বুলিইং - কি? কিভাবে লড়াই করা যেতে পারে এর বিরুদ্ধে?

বুলিইং - কি? কিভাবে লড়াই করা যেতে পারে এর বিরুদ্ধে?

কোনো ব্যক্তি বা সমষ্টিকে শারীরিক, মানসিক বা আবেগগত দিক থেকে  অনৈতিকভাবে আক্রমন করাকে বলা হয় বুলিইং (bullying), যা আমাদের অজান্তেই নানা রূপ ধরে ঘটে চলেছে অহরহ। বলা যেতে পারে যে যারা এই বুলিয়িং এর কাজটি করেন, উচিৎ সময়ে বাধা না দিলে এই প্রবণতা বাড়তে বাড়তে মারাত্মক আকার ধারণ করে।

কয়েকটি উদাহরণ দেওয়া যাক। স্কুলে পড়াকালীন যে মেয়েটি খুব রোগা, তার এই দুর্বল শরীরের জন্য যে বস্তুটি দায়ী তা হলো উপযুক্ত পুষ্টির অভাব। কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে তা মানুষকে বোঝায় সাধ্য কার? তাই ওই মেয়েটিকে নিজের স্বাস্থ্যবতী বান্ধবীদের কটূক্তি সহ্য করতে হয় বিনা অপরাধে, দিনের পর দিন। অযথা নোংরা আক্রমন একেক সময়ে আত্মবিশ্বাস কে টলিয়ে দেয়। পড়াশোনা মাথায় থাক, তখন সেই মেয়েটির মাথায় দিনরাত চিন্তা চলতে থাকে কি খেলে বা কি উপায় অবলম্বন করলে একটু চেহারা হতে পারে। স্কুলে গেলেই সেই ভয়ে কুঁকড়ে থাকা, কখন কি তির্যক মন্তব্য উড়ে আসে। বা ধরা যাক একটি ছেলে স্পোর্টস এ সেরকম ছুটতে পারছে না, পিছিয়ে পড়ছে বা হাঁফাচ্ছে, বন্ধুরা তাকে নিয়ে গণ ঠাট্টা শুরু করলো, তির্যক মন্তব্যে বিদ্ধ করতে শুরু করলো। শুরু হলো তার শারীরিক গঠন নিয়ে আঁকা বাঁকা মন্তব্য।  বৃদ্ধির সময়ে এই অযথা কুৎসিত আক্রমন চরম সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে ছেলেটির জীবনে। এরকমই কারো গানের গলা ভালো না হলেও তাকে দিয়ে জোর করে গান গাইয়ে অনেকে মুখ টিপে হাসেন, এমনকি এরকম ও হয় যে কোনো মানুষকে তার বিগত দিনের কোনো একটি খারাপ অভিজ্ঞতা স্মরণ করিয়ে দিয়ে লোকসমক্ষে হাসি ঠাট্টার ফোয়ারা ছুটতে থাকে, যাতে ওই ব্যক্তি লজ্জিত হন এবং মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত করে না দেওয়া অবধি ওই ঘটনাটি বারবার আলোচিত হতে থাকে।

আমরা প্রত্যেকে কমবেশি এই অভিজ্ঞতাগুলির মধ্যে দিয়ে একসময় গেছি, কেউ কেউ তো এখনো যাচ্ছি। এই প্রবণতাকে থামানো যাবে না। চেনা মানুষগুলো যখন ঘরোয়া আড্ডায় আঘাতের পর আঘাতে আমাদের ক্ষতবিক্ষত করতে থাকে, আমরা দিশা খুঁজে পাই না। এক ধরণের ঘৃণা ওই মানুষগুলোর থেকে আমাদের মানসিক ভাবে দূরে করে দিতে থাকে। ঠিক যেমন স্কুল বা কলেজ জীবনে এই ধরণের অভিজ্ঞতা যাদের থেকে আমরা পেয়েছি তাদের এড়িয়ে চলি।

এই সুযোগ পেলেই মানুষকে হেয় করার যে জান্তব প্রবণতা, এর পশ্চাতে আছে মনস্তাত্বিক  কারণ। প্রথমত যাকে হেয় করা হচ্ছে, তার প্রতি অন্যের হিংসা, রাগ, দ্বেষ যা কিছু থাকতে পারে। সেই ব্যক্তি হয়ত চেষ্টা করেও একজনের সমকক্ষ হতে পারছে না, তা বিদ্যা বুদ্ধি রূপ গুণ যেকোনো বিষয়ে হতে পারে। আর অন্যতম কারণ হলো পরশ্রীকতরতা, যা একটি গুরুতর বিষয়। অনেক অপরাধপ্রাবনতা এই পরশ্রীকাতরতা কে দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয় করতে থাকে। আর এই অসুখের বীজ একবার মনে প্রোথিত হয়ে গেলে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠতে বেশি সময় নেয় না। আমরা দিনরাত এক করে বিজ্ঞানকে উন্নতির চরমে নিয়ে যাচ্ছি, এটা কবে বুঝব যে হাতের ফিঙ্গারপ্রিন্ট যেমন কারো সাথে মেলে না, তেমন প্রত্যেকটা মানুষও প্রত্যেকের থেকে আলাদা, কেউ কারো সাথে তুলনীয় হতে পারেন না, প্রত্যেকের মধ্যে কিছু বিশেষ সম্ভাবনা থাকে, কেউ হন না সর্বাঙ্গসুন্দর।

সুতরাং আসুন এই প্রবণতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হই। এই বুলিইং নামক অসুখটিকে প্রশ্রয় দিলে তা যেকোনো মুহূর্তে যেকোনো মানুষকে দিয়ে ভুল কাজ করিয়ে নিতে পারে। কেন না লড়াই করার মত সাহস সবার থাকে না।

(লেখাটি একেবারেই কল্পনাপ্রসূত নয়। বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে লেখা। বিশদ জানার জন্য ইন্টারনেট এর সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।)

ADVERTISEMENT

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait