চুপকে সে কহি, ধীমে পাও সে, জানে কিস তরহ কিস ঘড়ি

চুপকে সে কহি, ধীমে পাও সে, জানে কিস তরহ কিস ঘড়ি

"চুপকে সে কহি, ধীমে পাও সে, জানে কিস তরহ কিস ঘড়ি/ আগে বড় গ্যায়ে হমসে রাহো মে, পর তুম তো অভি থে ইয়েহি/ কুছ ভি না শুনা, কবকা থা গিলা, ক্যায়সে কহে দিয়া অলবিদা..."

 

 

কি আশ্চর্য না! হাতে বা গোটা শরীরে ট্যাটু নেই, লম্বা চুলে ঝুঁটি বাঁধা নেই, গোটা মঞ্চ জুড়ে খালি গায়ে দাপাদাপি নেই, জিম করা সুঠাম শরীরের বিজ্ঞাপন নেই, অর্থহীন কিছু শব্দসমষ্টি আর হাঁ হাঁ করে চিৎকার নেই---তবু তিনি রকষ্টার। কি এমন জাদু, যাতে করে স্কুলে ফ্রক পড়া আমরা সেই কোন কাল থেকে তড়পাচ্ছি ওঁর গান শোনার জন্য? কি এমন আছে, যাতে করে আজ এই ২০২২ সালে এসে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও উদ্বেল হয়ে বলে উঠছে, 'ওয়াও, আঙ্কলটার গলাটা কি মিষ্টি!' কি এমন আছে, যাতে করে একটা মানুষের শেষ যাত্রায় তামাম ভারতবর্ষ এক আত্মীয়তার বন্ধনে বাঁধা পড়ে গেছে?

 

 

কি বলুন তো আছে ঐ ছোটোখাটো চেহারার ব্যক্তির মধ্যে? খুব "কুল " একটা শব্দ ব্যবহৃত হয় কারো আবেদন বোঝানোর জন্য। সেটা হল "সোঅ্যাগ"। এই মাধুর্য ওঁর গলায়। যে গলার জাদুতে বশীভূত হয়ে একটা অডিটোরিয়ামে হাজার হাজার ছেলেমেয়ের ভীড় হয়, তাদেরকে আটকে রাখা যায় না! সেই সম্মোহনের হাতছানিতে প্রবল গরম, শ্বাসকষ্ট, ঠেলাঠেলি ভীড় উপেক্ষা করে পাঁচিল টপকে আজকের প্রজন্ম ঢুকে পড়তে চায় বেড়াজাল ভেঙে! যে প্রবল আকর্ষণে এখনো প্রেমিক যুগল একে অপরকে জড়িয়ে ধরে হাউহাউ করে কেঁদে ফেলে ওঁর গান শুনতে শুনতে!

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

 

 

যে কণ্ঠের অপূর্ব সুরেলা মূর্ছনার সাক্ষী হতে না পারার ক্ষোভে আমরা নজরুল মঞ্চে না যেতে পারার হতাশায় ভুগি। টিভির পর্দায় চোখ রাখি সেই অনুষ্ঠানের এক ঝলক দেখার জন্য। তারপর হঠাৎ রাত দশটা নাগাদ যখন খবর পাই তিনি নেই, সেই রাতে আমাদের কারো কারো মুখে রাতের খাবারটা রোচে না আর। সারারাত আমরা দু'চোখের পাতা এক করতে পারি না। কি? মিলে যাচ্ছে তো? মিলতে তো হবেই। আমরা যে সবাই তাঁর গান শুনে ভালোবেসেছিলাম! আমাদের নিঝুম রাতের যন্ত্রণার সাক্ষী ছিল তাঁর গান। আমরা প্রেমে, দুঃখে, বিরহে আজও জড়িয়ে আছি তাঁর জিউকবক্সে, আমাদের প্লেলিস্টে আজও তাঁর গানই তো বেশি জায়গা নিয়ে আছে!

 

 

আচ্ছা, বলুন তো, ওঁর এই কলকাতা কনসার্টটা কি আমরা আরো স্মরণীয় করে রাখতে পারতাম না? দুনিয়া কাঁপানো শিল্পীকে ডেকে এনে তাঁর উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পারতাম না? একটা ওপেন গ্যালারি দিতে পারতাম না? অনুষ্ঠান করতে করতে যখন ওঁর গরম হচ্ছিল, তখন হতে পারতাম না আরেকটু সহানুভূতিশীল? টাকা দিয়ে আনানো হয়েছে বলে পুরোপুরি উশুল করে নিতেই হল মানুষটার থেকে? যখন ওঁর অসুস্থ বোধ হচ্ছিল, যখন ব্যাকস্টেজে বসে পড়েছিলেন, তখন উদ্যোক্তা বা তাঁর ম্যানেজার, কারো মাথায় এল না যে কিছু একটা সমস্যা হচ্ছে? যখন বলেছিলেন আলো নিভিয়ে দিতে, কারণ ওঁর প্রবল গরম হচ্ছে, তখন কি ব্যবস্থা নেওয়া যেত না? বদলে মুখের ওপর স্প্রে করা হল ফায়ার এক্সটিংগুইসার? যার মধ্যে থাকে কার্বন ডাই অক্সাইড আর নাইট্রোজেনের মত বিষাক্ত গ্যাস? এ কার কুবুদ্ধি রে ভাই? আরো কত ছেলেমেয়ে মারা যেতে পারত তাই না? ওসব ছেড়েই দিলাম, যখন অনুষ্ঠান শেষে বলেছিলেন বুকে ব্যথা হচ্ছে, তখন রাস্তায় তিন তিনটে বড় হসপিটাল থাকা সত্ত্বেও ওঁকে কেন নিয়ে যাওয়া হয়নি সেখানে? নিয়তি শেষ কথা হলেও, একটা চেষ্টা অন্তত করা যেত না?

 

 

আমরা অবিস্মরণীয় শিল্পীর শেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে একটা তাকলাগানো স্টেজ দিতে পারতাম না? উনি তো চলে গেলেন, কিন্তু আমাদের অতিথিকে যে আমরা যোগ্য সম্মান দিতে পারলাম না, এই কলঙ্কের দায় কে নেবে? কেন ওঁর মত শিল্পীকে বেঘোরে চলে যেতে হবে এভাবে? কে দেবে জবাব? কার চাই উত্তর?

 

 

আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের আর জোর কতটুকু? আমাদের জন্য পড়ে রইল ঐ প্লেলিস্ট, ঐ জিউকবক্স। ওইসব দিনের স্মৃতি, যখন আলোয় ধোয়া রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে একে অপরের হাত ধরে আমরা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম "তু যো মিলা, তো হো গ্যায়ি সব হাসিল...", আরো আরো আরো কত কি!

 

 

মৃত্যুর পরেও থেকে যাবেন তিনি। মহান শিল্পী মৃত্যু দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন, এমনি এমনিই তিনি রকস্টার নন। বুকের অসহ্য কষ্ট হাসিমুখে চাপা দিয়ে রেখে তিনি শেষ নিশ্বাসটুকু পর্যন্ত সুরে সুরে মিশে ছিলেন। থাকবেন। আরো অনেকদিন। মনের মানুষটাকে নিজের মনের কথা ভবিষ্যতে যেই বলতে চাইবে, ওঁর সুর, ওঁর গান ধার করেই শোনাবে।

 

 

"জিনকে দরমিয়া গুজরি থি অবহি, কল তক ইয়ে মেরি জিন্দেগী/ লো উন বাহো কো, ঠন্ডি ছাও কো, হম ভি কর চলে অলবিদা/ মেরি রাহে অলবিদা, মেরি শ্বাসে অলবিদা, অব কহেনা অওর কিয়া, জব তুনে কহে দিয়া অলবিদা..."

 

বিদায়! রকষ্টার!

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait