মহিষাসুরমর্দিনী’র অন্তরমহলের নানা অজানা গল্প

মহিষাসুরমর্দিনী’র অন্তরমহলের নানা অজানা গল্প

করোনা আতঙ্ক কাটিয়ে সবে একটু একটু করে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে সাধারণ মানুষ। এমন পরিস্থিতিতেই মানব জাতিকে করোনামুক্ত করতে মা দুর্গা আসছেন মর্তে। আজ ‘মহালয়া’। শরতের আকাশে বাতাসে পুজো পুজো গন্ধ। রবিঠাকুরের কবিতার সুরে বলতে ইচ্ছা করে, “এসেছে শরৎ, হিমের পরশ লেগেছে হাওয়ার ’পরে। শিউলির গন্ধ-মাখা হিমে-ভেজা শরতকালের এক ভোরে পিতৃপক্ষের অবসানে দেবীপক্ষের সূচনা। তারপরেই ঘাটে ঘাটে শুরু হয়ে যায় তর্পণ। অন্য সময় রেডিওর সঙ্গে কোনওরকম সম্পর্ক না থাকলেও বছরের এই একটি বিশেষ দিনে ভোরবেলা আজও বাঙালি বাড়ি থেকে ভেসে আসে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র চেনা সুর, - যার সঙ্গে স্রষ্টা হিসেবে প্রধানত তিন বাঙালির নাম জড়িয়ে আছে, ‘বাণীকুমার’, ‘পঙ্কজকুমার মল্লিক’ আর ‘বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র’। রচনা ও প্রবর্তনা – বাণীকুমার। সঙ্গীত – পঙ্কজকুমার মল্লিক। গ্রন্থনা ও স্তোত্রপাঠ – বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র।’’

ADVERTISEMENT

মহালয়ার দিন ভোর চারটের সময় রেডিয়ো থেকে ভেসে আসে সেই ঘোষণা: “আজ দেবীপক্ষের প্রাক-প্রত্যুষে জ্যোতির্ম্ময়ী জগন্মাতা মহাশক্তির শুভ আগমন-বার্তা আকাশ-বাতাসে বিঘোষিত। মহাদেবীর পুণ্য স্তবনমন্ত্রে মানবলোকে জাগরিত হোক ভূমানন্দের অপূর্ব প্রেরণা। আজ শারদ গগনে-গগনে দেবী ঊষা ঘোষণা করছেন মহাশক্তির শুভ আবির্ভাব-ক্ষণ।”

তারপর তিনবার শঙ্খধ্বনি। তারপর সুরে সুরে...

যা চণ্ডী মধুকৈটভাদিদৈত্যদলনী যা মাহিষোন্মূলিনী
যা ধূম্রেক্ষণচণ্ডমুণ্ডমথনী যা রক্তবীজাশনী।… [সমবেত কন্ঠ]

সমবেত কন্ঠে গান শেষের পরে - বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উচ্চারণে, সংস্কৃত স্তোত্রপাঠে দেবীর আগমন-বার্তা...

আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোক মঞ্জীর; ধরণীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা; প্রকৃতির অন্তরাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমন বার্তা। আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নব ভাবমাধুরীর সঞ্জীবন।তাই আনন্দিতা শ্যামলীমাতৃকার চিন্ময়ীকে মৃন্ময়ীতে আবাহন। আজ চিৎ-শক্তিরূপিনী বিশ্বজননীর শারদ-স্মৃতিমণ্ডিতা প্রতিমা মন্দিরে মন্দিরে ধ্যানবোধিতা।

সিংহস্থা শশিশেখরা মরকতপ্রখ্যা চতুর্ভির্ভুজৈঃ
শঙ্খং চক্রধনুঃশরাংশ্চ দধতী নেত্রৈস্ত্রিভিঃ শোভিতা।
… [সমবেত কন্ঠ]
সমবেত কন্ঠে সঙ্গীতের পর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের উচ্চারণে স্তোত্রপাঠ
- মহামায়া সনাতনী, শক্তিরূপা, গুণময়ী। তিনি এক, তবু প্রকাশ বিভিন্ন— দেবী নারায়ণী, আবার ব্রহ্মশক্তিরূপা ব্রহ্মাণী, কখনো মহেশ্বেরী রূপে প্রকাশমানা, কখনো বা নির্মলা কৌমারী রূপধারিণী, কখনো মহাবজ্ররূপিণী ঐন্দ্রী, উগ্রা শিবদূতী, নৃমুণ্ডমালিনী চামুণ্ডা, তিনিই আবার তমোময়ী নিয়তি।এই সর্বপ্রকাশমানা মহাশক্তি পরমা প্রকৃতির আবির্ভাব হবে, সপ্তলোক তাই আনন্দমগ্ন।

স্তোত্রপাঠের পরে সুরের মূর্চ্ছনায়, সুপ্রীতি ঘোষের মায়াময় গায়কীতে-

বাজলো তোমার আলোর বেণু, মাতলো যে ভুবন।
আজ প্রভাতে সে সুর শুনে খুলে দিনু মন।…

হে ভগবতী মহামায়া, তুমি ত্রিগুণাত্মিকা; তুমি রজোগুণে ব্রহ্মার গৃহিণী বাগ্‌দেবী, সত্ত্বগুণে বিষ্ণুর পত্নী লক্ষ্মী, তমোগুণে শিবের বণিতা পার্বতী, আবার ত্রিগুণাতীত তুরীয়াবস্থায় তুমি অনির্বচনীয়া, অপারমহিমময়ী, পরব্রহ্মমহিষী; দেবী ঋষি কাত্যায়নের কন্যা কাত্যায়নী, তিনি কন্যাকুমারী আখ্যাতা দুর্গি, তিনিই আদিশক্তি আগমপ্রসিদ্ধমূর্তিধারী দুর্গা, তিনি দাক্ষায়ণী সতী; দেবী দুর্গা নিজ দেহ সম্ভূত তেজোপ্রভাবে শত্রুদহনকালে অগ্নিবর্ণা, অগ্নিলোচনা।এই ঊষালগ্নে, হে মহাদেবী, তোমার উদ্বোধনে বাণীর ভক্তিরসপূর্ণ বরণ কমল আলোক শতদল মেলে বিকশিত হোক দিকে-দিগন্তে; হে অমৃতজ্যোতি, হে মা দুর্গা, তোমার আবির্ভাবে ধরণী হোক প্রাণময়ী। জাগো! জাগো, জাগো মা!

স্তোত্রপাঠের শেষে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের গায়কীতে মা দুর্গার আগমনী গান-

জাগো, জাগো দুর্গা, জাগো দশপ্রহরণধারিণী।
অভয়া শক্তি, বলপ্রদায়িনী, তুমি জাগো।
জাগো,
তুমি জাগো।...
দেবী চণ্ডিকা সচেতন চিন্ময়ী, তিনি নিত্যা, তাঁর আদি নেই, তাঁর প্রাকৃত মূর্তি নেই, এই বিশ্বের প্রকাশ তাঁর মূর্তি। নিত্যা হয়েও অসুর পীড়িত দেবতা রক্ষণে তাঁর আবির্ভাব হয়। দেবীর শাশ্বত অভয়বাণী—
“ইত্থং যদা যদা বাধা দানবোত্থা ভবিষ্যতি ।।
তদা তদাবতীর্যাহং করিষ্যাম্যরিসংক্ষয়ম্‌ ।।”
পূর্বকল্প অবসানের পর প্রলয়কালে সমস্ত জগৎ যখন কারণ-সলিলে পরিণত হল, ভগবান বিষ্ণু অখিল-শক্তির প্রভাব সংহত করে সেই
কারণ-সমুদ্রে রচিত অনন্ত-শয্যা ‘পরে যোগনিদ্রায় হলেন অভিভূত। বিষ্ণুর যোগনিদ্রার অবসানকালে তাঁর নাভিপদ্ম থেকে জেগে উঠলেন ভাবী কল্পের সৃষ্টি-বিধাতা ব্রহ্মা। কিন্তু বিষ্ণুর কর্ণমলজাত মধুকৈটভ-অসুরদ্বয় ব্রহ্মার কর্ম, অস্তিত্ব বিনাশে উদ্যত হতে পদ্মযোনি ব্রহ্মা যোগনিদ্রায় মগ্ন সর্বশক্তিমান বিশ্বপাতা বিষ্ণুকে জাগরিত করবার জন্য জগতের স্থিতি-সংহারকারিণী বিশ্বেশ্বরী জগজ্জননী হরিনেত্র-নিবাসিনী নিরূপমা ভগবতীকে স্তবমন্ত্রে করলেন উদ্বোধিত। এই ভগবতী বিষ্ণুনিদ্রারূপা মহারাত্রি যোগনিদ্রা দেবী।

এভাবেই প্রতি মহালয়ার ভোরে রেডিয়োতে নতুন করে আসে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। আকাশবাণী কলকাতার মহালয়ার বিশেষ প্রভাতী অনুষ্ঠান। আজও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, দৃশ্য মাধ্যমের আকর্ষণ ফিকে হয়ে যায় কথা ও সুরের এই আশ্চর্য মহাকাব্যিক সৃজনের কাছে। কী সেই আশ্চর্য রসায়ন ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র?

সময়টা ১৯২৭ সাল। ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং কোম্পানি নামে বোম্বের (এখন মুম্বই) এক বেসরকারি সংস্থা ডালহৌসির ১নং গার্স্টিন প্লেসের একটি ভাড়া বাড়িতে চালু করল রেডিয়ো স্টেশন। অধিকর্তা স্টেপলটন সাহেব। ভারতীয় অনুষ্ঠানের দায়িত্বে ছিলেন ক্ল্যারিনেট বাদক নৃপেন্দ্রকৃষ্ণ মজুমদার আর প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ রাইচাঁদ বড়াল। সে সময়ে হাতে-গোণা কিছু অভিজাত পরিবারেরই শুধু শোভা পেত রেডিয়ো।

১৯৩০-এর ১লা এপ্রিল সরকারী পরিচালনাধীনে এর নতুন নামকরণ হয়েছিল ‘ইন্ডিয়ান স্টেট ব্রডকাস্টিং সার্ভিস’। পরে ১৯৩৬-এ এই রেডিয়ো স্টেশনের নাম হয় ‘অল ইন্ডিয়া রেডিয়ো’, আরও পরে, ১৯৫৭ সালে ‘আকাশবাণী।’

১৯২৮ সালে রাইটার স্টাফ আর্টিস্ট হয়ে রেডিয়ো স্টেশনে চাকরি নিলেন বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরাজি অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস আর সংস্কৃতে ‘কাব্যসরস্বতী’ উপাধি পাওয়া বৈদ্যনাথ রেডিয়োতে যোগ দিয়ে নতুন নাম নিলেন ‘বাণীকুমার’। বহুমুখী সৃজনশীল প্রতিভা তাঁর।

ওই সময়েই রেডিয়ো থেকে একটা নিজস্ব মুখপত্র প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। প্রখ্যাত ঔপন্যাসিক ও চলচ্চিত্রকার প্রেমাঙ্কুর আতর্থী ওরফে ‘বুড়োদা’ এলেন সে মুখপত্র সম্পাদনার জন্যে। ১৯২৯-এর সেপ্টেম্বর মাসে আত্মপ্রকাশ করল রেডিয়োর নিজস্ব পত্রিকা ‘বেতার জগৎ’।

রেডিয়োর অনুষ্ঠানকে আরোও সৃজনশীল, আরোও জনগ্রাহী করার জন্য প্রায়ই আলাপ-আলোচনা হত তখন। সেরকমই এক আলোচনায় একবার বুড়োদা মত প্রকাশ করলেন, যা যা অনুষ্ঠান চলছে, তার পাশাপাশি কিছু অভিনবত্ব আনাও দরকার। বললেন, “এই তো বাণী রয়েছে- সংস্কৃতের তো আদ্যশ্রাদ্ধ করেছে। ও-ই কতকগুলো বৈদিক শ্লোক জোগাড় করে ফেলুক, আর গান লিখুক, রাই (রাইচাঁদ বড়াল) সুর দিক, বীরেন শ্লোক আওড়াক। ভোরবেলায় লাগিয়ে দাও, লোকের লাগবে ভালো৷”

কথাটা বেশ মনে ধরল নৃপেন মজুমদারের৷ বাণীকুমারও ভাবতে লাগলেন৷ এসব যখন কথা হচ্ছে, তখন দুর্গাপুজোর আর একমাস দেরি৷ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র প্রস্তাব দিলেন, যদি পুজোকে কেন্দ্র করেই কিছু করা হয় তাতে চণ্ডীপাঠ অবশ্যই থাকবে৷ সকলেই সমর্থন জানালেন৷ কিন্তু একটু দ্বিধার ছোঁয়াও ছিল। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ তো কায়স্থ৷ তিনি চণ্ডীপাঠ করলে, শ্রোতারা সকলে মেনে নেবেন তো? নৃপেনবাবু বললেন,

“প্রোগ্রাম করবে, তার আবার বামুন কায়েত কী হে? আমরা কি হিন্দুর মন্দিরে গিয়ে পুজো করছি? এই প্রোগ্রামে যারা বাজাবে তারা তো অর্ধেক মুসলমান- খুশী মহম্মদ, আলী, মুন্সী সবাই তো বাজাবে। তাহলে তো তাদের বাদ দিয়ে ব্রাহ্মণদের ডেকে আনতে হয়৷ তা ছাড়া আমরা একটা বিরাট উত্সবের আগে ভূমিকা হিসেবে এই প্রোগ্রাম করব। এতে কার কী বলার আছে?...”

বাণীকুমার তখন হেসে উঠে বলেছিলেন, যাই হোক না কেন, বীরেনবাবু ছাড়া আর কাউকে তিনি এ কাজের জন্যে ভাবতেই পারেন না৷

এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনার আগে, ১৯৩২ সালের মার্চ মাসে অর্থাৎ ১৩৩৮ বঙ্গাব্দের চৈত্রমাসে ‘বসন্তেশ্বরী’ নামে একটি গীতিআলেখ্য সম্প্রচার করে কলকাতা বেতার৷ সে ইতিহাস শোনা যাক বাণীকুমারের লেখা থেকেই:

‘কলকাতা বেতার প্রতিষ্ঠানে স্বভাবতই জেগে উঠলো জনচিত্তের পরে আকর্ষণী-শক্তি সবিশেষ বিস্তার করবার অদম্য উত্‌সাহ। চললো নব নব অনুষ্ঠান-সম্ভার সাজাবার অক্লান্ত আয়োজন। এরই ফলে জন্ম নিলো ‘বেতার বিচিত্রা’। সাধারণত সংগীত-বহুল অনুষ্ঠানই বৈচিত্র্যে অধিক আদরণীয় ছিলো। সেই সূত্রে শ্রীশ্রী মার্কণ্ডেয় চণ্ডীর বিষয়বস্তুর উপর ভিত্তি করে ‘বসন্তেশ্বরী’ নামে একটি চম্পূ রচনা করি ১৩৩৮ বঙ্গাব্দ অর্থাত্‌ ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে। ওই বছর চৈত্রের শুক্লা অষ্টমীর প্রভাতে বাসন্তী ও অন্নপূর্ণা পূজার সন্ধিক্ষণে সম্প্রচারিত হয় ‘বসন্তেশ্বরী’।

বসন্তেশ্বরী আলেখ্য দিয়ে সূচনার পর, সে বছরই ষষ্ঠীর দিন ভোরে বাণীকুমারের লেখা আর একটি গীতি-আলেখ্য সম্প্রচারিত হল। বিষয়- মহিষাসুর বধ। তখন নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শারদীয় বন্দনা’। ‘শারদীয় বন্দনা’-র ভাষ্যকে পরিমার্জনা করেই সৃষ্টি হল কালজয়ী সঙ্গীতালেখ্য ‘মহিষাসুরমর্দিনী’। বাণীকুমার লিখছেন,

“...বন্ধুবর সঙ্গীতপণ্ডিত হরিশচন্দ্র বালীর সুর-সর্জনে রাগ বসন্ত এবং দেশী, দেবগিরি, বরাটী, তোড়ী, ললিতা ও হিন্দোলী- এই ছয় রাগিনী বাণী সংযোগে এক অপূর্ব রসের সঞ্চার হয়৷ অন্যান্য গানের সুর দেন পঙ্কজকুমার মল্লিক, কয়েকটি নাট্য- কথাসূত্র ও গীতাংশ গ্রহণ করেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এবং আমি শ্রীশ্রীচণ্ডীর কতিপয় শ্লোক আবৃত্তি করি৷ বন্ধুবর রাইচাঁদ বড়ালের সঙ্গীত-পরিচালনায় ও আমার প্রবর্তনায় অনুষ্ঠানটি রসোত্তীর্ণ হয়৷ এই অনুষ্ঠানটিই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ পরিকল্পনার উত্স৷ ... আমি সংস্কৃত রূপকের অন্তর্গত 'বীথী' (ORATORIO) নাট্য রচনাশৈলী অনুসরণে নবভাবে ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ প্রণয়ন করি ১৩৩৯ বঙ্গাব্দে৷ ...”

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কলমেও ‘মহিষাসুরমর্দিনী’র সেই প্রথম প্রস্তুতিপর্বের বর্ণনা বড় আকর্ষক:

‘‘পঙ্কজ সুর তুলে ও সুরারোপ করে তখনকার শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের কণ্ঠে গান তোলাতে লাগলেন। রাইচাঁদও এক বিরাট অর্কেস্ট্রা পরিচালনার জন্য প্রস্তুত হতে লাগলেন। সেকালের সবচেয়ে বড় বাজিয়েরা গানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে এগিয়ে এলেন।’’

১৯৩৪-এর ৮ই অক্টোবর প্রথমবার মহালয়ার ভোরে সম্প্রচারিত হল অনুষ্ঠানটি।

যেটুকু জানা যায়, প্রথম প্রচারের পর ‘শারদীয় বন্দনা’ খুবই ভালো লেগেছিল শ্রোতাদের। সমস্যা হল ১৯৩৪-এ, প্রথমবার মহালয়ার ভোরে সম্প্রচারের পর। কিছু রক্ষণশীল মানুষ, ধর্মকে যাঁরা চিরদিন বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে রাখতে চান, তীব্র আপত্তি জানালেন। বললেন, এক অব্রাহ্মণ ব্যক্তির কন্ঠে কেন চণ্ডীপাঠ শুনতে হবে? প্রতিবাদ করলেন বাণীকুমার। স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র গ্রন্থনা ও চণ্ডীপাঠ করলে তবেই অনুষ্ঠানটি সম্প্রচারিত হবে, নচেৎ নয়। আরও একটি আপত্তি ছিল। মহালয়ার সকালে পিতৃপুরুষের তর্পণের আগেই কেন চণ্ডীপাঠ? এটা মাথায় রেখেই ১৯৩৫ ও ১৯৩৬ সালে অনুষ্ঠানটি প্রচারিত হয়েছিল ষষ্ঠীর ভোরে। ১৯৩৬ - এর ২১ অক্টোবর , ষষ্ঠীর দিনে প্রথমবার ‘মহিষাসুরমর্দিনী’ নামটি ব্যবহার করা হয়। বাণীকুমারের সিদ্ধান্ত মেনে, পরের বছর, ১৯৩৭ সাল থেকে আবারও মহালয়ার ভোরেই ‘মহিষাসুরমর্দিনী’-র সম্প্রচার শুরু হল। এখনও সেই ধারাই অক্ষুণ্ণ। চলুন আবার শুরু করা যাক শিপ্রা বোস-এর মায়াবী কন্ঠের আগমনী গান দিয়ে:
ওগো আমার আগমনী আলো, জ্বালো প্রদীপ জ্বালো।
এই শারদের ঝঞ্ঝাবাতে নিশার শেষে রুদ্রবাতে....

ত্বং স্বাহা ত্বং স্বধা ত্বং হি বষট্‌কারঃ স্বরাত্মিকা । সুধা ত্বমক্ষরে নিত্যে ত্রিধা মাত্রাত্মিকা স্থিতা।।অর্ধমাত্রা স্থিতা নিত্যা যানুচ্চার্যা বিশেষতঃ ।
ত্বমেব সা ত্বং সাবিত্রী ত্বং দেবজননী পরা ।। ত্বয়ৈব ধার্যতে সর্বং ত্বয়ৈতৎ সৃজ্যতে জগৎ । ত্বয়ৈতৎ পাল্যতে দেবি ত্বমৎস্যন্তে চ সর্বদা ।।...
বিসৃষ্টৌ সৃষ্টিরূপা ত্বং স্থিতিরূপা চ পালনে ।

তব অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা।
নব শোভা নব ধ্যান রূপায়িত প্রতিমা।.....

এই গানে মানবেন্দ্র বাংলা গানের মর্যাদাকে ভারতীয় ধ্রুপদী সংগীতের উচ্চতায় তুলে দেন।

তখন প্রলয়ান্ধকাররূপিণী তামসী দেবী এই স্তবে প্রবুদ্ধা হয়ে বিষ্ণুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে বাহির হলেন; বিষ্ণুর যোগনিদ্রা ভঙ্গ হল। বিষ্ণু সুদর্শনচক্র চালনে মধুকৈটভের মস্তক ছিন্ন করলেন। পুনরায় ব্রহ্মা ধ্যানমগ্ন হলেন।

এদিকে কালান্তরে দুর্ধর্ষ দৈত্যরাজ মহিষাসুরের পরাক্রমে দেবতারা স্বর্গের অধিকার হারালেন। অসুরপতির অত্যাচারে দেবলোক বিষাদব্যথায় পরিগ্রহণ হয়ে গেল। দেবগণ ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ব্রহ্মার বরেই মহিষাসুর অপরাজেয়; তাঁর দ্বারা দৈত্যরাজের ক্ষয় সম্ভবপর নয় জেনে তাঁরই নির্দেশে অমরবৃন্দ কমলযোনি বিধাতাকে মুখপাত্র করে বৈকুণ্ঠে গিয়ে দেখলেন, হরিহর আলাপনে রত।
ব্রহ্মা স্বমুখে নিবেদন করলেন মহিষাসুরের দুর্বিষহ অত্যাচারের কাহিনী। স্বর্গভ্রষ্ট দেবতাকুলের এই বার্তা শুনলেন তাঁরা। শান্ত যোগীবর মহাদেবের সুগৌর মুখমণ্ডল ক্রোধে রক্তজবার মত রাঙা বরণ ধারণ করলে আর শঙ্খচক্রগদাপদ্মধারী নারায়ণের আনন ভ্রুকূটিকুটিল হয়ে উঠল।
তখন মহাশক্তির আহ্বানে গগনে গগনে নিনাদিত হল মহাশঙ্খ। বিশ্বযোনি বিষ্ণু রুদ্রের বদন থেকে তেজোরাশি বিচ্ছুরিত হল; ব্রহ্মা ও দেবগণের আনন থেকে তেজ নির্গত হল। এই পর্বতপ্রমাণ জ্যোতিপুঞ্জ প্রজ্জ্বলিত হুতাশনের ন্যায় দেদীপ্যমান কিরণে দিঙ্‌মণ্ডল পূর্ণ করে দিলে। ওই তেজরশ্মি একত্র হয়ে পরমা রূপবতী দিব্যশ্রী মূর্তি উৎপন্ন হল।
তিনি জগন্মাতৃকা মহামায়া। এই আদ্যাদেবী ঋক্‌মন্ত্রে ঘোষণা করলেন আত্মপরিচয়—

অহং রুদ্রেভির্বসুভিশ্চরাম্যহম্‌ আদিত্যৈরুত বিশ্বদেবৈঃ ।
অহং মিত্রাবরুণোভা বিভর্ম্যহম্‌ ইন্দ্রাগ্নী
অহমশ্বিনোভা।।... (সমবেত কন্ঠে)

অপূর্ব স্ত্রীমূর্তি মহাশক্তি দেবগণের অংশসম্ভূতা; দেবগণের সমষ্টিভূত তেজোপিণ্ড এক বরবর্ণিনী শক্তিস্বরূপিণী দেবীমূর্তি ধারণ করলেন।
এই দেবীর আনন শ্বেতবর্ণ, নেত্র কৃষ্ণবর্ণ, অধরপল্লব আরক্তিম ও করতলদ্বয় তাম্রাভ। তিনি কখনো বা সহস্রভুজা, কখনো বা অষ্টাদশভুজারূপে প্রকাশিত হতে লাগলেন। এই ভীমকান্তরূপিণী দেবী ত্রিগুণা মহালক্ষ্মী, তিনিই আদ্যামহাশক্তি। মহাদেবীর মহামহিমময় আবির্ভাবে বরণগীত ধ্বনিত হয়ে উঠল।

এরপর কৃষ্ণা দাশগুপ্ত মোহময়ী সুরে গেয়ে উঠলেন:

অখিল বিমানে তব জয়গানে যে সামরব,
বাজে সেই সুরে সোনার নুপূরে নিত্যে নব।....

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।
(সমবেত কন্ঠে)

দেবীর আবির্ভাবের এই শুভ বার্তা প্রকাশিত হল। সকল দেবদেবী মহাদেবীকে বরণ করলেন গীতিমাল্যে, সেবা করলেন রাগচন্দনে। জগন্মাতা চণ্ডিকা উপাসকের ধনদাত্রী, ব্রহ্মচৈতন্যস্বরূপা সর্বোত্তম মহিমা। মহাদেবী অন্তর্যামীরূপে ব্যপ্ত হয়ে আছেন দ্যুলোক-ভূলোক। ভুবনমোহিনী সর্ববিরাজমানা জগদীশ্বরী, আপন মহিমায় দ্যাবা পৃথিবী ও সৃষ্টির মধ্যে পরিব্যপ্ত হয়ে অবস্থান করেন পরমচৈতন্যরূপা। মানবের কল্যাণে সর্বমঙ্গলা হোন উদ্বুদ্ধা।

তারপর শ্যামল মিত্র, অসীমা ভট্টাচার্য্য, আরতি মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যর কন্ঠে কোরাস গান:
শুভ্র শঙ্খরবে সারা নিখিল ধ্বনিত।
আকাশতলে অনিলে-জলে, দিকে-দিগঞ্চলে,
দেবী নিত্যা, তথাপি দেবগণের কার্যসিদ্ধিহেতু সর্বদেবশরীরজ তেজঃপুঞ্জ থেকে তখন প্রকাশিত হয়েছেন বলে তাঁর এই অভিনব প্রকাশ বা আবির্ভাবই মহিষমর্দিনীর উৎপত্তিরূপে খ্যাত হল। দেবী সজ্জিতা হলেন অপূর্ব রণচণ্ডী মূর্তিতে। হিমাচল দিলেন সিংহবাহন, বিষ্ণু দিলেন চক্র,
পিনাকপাণি শঙ্কর দিলেন শূল, যম দিলেন তাঁর দণ্ড, কালদেব সুতীক্ষ্ণ খড়্গ, চন্দ্র অষ্টচন্দ্র শোভা চর্ম দিলেন, ধনুর্বাণ দিলেন সূর্য, বিশ্বকর্মা অভেদবর্ম, ব্রহ্মা দিলেন অক্ষমালা-কমণ্ডলু, কুবের রত্নহার।
সকল দেবতা মহাদেবীকে নানা অলঙ্কারে অলঙ্কৃত ও বিবিধপ্রহরণে সুসজ্জিত করে অসুরবিজয় যাত্রায় যেতে প্রার্থনা করলেন। রণদুন্দুভিধ্বনিতে বিশ্বসংসার নিনাদিত হতে লাগল। যাত্রার পূর্বে সুর-নরলোকবাসী সকলেই দশপ্রহরণধারিণী দশভুজা মহাশক্তিকে ধ্যানমন্ত্রে করলেন অভিবন্দনা।

জটাজূটসমাযুক্তামর্ধেন্দুকৃতশেখরাম্‌।
লোচনত্রয়সংযুক্তাং পূর্ণেন্দুসদৃশাননাম্‌।।(সমবেত কন্ঠে)

জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী ।
দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নমোঽস্তু তে ।।

দেবী অষ্টাদশভুজামূর্তি পরিগ্রহণ করে শঙ্খে দিলেন ফুৎকার। দেবীর রণ-আহ্বানশব্দ অনুশরণ করে সসৈন্যে ধাবমান হল মহাবলশালী মহিষাসুর। অসুররাজ লক্ষ্য করলেন মহালক্ষ্মীদেবীর তেজঃপ্রভায় ত্রিলোক জ্যতির্ময়, তাঁর মুকুট গগন চুম্বন করছে, পদভারে পৃথ্বী আনতা আর ধনুকটঙ্কারে রসাতল প্রকম্পিত। দেবসেনাপতি মহাশক্তির জয়মন্ত্রের গুণে দেবীকে দান করলেন মহাপ্রীতি।

এর পর বিমল ভূষণ গাইলেন:
নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী, নমো চণ্ডী।
জাগো রক্তবীজনিকৃন্তিনী, জাগো মহিষাসুরবিমর্দিনী,

দেবীর সঙ্গে মহিষাসুরের প্রবল সংগ্রাম আরম্ভ হল। দেবীর অস্ত্রপ্রহারে দৈত্যসেনা ছিন্নভিন্ন হতে লাগল।মহিষাসুর ক্ষণে ক্ষণে রূপ পরিবর্তন করে নানা কৌশল বিস্তার করলে। মহিষ থেকে হস্তীরূপ ধারণ করলে; আবার সিংহরূপী দৈত্যের রণোন্মত্ততা দেবী প্রশমিত করলেন। পুনরায় নয়নবিমোহন পুরুষবেশে আত্মপ্রকাশ করলে ওই ঐন্দ্রজালিক। দেবীর রূঢ় প্রত্যাখ্যান পেয়ে আবার মহিষমূর্তি গ্রহণ করলে। রণবাদ্য দিকে দিগন্তরে নিনাদিত, চতুরঙ্গ নিয়ে অসুরেশ্বর দেবীকে পরাজিত করবার মানসে উল্লসিত। দেবীর বাহন সিংহরাজ দাবাগ্নির মত সমস্ত রণক্ষেত্রে শত্রুনিধনে দুর্নিবার হয়ে উঠল।নানাপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা মধু পান করতে করতে মহিষরূপকে সদম্ভে বললেন,

“গর্জ গর্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম্যহম্‌ ।
ময়া ত্বয়ি হতেঽত্রৈব গর্জিষ্যন্ত্যাশু দেবতাঃ”।।

দেবতাগণ সানন্দে দেখলেন, দুর্গা মহিষাসুরকে শূলে বিদ্ধ করেছেন আর খড়্গনিপাতে দৈত্যের মস্তক ভূলুণ্ঠিত। তখন অসুরনাশিনী দেবী মহালক্ষ্মীর আরাধনাগীতিসুষমা দ্যাব্যা পৃথিবীতে পরিব্যাপ্ত হল।

তারপর সুমিত্রা সেনের মোহময়ী কন্ঠে গীত হল
মাগো, তব বীণে সঙ্গীত প্রেম ললিত।
নিখিল প্রাণের বীণা তারে তারে রণিত।
সকল রোদন সেই সুরে গেল মরিয়া।

দেবি প্রপন্নার্তিহরে প্রসীদ প্রসীদ মাতর্জগতোঽখিলস্য। প্রসীদ বিশ্বেশ্বরী পাহি বিশ্বং ত্বমীশ্বরী দেবি চরাচরস্য।।সর্বমঙ্গলমঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে। শরণ্যে ত্র্যম্বকে গৌরি নারায়ণি নমোঽস্তু তে।। রোগানশেষানপহংসি তুষ্টা রুষ্টা তু কামান্‌ সকলানভীষ্টান। ত্বামাশ্রিতানাং ন বিপন্নরাণাং ত্বামাশ্রিতা হ্যাশ্রয়তাং প্রয়ান্তি।।
তারপর সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠের জাদুতে গীত হল

বিমানে বিমানে আলোকের গানে জাগিল ধ্বনি।
তব বীণা তারে সে সুর বিহারে কি জাগরণে।....

প্রথম কল্পে দেবী কাত্যায়ান-নন্দিনী কাত্যায়নী, অষ্টাদশভুজা উগ্রচণ্ডারূপে মহিষমর্দন করেন; দ্বিতীয় ষোড়শভুজা ভদ্রকালীর হতে মর্দিত হয় মহিষ; আর তৃতীয়ৈঃ বর্তমানকল্পে দশভুজা দুর্গারূপে মহাদেবী সুসজ্জিতা মহিষমর্দিনী। অখিল মানবকণ্ঠে ধ্বনিত পুষ্পাঞ্জলি স্তোত্রবন্দনা—
জয় জয় জপ্য জয়ে জয় শব্দ পরস্তুতি তৎপর বিশ্বনুতে
ঝণঝণ ঝিংঝিমি ঝিংকৃতনূপুর শিঞ্জিতমোহিত ভূতপতে ।
নটিত নটার্ধ নটী নট নায়ক নাটিতনাট্য সুগানরতে
জয় জয় হে মহিষাসুরমর্দিনি রম্যকপর্দিনি শৈলসুতে
।।(
সমবেত কন্ঠে)
যা দেবী সর্বভূতেষু বিষ্ণুমায়েতি শব্দিতা ।
নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ নমস্তস্যৈ
নমো নমঃ।।...
এবার তরুণ ব্যানার্জ্জী গাইলেন আগমনী গান

হে চিন্ময়ী, হিমগিরি থেকে এলে,
এলে তারে রেখে নির্মল প্রাতে।

শ্রীশ্রীচণ্ডিকা গুণাতীতা ও গুণময়ী। সগুণ অবস্থায় দেবী চণ্ডিকা অখিলবিশ্বের প্রকৃতিস্বরূপিণী। তিনি পরিণামিনী নিত্যার্দিভ্যর্চৈতন্যসৃষ্টি প্রক্রিয়ায় যে শক্তির মধ্য দিয়ে ক্রিয়াশীলরূপে অভিব্যক্ত হন, সেই শক্তি বাক্‌ অথবা সরস্বতী; তাঁর স্থিতিকালোচিত শক্তির নাম শ্রী বা লক্ষ্মী; আবার সংহারকালে তাঁর যে শক্তির ক্রিয়া দৃষ্ট হয় তা-ই রুদ্রাণী দুর্গা। একাধারে এই ত্রিমূর্তির আরাধনাই দুর্গোৎসব।
এই তিন মাতৃমূর্তির পূজায় আরত্রিকে মানবজীবনের কামনা, সাধনা সার্থক হয়, চতুর্বর্গ
(ধর্ম, অর্থ, কাম, মোক্ষ) লাভ করে মর্তলোক।

প্রতিমা ব্যানার্জ্জী গাইলেন মায়ের আবাহনী সঙ্গীত
অমল কিরণে ত্রিভুবন-মন-হারিণী।
হেরিনু তোমার রূপে করুণা নাবনী,

ষড়ৈশ্বর্যময়ী দেবী নিত্যা হয়েও বারংবার আবির্ভূতা হন।তিনি জগৎকে রক্ষা ও প্রতিপালন করেন। দেবীর করুণা অসীম; বিধাতৃ বরদার করুণার পুণ্যে বিশ্বনিখিল বিমোহিত; অমৃতরসবর্ষিণী মহাদেবীর অমল রূপের সুষমা প্রতিভাত ধরিত্রীর ধ্যান গরিমায়।

এরপর পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও অন্যান্যরা গাইলেন

রূপং দেহি জয়ং দেহি যশো দেহি দ্বিষো জহি ।।
বিশ্বপ্রকৃতি মহাদেবী দুর্গার চরণে চিরন্তনী ভৈরব ধ্যানরতা পূজারিণী ভৈরবীতে গীতাঞ্জলী প্রদান করে ধন্যা হলেন। তাঁর গীতবাণী আজ অনিলে সুনীলে নবীন জননোদয়ে দিকে দিকে সঞ্চারিত।

তারপর মহিষাসুরমর্দিনী অনুষ্ঠানের শেষ গান গাইলেন উৎপলা সেন

শান্তি দিলে ভরি।
দুখরজনী গেল তিমির হরি।

‘মহিষাসুরমর্দিনী’ প্রকাশের সময় প্রসঙ্গে বাণীকুমার লিখেছেন: মহিষাসুরমর্দিনী আমার প্রথম যৌবনের রচনা। কিন্তু মূল রূপটির বিশেষ পরিবর্তন না ঘটলেও এই গ্রন্থের বর্তমান রূপ বহুতর তথ্য ভাবগর্ভ বিষয় এবং বেদ-পুরাণাদি-বিধৃত শ্লোকাবলী সংযোজনায় সমলঙ্কৃত। প্রকৃতপক্ষে এই গ্রন্থ মার্কন্ডেয় সপ্তশতী চন্ডীর সংক্ষিপ্তসার বললেও অত্যুক্তি হয় না, তদুপরি এর মধ্যে আছে মহাশক্তি-সম্বন্ধে বৈদিক ও তান্ত্রিক তত্ত্বের ব্যঞ্জনা, এবং এর অন্তরে নিহিত রয়েছে শাশ্বত ভারতের মর্মকথা

তথ্যঋণ ও কৃতজ্ঞতা: ‘মহিষাসুরমর্দিনী’: বাণীকুমার: গ্রন্থপঞ্জী—শ্রীশ্রীচণ্ডী, শ্রীশ্রীচণ্ডিকার ধ্যান, অর্গলাস্তোত্র, দেবীসূক্ত – শ্রীশ্রীচণ্ডী, স্বামী জগদীশ্বরানন্দ কর্তৃক অনূদিত ও সম্পাদিত।


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 06th Oct, 21 03:01 am

দারুণ প্রবন্ধ

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait