অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে থ্রিলার গল্প :  পাপের সুর

অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কলমে থ্রিলার গল্প : পাপের সুর

গল্প প্রতিযোগিতা : থ্রিলারের থ্রিল
গল্পের নাম : পাপের সুর
কলমে : অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

 

ঘুম থেকে উঠে চোখে-মুখে জল দিতে গিয়ে আয়নায় তাকিয়ে দেখি জামার উপরের দুটো বোতাম হাওয়া। পশ্চিমের শহরের এই মারাত্মক শীতে জামা পরে শোয়াই আমার অভ্যাস। গতকালও তেমনই শুয়ে ছিলাম। বোতাম-দুটো গেলো কোথায়?  দেখে মনে হচ্ছে কেউ যেন ও-দুটো টেনে ছিঁড়ে নিয়েছে, কিন্তু সামান্য মূল্যহীন দুটো শার্টের বোতামে কার কিই বা উদ্দেশ্য-সিদ্ধি হতে পারে? 

হোটেলের রিসেপশান থেকে ফোন— স্যার, কফি কেয়া আজ রুমমে দেনা হ্যায়?

‘হ্যাঁ’ বলে বারান্দায় চেয়ারটা টেনে নিয়ে বসলাম।

আমি অসিতাভ। আসিতাভ বাগচী। বয়েস তিরিশ। দক্ষিণ কলকাতার এক রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকের চাকুরে। যদিও মাস খানেকের স্পেশাল মেডিকেল-লিভ নিয়ে বর্তমানে পুনা শহরের একটা হোটেলের তিন তলার ঘরে রয়েছি। হোটেলটা শহরের বাইরে। সে একদিকে আমার জান্য ভালোই। দিন-কতক নিরিবিলিতে থাকার জান্যাই এখানে আসা। হোটেলের সামনে বেশ কয়েকটা অনুচ্চ পাহাড়ের সারি, কোনোটা সবুজের গালিচায় মোড়া, কোনটা একেবারেই ন্যাড়া। তাকিয়ে থাকতে বেশ লাগে। সামনে দিয়ে চওড়া রাস্তা ঢাল বেয়ে নেমে গেছে। সেই রাস্তা বরাবর এগুলে একটা বহু পুরোনো ভাঙা বড়-বড় কালো পাথরের তৈরী দুর্গের ভগ্নাবশেষ চোখে পড়ে।

ADVERTISEMENT

 সাতদিন হল পুনা এসেছি। এখনো হোটেল ছেড়ে কোথাও নড়িনি। সময় আছে। একদিন ঠিক করেছি ওই ভাঙা দুর্গটাকে দেখতে যাবো। হোটেলের বেয়ারা আবিশ্যি বলছিল— পেশোয়াকা খুফিয়া কিল্লা থা সাব। আভি দিকনে কেলিয়ে কুছ ভি নেহী হ্যায়!

'কুছ ভি নেহী হ্যায়' নাকী ‘বহুত কুছ হ্যায়’ সেটা অবশ্য আমি ছাড়া আর কেউই বোঝে না। এমন অনেক জিনিস আছে, যা কেউ দেখে না, বোঝে না; অথচ আমি বুঝি, আমি দেখি। মাঝে-মাঝে ছবির মত ঘটনাপ্রবাহ চোখের সামনে ভেসে-ভেসে ওঠে। নিজেকে অদ্ভুতরকম হালকা লাগে তখন। বেশ বুঝতে পারি যা দেখছি তা হয়তো বাস্তবে নেই কিন্তু তাও দেখছি। কী করবো? যা চোখে দেখতে পাচ্ছি পরিষ্কার, তাকে অস্বীকার করি কী ভাবে?

আমারই এক ব্যাচমেট অরিন্দম গাঙ্গুলী মনোরোগ-বিশেষজ্ঞ হয়ে কলকাতায় মস্ত বড় চেম্বার খুলেছে। দারুণ পসার। সব কথা ওকে খুলে বলায় আমায় ইনসোমনিয়া থেকে ডে ড্রিমিং, হ্যালুসিনেশান, স্ক্রিজোফেনিয়া, বাইপোলার-ডিসঅর্ডার আরও কত কী শোনালো। ওর দেওয়া বেশখানিক সিডেটিভ, নার্ভের ওষুধ আর কাউন্সিলিং সেশানের পর এখন অনেকটা তাজা হয়েছি।

মাসখানেক চিকিৎসা করার পর একদিন ও আমায় বললো— "এক কাজ কর। কলকাতা ছেড়ে কোনো ফাঁকা জায়গায় ঘুরে আয়।"

  জায়গাটা ওই ঠিক করে দিল। ওর কোনো পেশেন্টের পড়শীর হোটেল। অনেক কম ভাড়ায় থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও হয়ে গেলো। ওর সার্টিফিকেটের দৌলতে একমাস স্পেশাল সিক-লিভও জোগাড় হল। আমার মাথার ব্যামো পুরোপুরি দূর করতে এই হাওয়া-বদল নাকী বিশেষ জরুরী। রোজকেরে একঘেয়ে জীবনের থেকে সরে এসে শরীর-মনকে বিশ্রাম দেওয়া প্রয়োজন। এখানে এসে থেকে দেখছি, হোটেলের মালিক, ম্যানেজার থেকে রুমসার্ভিসের বেয়ারা সবাই আমায় বেশ খাতির করে চলছে, ব্যবস্থায় কোন ত্রুটি নেই।

কিন্তু ত্রুটি আর কোথাও না থাকলেও আমার মগজের কুঠুরিতে যে খানিকটা আছে, তা আমি ভালোই বুঝছি। মাঝে-মাঝে যখন সেই নমুনা আমি টের পাই নিজেকে তখন বড় অসহায় লাগে। এখানে আসার পরেও সেরকম দু-একবার হয়েছে। অজানা কিছু টুকরো ছবি, ছেঁড়া শব্দ আমি শুনতে-দেখতে পেয়েছি।

এই সেদিন বিকালে হোটেলের বারান্দায় বসে কফি খাচ্ছি, হঠাৎই চোখ গেলো সামনের ওই ঢালু রাস্তার শেষে ভাঙা দুর্গটার দিকে। সঙ্গে-সঙ্গে ছেঁড়া-ছেঁড়া, ভাসা-ভাসা অস্পষ্ট কিছু ছবি চোখের সামনে ফুটে উঠলো— একদম শুরুর দিকে ছবিগুলো থাকে অস্পষ্ট-আবছা। ক্রমে-ক্রমে সব ফোকাস হয়।

দেখলাম—দূরের পাহাড়টার ঠিক নীচে ঘন জঙ্গল। রাস্তাঘাট, দোকানপাট, লোকজন সব যেন দৃশ্যপটের ক্যানভাস থেকে উবে গেছে নিমেষে। আছে শুধু পাহাড়, আর তার সামনে ওই দুর্গ। তবে সেটা এখনকার মতো ভাঙ্গা না।

দেখলাম, দুর্গর ছাদে কারা যেন দাঁড়িয়ে আছেন। আশ্চর্য! মানুষগুলো অতো দূরে, তাও ওঁদের আমি এখন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, যা-যা বলছেন, অবিকল বাংলায় নিজের কানে স্পষ্ট শুনতে পারছি। এ’কী সত্যিই কোনো মানসিক রোগ? নাকী কোনো আশ্চর্য ক্ষমতা, যা আর পাঁচ-জন স্বাভাবিক মানুষের থাকেনা?— উত্তর নেই। অরিন্দমের কাছে আছে কী?

সেদিনের সেই হ্যালুসিনেশান আমার বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। ডোরবেল বাজার শব্দে দৃশ্যপট বিগড়ে গেছিলো। তবে ওইটুকু সময়ে যা-যা দেখলাম তাইই বলি —দুর্গের ছাদে এক স্থুলকায় মানুষ দাঁড়িয়ে। মুখে দুশ্চিন্তার ছাপ। লোকটির পিছনে দুজন ভৃত্যশ্রেণীর লোক দুটো বড়-বড় পাখা নিয়ে হাওয়া করছে। আরেকজন পাশে দাঁড়িয়ে, তার হাতে হাতির দাঁতের তৈরী পান-সুপুরির বাক্স। 

পাশে আরেকজনও পাগড়ি পরা লোক দাঁড়িয়ে, বেশ তাগড়া পেটানো চেহারা, চোখেমুখে বিচক্ষণতার ছাপ। লোকটার নাম জানতে পারলাম যখন প্রথমজন ওঁকে ‘সদাশিব’বলে ডাকলেন।

হটাৎ একদল অশ্বারোহী দুর্গর সদরের কাছে এসে থামলো। তাদের মাথায় পাগড়ি, পরনে লাল পোশাক, কোমরবন্ধ, সিল্কের চোস্ত চুড়িদার, পায়ে নাগরা কোমরে তলোয়ার; সকলেই ক্লান্ত আর ঘর্মাক্ত। ওদের মধ্যে থেকে একজন উঠে এলো ছাদের উপর।

মোটা মানুষটা কিছু শুনে অস্থির পায়চারি করতে করতে বলল, "টোপিওয়ালা লালমুখো আংরেজদের কান্ড দেখলে সদাশিব? ওরা এখনো গায়কোয়াডের হিসেব নিয়ে মাথা ঘামাতে শুরু করছে।"—সদাশিব চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে রইলো।

ঘটনা হয়তো আরও এগোতো যদি না হোটেলের ডোর-বেলটা বেজে উঠতো। এক লহমায় প্রকৃতির বয়েস খানিকটা বেড়ে গেলো, দূরের পাহাড়টা ছাড়া আর সব আবার সেই আগের মতোই হয়ে উঠলো। সেই আধুনিক বাড়ীঘর, রাস্তা-ঘাট, সেই মানুষের হাঁটা চলা, কোলাহল।

দরজা খুলে দেখি নবীনবাবু হাসি মুখে দাঁড়িয়ে আছেন।

এই লোকটির সম্পর্কে দুটো কথা বলে নিই— আমি একে 'নবীনবাবু' বললাম বটে তবে ইনি বাঙালী নন, মুম্বাইইয়ের বাসিন্দা। এখন ব্যবসার কাজে পুনা এসেছেন, উঠেছেন আমার পাশেরই ঘরে, পুরো নাম নবীন আগরওয়াল। তবে সবাই ওকে ডাকে- 'নাভিনজী’।

এই 'নাভিনজী'র বয়েস আমারই কাছাকাছি। সদাহস্যময়, মিশুকে লোকটা ক'দিনে আমার বেশ বন্ধু হয়ে গেছেন। রোজ কাজের ফাঁকে দু'বেলা আমার ঘরে এসে কফি সহকারে আড্ডা মেরে যান। সদ্য বিয়ে করেছেন, তাই পুনার কাজ গুটিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ী ফিরতে পারলে তিনি বাঁচেন। নাভিনজী দারুন বাঁশি বাজান। বেশিরভাগ সময়ই হাতে একটা বাঁশি থাকে। আপনমনে বাঁশিতে নানারকমের সুর তোলেন। রাতে খোলা-বারান্দায় দাঁড়িয়ে নাভিন আগরওয়ালের বাঁশির সুর বেশ লাগে আমার। শুধু একদিন লাগেনি। কেন? সেকথা বলছি পরে।

সেদিনের সেই ছেঁড়া-ছেঁড়া দৃশ্যপটগুলো দেখার পরে চরিত্রগুলো মাথার মধ্যে কেমন যেন ঘুরতে লাগলো। আমি কমার্সের ছাত্র। ঐতিহাসিক চরিত্রদের সাথে তেমন পরিচয় নেই। তবুও 'সদাশিব রাও' নামটা মনে থাকায় ইন্টারনেট ঘেঁটে চরিত্রগুলো সম্পর্কে একটা আন্দাজ পেলাম— রাজার মতো হাবভাব, দুর্গর ছাদে পায়চারি করা স্থূলকায় মানুষটির নাম জানলাম পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাও। সাথে ছিলেন মন্ত্রী সদাশিব রাও। ইতিহাস বলছে সদ্য-আগত ইংরেজদের কাছে নাকানি-চুবানি খেয়ে মারাঠাসাম্রাজ্য তখন ভেঙে পড়েছে। বেসিনের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে গেছে। একসময়ের গোটা ভারতবর্ষের ত্রাস দুধর্ষ মারাঠাসাম্রাজ্যের হাতে আর কোনো ক্ষমতাই নেই। রাজ্যদখলের ক্ষমতা তো নেইই, রাজ্যশাসনের ক্ষমতাটুকুও খর্ব হয়েছে। তৎকালীন ইংরেজ কর্ণধার ওয়ারেন হেস্টিংস শক্তহাতে মারাঠাসাম্রাজ্যের বাড়বাড়ন্ত দমন করেছেন। পেশোয়ার হাতে কিছু অস্ত্রশস্ত্র আর সৈন্য-সামন্ত আছে কেবলমাত্র দুর্গের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য — আর কিছু নয়।

 ইন্টারনেট ঘেঁটে আরও জানতে পারলাম বরোদার গায়কোয়াড় ছিলেন ইংরেজদের প্ৰিয়পাত্র। বর্তমান পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিয়ে ইংরেজদের সাথে হাত মিলিয়েছিলেন তিনি। এই নিয়ে দ্বিতীয় বাজীরাওয়ের সাথে গায়কোয়াড়ের দ্বন্দ্ব লাগে। পেশোয়া সব খুইয়েও ইংরেজদের কাছে মাথা নিচু করার মতো মানুষ ছিলেননা। এরইমধ্যে ইংরেজ-সরকার গায়কোয়াড় আর দ্বিতীয় বাজিরাওয়ের মধ্যে মধ্যস্থতা করতে হস্তক্ষেপ করেন। গায়কোয়াড় তাঁর বুদ্ধিমান, বিশ্বস্ত প্রৌঢ়-মন্ত্রী গঙ্গাধর শাস্ত্রীকে বিরোধ মিটিয়ে নেওয়ার জন্য দূত হিসাবে পুনা পাঠান, বাজীরাওয়ের কাছে।

ইতিহাস বলছে, ইংরেজদের চিরশত্রু দ্বিতীয় বাজীরাও মনের আক্রোশ মেটাতে সেদিন এই বৃদ্ধ ব্রাহ্মণকেও ছাড়েননি, ত্রম্বকজী ডাঙলে নামক এক কুচক্রী নৃশংশ লোককে দিয়ে গঙ্গাধরকে নিষ্ঠুর ভাবে গুপ্ত-হত্যা করান। পরে, হেস্টিংস ও তাঁর সুদক্ষ ইংরেজ বাহিনীর সহায়তায় ত্র্যম্বকজী ধরা পড়েন এবং কেল্লার গোপন-কুঠুরিতে বন্দী হন। কিন্তু কোনো এক আশ্চর্য জাদুবলে অতগুলো ইংরেজ প্রহরীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে ত্র্যম্বকজী দুর্গ থেকে পালিয়ে যান।

এরপরের ইতিহাস অনেক বড়। ইংরেজ-আধিপত্য বাড়ার সাথে-সাথে মারাঠা-আধিপত্য খর্ব হতে থাকে। সবশেষে তৃতীয় ইঙ্গ-মারাঠা যুদ্ধের পর ওয়ারেন হেস্টিংস পেশোয়াপদেরই বিলুপ্তি ঘটান আর পেশোয়া দ্বিতীয় বাজিরাওকে সুদূর কানপুরে নির্বাসনে পাঠান।

অতীত থেকে এবার ফিরি বর্তমানে। গতকাল বিকালেও বারান্দায় বসে দূরের কেল্লারটার দিকে তাকিয়ে আবার কিছু ঐতিহাসিক দৃশ্যপট চোখের সামনে ফুটে উঠেছিল। এমনটা কেন বার-বার হছে জানিনা। সব দেখছি, শুনছি কিন্তু কিছু বলতে বা করতে পারছিনা। যা ঘটে গেছে কয়েক শতাব্দী আগে, ইতিহাসের যেসব অমোঘ ঘটনা বদলাবার নয়। আমার চোখ শুধু তার নীরব সাক্ষী বৈ আর কিছুই নয়। বুঝলাম অরিন্দমের ওষুধে আপাতত কোনো কাজ হচ্ছেনা।দেখলাম ত্র্যম্বকজী ডাংলে কী জঘন্য চক্রান্ত করে নিষ্ঠুরভাবে গঙ্গাধর শাস্ত্রীকে হত্যা করল। শিউরে উঠলো সমস্ত দেহমন। সেযুগে ব্রাহ্মন-হত্যার মত মহাপাপ আর ছিলনা।

ইতিহাসের চাকা চলল, তার পথ অনুসরণ করেই। ত্র্যম্বকজী ধরা পড়লেন। বন্দী হলেন দুর্গের কারাগারে। সশস্ত্র ইংরেজ-সৈন্য পাহারায় রইল। প্রথম থেকেই রাগে, ঘেন্নায় ত্র্যম্বকজীর উপর মনটা বিষিয়ে উঠেছিলো। লোকটা বন্দী হতে মন কিছুটা শান্তি পেয়েছিলো, কিন্তু সে শান্তি স্থায়ী হলো না।

প্রতি-রাতে কেল্লার বাইরে থেকে কোনো এক অদ্ভুত সুরে গান ভেসে আসতো। পাহারাদারেরা সবাই সে গান শুনেছিল। কিন্তু তারা ইংরেজ। মারাঠা ভাষা তারা জানেনা। ওরা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি এই গানের কথার মধ্যেই লুকিয়ে আছে ওই নিষ্ঠুর-কুচক্রি ত্র্যম্বকজীর পালাবার সংকেত।

চোখের সামনে ঘটনাপ্রবাহ দ্রুত বদলাতে শুরু করল, এক পূর্ণিমার রাতে ত্র্যম্বকজী দুর্গর কারাগার থেকে পালিয়ে গেল। ইংরেজ-পাহারাদাররা কিছুই টের পেলোনা।

চাঁদের আলোয় লোকটার মুখ দেখে ভীষণরকম চমকে উঠলাম। একী! এতো অবিকল নাভীনের মুখ। হ্যাঁ, প্রায় কোনো পার্থক্যই নেই। আশ্চর্য! অকারণেই নাভীনের প্রতি মনটা বিষিয়ে গেলো।চমকের এখানেই শেষ নয়। হ্যালুসিনেশান থেকে বাস্তবের মাটিতে ফিরে এলাম নাভীনেরই বাঁশির আওয়াজে। খেয়াল করলাম রাত হয়ে গেছে। নাভীন নিজের ব্যালকানিতে দাঁড়িয়ে বাঁশি বাজাচ্ছেন। কিন্তু এই সুর যে সেই সুর-- যে সুর কেল্লার বাইরে প্রতিরাতে বাজতো। যে সুরের মাঝেই নিহিত ছিল নিষ্ঠুর-হত্যাকারী ত্র্যম্বকজীর পালানোর সংকেত— সেই পাপের সুর!

রাগে-ঘেন্নায় নাভীনের উপর মনটা আরো বিষিয়ে উঠলো|

আয়নার দিকে চেয়ে-চেয়ে এই সব কথাই ভাবছিলাম, হটাৎ কোলাহলের শব্দ কানে এল। রেলিংয়ের  থেকে ঝুঁকে দেখলাম নিচে এক জায়গায় জটলা করে অনেক লোক দাঁড়িয়ে। দুজন পুলিশও আছে। ব্যাপারখানা কী?

একী? নাভীন উপুড় হয়ে পড়ে আছেন। দেহে প্রাণ নেই। মাথার পাশে চাপ রক্ত। হাতে ধরা বাঁশি।

 মাথাটা কেমন যেন ঘুরে গেল। নীচ থেকে দু'জন পুলিশ অফিসারের কথা কানে এলো।

 — "আই থিং..আ কেস অফ সুইসাইড।"

—"মুঝে নেহি লাগতা পান্ডেজি।"

 আমারও ধারণা বাঁশি হাতে কেউ সুইসাইড করেনা। আর নাভিনের তো সুইসাইড করার কারণও ছিল না। পুলিশ অফিসার ওর হাতের মুঠো খুলে আমার সেই ছেঁড়া বোতামদুটো বের করলো। আর কেউ না জানলেও আমি জানি ও-দুটোর মালিক আমি। রাইগর মর্টিসে নাভিনের মুঠোয় আটকে  ছিলো।

মনে হলো সবাই যেন মাথা উঁচিয়ে আমারই দিকে চেয়ে আছে।

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait