বিনোদন ডেস্ক: দেখতে-দেখতে এক বছর কেটে গেল। বাংলা চলচ্চিত্র জগৎ হারিয়েছে তাঁদের প্রিয় অপুকে। বাংলা সংস্কৃতি জগতের প্রবাদপ্রতিম মানুষটিকে হারিয়ে এখনও যেন কিছুটা থমকে রয়েছে টলিপাড়া। তাঁর শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। আর তাই তো ১৫ নভেম্বর, সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সকাল থেকেই বাংলা সিনেমার ‘রাজপুত্র’-এর স্মৃতিচারণায় ভেসে গেলেন টলিউড তারকারা। তিনি কারও কাছে সৌমিত্র কাকু আবার কারও কাছে সৌমিত্র জ্যেঠু। কারও কাছে বাংলা সিনেমার গোটা একটা ইনস্টিটিউশন। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে স্মরণ করে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখলেন, ”তোমায় নতুন করে কী বলব কাকু? তুমি পথপ্রদর্শক, ভরসার জায়গা, ভালবাসার জায়গা। তোমার অভিনয় দক্ষতা নিয়ে আমি কী বা বলতে পারি? সেটা তো গোটা দুনিয়া জানে। ভালো থেকো সৌমিত্র কাকু।” পোস্ট করলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি ছবিও। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই মধুর হাসি এখনও যেন অভিনেতা আবির চট্টোপাধ্য়ায়ের চোখে আটকে রয়েছে। তাই হয়তো সৌমিত্রর হাসিটাকেই সবচেয়ে বেশি মিস করেছেন আবির। সোশ্য়াল মিডিয়ায় সৌমিত্রর ছবি পোস্ট করে আবির লিখলেন, ”এই হাসিটাই থেকে যাক চিরকাল মনের ভিতরে।”
ADVERTISEMENT
সদ্য মুক্তি পাওয়া ‘তখন কুয়াশা ছিল’ ছবিতে সৌমিত্রর সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন শাশ্বত চট্টোপাধ্য়ায়। সেই সিনেমার ছবি পোস্ট করে শাশ্বত লিখলেন, ”সৌমিত্র জ্যেঠুর সঙ্গে ছবির শুটিংয়ের মুহূর্তগুলো আমার সারাজীবনের প্রাপ্তি।” মুক্তির প্রতীক্ষায় রয়েছে সৌমিত্র চট্টোপাধ্য়ায়কে নিয়ে তৈরি পরিচালক ও অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্য়ায়ের বায়োপিক ‘অভিযান।’ সৌমিত্রের প্রয়াণের পরই প্রকাশ্যে এসেছিল এই ছবির ট্রেলার। কিংবদন্তি অভিনেতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে সোশ্যাল মিডিয়ায় পরমব্রত চট্টোপাধ্য়ায় লিখলেন, ‘আগের বছর এই সময়টায় আমি ছিলাম হিমাচলপ্রদেশে। ওনার শেষ যাত্রায় থাকতে পারিনি। এবারেও প্রিয় শহর ছেড়ে অনেকটা দূরে। একদিক থেকে ভাবলে মনে হয়, এই ভালো – ওনার মতো একজন পরম বন্ধুর চলে যাওয়ার কষ্টটা দূরে থেকে নিভৃতে, নির্জনে নিজের মতো করে ভাগ করে নিই। উনি কাজ বড্ড ভালোবাসতেন, চেষ্টা করবো আজকের দিনটায় কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে। আসলে, এই মনঃকষ্ট একান্তই ব্যক্তিগত, যেটা শব্দে নয়, আমার কাছে অনুভূতিতে মানায়!’
মার্কিন নাট্যকারে মারে সিজেলের লেখা ‘টাইপিস্ট’কে প্রয়াত অভিনেতা-নাট্যকার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বাংলায় শুধু অনুবাদ করেননি, তিনি যেমনটি করে থাকেন বাংলায় অনুকৃতি করেছিলেন। এক অফিসের দুই সহকর্মী নব্য যোগ দেওয়া পল্ আর পুরনো কর্মী সিলভিয়া এখানে অনিরুদ্ধ হালদার এবং ইন্দ্রাণী দাশগুপ্ত। শুধু নামকরণেই সীমাবদ্ধ নয়, দু’জনের অতীত, বর্তমান, মানসিক গঠন, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব, অভিমান, রাগ, অনুরাগ — সবকিছুই অনুকৃতিকার সৌমিত্র একেবারেই নিজস্ব অভিজ্ঞতায় বাঙালিয়ানার ভরপুর করে সাজিয়েছেন। শুধু সাজিয়েছেন বলি কেন, চরিত্রদের নিজস্ব অনুভূতি, একাকীত্ব, শূন্যতা, নিজেদের চাওয়া, না পাওয়া, হতে চাওয়া, না হতে পারার চাপা মানসিক যন্ত্রণাকে একত্রিত করে সুন্দর পরিস্থিতি তৈরি করেছেন। নাটকের দৈর্ঘ্য মাত্র সোয়া ঘণ্টা। অথচ তার মধ্যেই দীর্ঘ সময়কে ধরতে হয়েছে। নির্দেশক পৌলমী বসু দু-তিনবার পোশাকের পরিবর্তন এবং রূপসজ্জারও ন্যূনতম বদল ঘটিয়ে সেই প্রবহমান সময়কে ধরেছেন মঞ্চে। আমরা সিনেমায় সময়ের পরিবর্তন দেখতে পাই, মঞ্চে তো সেভাবে সম্ভব নয়! তাই এমন প্রয়োগশৈলীর ব্যবহার। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদের রসগুণ ছিল এমনটাই। মেয়ে পৌলমী বাবার রচনার সেই ধর্ম ও গুণটিকে যথাযথ বজায় রেখেই ‘মুখোমুখি’ ব্যানারে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীর ঠিক আগের দিন অ্যাকাডেমি মঞ্চে ‘টাইপিস্ট’ পরিবেশন করলেন। দিশারী চক্রবর্তীর আবহ, বিলু দত্তর প্রায় নিরাভরণ মঞ্চ, মনোজ – মানসের আলো এই দুই অভিনেতার অভিনব যুগলবন্দিকে করে তুলেছিল আরও বাঙ্ময় ও উপভোগ্য। পৌলমীর কথায় ,”বাবার আদর্শ অনুসরণ করেই আমি লড়াই করে যাব। পিছিয়ে পড়ব না। থেমেও যাব না।”
0 comments