায়। "কে ফোনে? নিশ্চয়ই পাগলের পাগল বন্ধু"! অনীলাভর মাথায় অন্য কথা ঘুরছে। ভাবছেন ওই ছোট্ট রকেট রুপী ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের ঘাঁটি থেকে প্রায় ১৩০০০ কিমি দুরের আমেরিকায় পাঠাতে কি জ্বালানী ব্যবহার করেছে তারা। জানলে হয়তো মহাজগতের অনেক রহস্যের সমাধান হয়ে যেতো। মনে মনে বললেন - "সত্যই মানুষ বড়ো তুচ্ছ প্রাণী এই মহাজাগতে"।


0 comments

Shivani Bhowmik

Shivani Bhowmik

Shared publicly - 25th Jul, 21 12:17 am

গল্পটা এত সুন্দর গুছিয়ে প্রতিস্থাপন হয়েছে প্রথম থেকেই থ্রিল এর প্রচ্ছন্ন ভাব ত শেষ অবধি ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে... ... প্রতিটা character এর description ও পারফেক্ট.. তাদের যেন নিজের আশেপাশেই দেখতে পাচ্ছিলাম... খুব ভালো লাগলো পড়ে ... আগামী দিনে

Anirban Bhattacharjee

Anirban Bhattacharjee

Shared publicly - 18th Jul, 21 08:24 pm

অসাধারণ হয়েছে চিরঞ্জিত, আপনার গল্পের প্লট... দারুণ উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় রয়েছে লেখাটিতে

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait