সন্ন্যাসী ধ্যানে মগ্ন ছিলেন। আচমকা এক তীব্র শব্দে তাঁর ধ্যান ভঙ্গ হয়। চোখ খুলে তিনি দেখলেন, এক সন্তান-সম্ভবা হরিণীর টুঁটি টিপে ধরে আছে এক বাঘিনী। সন্ন্যাসী তখনি ঐ অন্যায় কাজ বন্ধ করতে বললেন।
বাঘিনী বলল, আমি ক্ষুধার্ত। চারদিন পর এই হরিণীর সন্ধান পেয়েছি। আমি ওকে খাব।
সন্ন্যাসী জানালেন, ও মা হতে চলেছে। তুমিও তো মা হয়েছ কখনো। আর যাকে খুশি খাও, ওর প্রাণ রক্ষা করো।
সন্ন্যাসীর কাছে বাঘিনী জানতে চাইল, তুমি আমাদের জঙ্গলে কেন?
আমি মোক্ষলাভের সন্ধান করছি।
বাঘিনী শর্ত দিল সন্ন্যাসীকে। তুমি যদি সংসারে ফিরে যাও, আমি অভুক্ত থাকব তবু এই হরিণীকে ছেড়ে দেব।
সন্ন্যাসী জঙ্গল ছাড়লেন। গ্রামে পৌঁছে খবর পেলেন ছেলে সম্পত্তির জন্য বাপকে মেরে ফেলেছে।
গ্রাম ছাড়লেন। মফস্বলে পৌঁছে শুনতে পান, দাদা বন্ধুদের সাথে নেশা করে বোনকে ধর্ষণ করেছে। মফস্বল ছাড়েন। শহরে পৌঁছে জানতে পারেন এক বাবা অর্থাভাবে কালো রঙের মেয়েকে পতিতালয়ে বেচে দিয়েছে। আর নাবালিকা ফর্সা মেয়েকে প্রচুর পণ নিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসিয়েছে। সন্ন্যাসী শহর ছেড়ে আবার জঙ্গলে ফিরে যাবেন বলে পা বাড়ালেন।
ADVERTISEMENT
পথে দুটি বাচ্চা ছেলে-মেয়েকে দু'জায়গায় তিনি কাঁদতে দেখতে পেলেন। ছেলেটি তার পোষা বিড়াল ছানা মরে গিয়েছে বলে কাঁদছিল। আর মেয়েটি কাঁদছিল, পাড়ার লাইব্রেরিটা চিরকালের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলে।
সন্ন্যাসী আর জঙ্গলে ফিরে গেলেন না।
(সাজি পত্রিকার জুলাই সংখ্যায় চুঁচুড়া শাখায় প্রকাশিত)
0 comments