পাঞ্জাব প্রদেশের এক সমৃদ্ধ গ্রামের ছেলে ভগৎ। সাধারণের চেয়ে একটু যেন আলাদা কোথাও। বাবা চান ছেলে দুধের ডেয়ারি খুলে বিয়ে থা করে সংসারী হোক। কিন্তু বাবা এটা জানেন না যে সে ছেলে নিজের জীবনসঙ্গী পছন্দ করে বসে আছে। হ্যাঁ, সেই জীবনসঙ্গী হলো দেশ। তার পরাধীন দেশ ভারতবর্ষ। তার মা, তার সবকিছু সেই দেশ। সে কিকরে সংসারী হবে? সে ছেলে দিনরাত সঙ্গ করছে বড় বড় বিপ্লবী নেতার। গান্ধীজিকে নেতা মেনে স্বপ্ন দেখছে স্বাধীন ভারতবর্ষের।
অশান্ত দেশ, অশান্ত পাঞ্জাব। বিলেত থেকে আসছে সাইমন কমিশন, আবার কিছু গন্ডগোল পাকাবে বলে। সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড়। কমিশন এর নেতারা পাঞ্জাবের যে রেল স্টেশনে নামবেন সেখানে কালো পতাকা নিয়ে সকাল সকাল হাজির ভগৎ রা। স্লোগান লেখা, 'সাইমন গো ব্যাক'। নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিখ্যাত নেতা লালা লাজপৎ রাই। অহিংস প্রতিবাদ। কিন্তু সেই প্রতিবাদ গুঁড়িয়ে দিল অত্যাচারী শাসক লাঠির আঘাতে। লাঠি এসে পড়লো লালার মাথায়, লালার জীবনদীপ নিভে গেলো।
ADVERTISEMENT
এই ঘটনার গভীর প্রভাব পড়লো ভগৎ এর ওপর। অহিংস থেকে সশস্ত্র আন্দোলনের দিকে তার মন ঘুরে গেলো। তার ওপর দায়িত্ব পড়লো এই ঘটনার বিচারের। বিচার চাই সেই পুলিশ অফিসার স্যান্ডার্স এর যে লাঠি মেরেছে লালার মাথায়। জাতিতে শিখ ভগৎ দাড়ি এবং চুল বিসর্জন দিলেন, যা শিখ ধর্মে নিষিদ্ধ। নির্দিষ্ট দিনে স্যান্ডার্স কে মারার জন্য রিভলবার তাক করলেন, কিন্তু সবকটা গুলি শেষ হবার পর বুঝলেন ওটা স্যান্ডার্স নয়, স্কট। সে যাইহোক এবার গা ঢাকা দেওয়ার পালা। কিন্তু প্রতিবাদী রক্ত আবার গর্জে উঠলো এসেম্বলি তে, যখন মানুষের কথা মানুষের প্রতিবাদ রূপ পেলো একটি বোমার আকারে, তা কোনো মানুষের ক্ষতি না করে শাসকের সামনে ফেটে পড়লো ওই সভায়।
জানতেন ধরা পড়বেন, আর আদালতে শোনাবেন ভারতবাসীর চাওয়া পাওয়ার কথা। কিন্তু জানতেন না অত্যাচারী শাসকের একমাত্র উদ্দেশ্য হলো রক্তের লাল দাগ হাতে মাখা। জেলের মধ্যে শুরু হলো বিপ্লবী যতীন দাসের নেতৃত্বে ভগৎ দের আমরণ অনশন, কয়েদিদের অধিকার রক্ষার দাবিতে।
শাসক বুঝলো এ ছেলে ভাঙার নয়, সুতরাং একে যত তাড়াতাড়ি শেষ করা যায় ততই মঙ্গল। কেননা এক ভগৎ তখন হাজার হাজার ভগৎ এর জন্ম দিচ্ছে জেলের বাইরে, তাই 1931 সালের 23 এ মার্চ, লাহোর সেন্ট্রাল জেলে ভগৎ সিং, সুখদেব আর রাজগুরুর জীবনদীপ নিবিয়ে দেওয়া হলো। ভগৎ তখন মাত্র চব্বিশ।
কিন্তু তাঁদের আদর্শ কে শেষ করা গেলো না। তা আজও বেঁচে আছে আমাদের মধ্যে।
বিপ্লবী ভগৎ সিং এর শুভ জন্মদিনে তাঁকে কোটি কোটি প্রণাম জানাই। স্বদেশ তোমাদের ভুলবে না, আমরা ভুলতে দেব না।
মানুষের বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
ছবি সৌজন্য : গুগল।
0 comments