ভৌতিক ছোটগল্প : অয়েল পেইন্টিং

ভৌতিক ছোটগল্প : অয়েল পেইন্টিং

আজ সকাল সাত টা নাগাদ চেরাপুঞ্জি থেকে বাড়ি ফিরলাম।  ফ্লাইটে গুয়াহাটি হয়ে কলকাতায় এলাম। ভ্রমণের অভিজ্ঞতা টা খুব একটা সুখের হয় নি। পরশু রাতে একটা ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। চেরাপুঞ্জিটা মেঘালয় রাজ্যের অন্তর্গত পূর্ব খাসি পাহাড় জেলার একটা শহর। কমলা লেবু এখানে প্রচুর পাওয়া যায়। পাহাড়ের কোল বেয়ে  রাস্তা গুলো এক ফালি চাঁদের মতো এঁকে বেঁকে শহরটাকে  ঘিরে রেখেছে। সবুজে ঢাকা শহরটা  যেন একটা সতেজ প্রাণের জীবন্ত উদাহরণ। উচুঁ নীচু ঢেউ খেলানো পথে শহরটা  সাজানো।  এখন আগস্ট মাস। তুমুল বর্ষাকাল।বর্ষার সৌন্দর্য উপভোগ করবো বলেই গত চার দিন আগে চেরাপুঞ্জির উদ্দেশ্যে রওনা হই।
ওহ ভুলেই গেছি আপনাদেরকে আমার পরিচয় টা দিতে ! আমার নাম তীর্থ সুন্দর পাল। আমার নিবাস বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়ায়। আমি আজকাল একটা হাসপাতালে প্যাথলজিস্ট হিসাবে কাজ করি। গড়িয়ায় এক কামরার  ঘরে ভাড়া থাকি। অকৃতদার মানুষ। কিন্তু ঘুরতে খুব ভালো বাসি। তিনকুলে  কেউ নেই। সারাদিন মল মূত্র ঘেঁটে দেখতে কার আর ভালো লাগে? তাই মাঝে মধ্যেই ঘুরতে বেরিয়ে পড়ি।

ADVERTISEMENT
Tuhu Momo Video Teaser

গত রবিবার চেরাপুঞ্জিতে পৌঁছাই প্রায়  বিকেল ছয়টা নাগাদ। সেখানে সায়মিকা রিসোর্টে  থাকব  বলে ঘর বুকিং করেছিলাম অ্যাডভান্সে।
কিন্তু বন্ধু তপোব্রতর পরিচিত একজনের একটু পুরোনো বাংলো বাড়িতে উপস্থিত হই।

বাংলোয় পৌঁছতে না পৌঁছেই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি শুরু হয়। বাংলো  বাড়িটাতে নাকি কেউ থাকে না। আমার বন্ধুর পরিচিত সুহান  বিদেশে থাকেন। সে
ই সুহানই  নাকি এই বাংলোটা  কিনে ফেলে রেখে দিয়েছে। কাজেই বাংলো শুনশান  পরিত্যক্ত বাড়ির মতো নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে। বাংলো তে পৌঁছিয়ে করম দাস বলে একজন বয়স্ক  মানুষ এগিয়ে আসেন। সে নাকি বিহারী। কিন্তু বাংলা ভালো বোঝে এবং বলে। খাসি এবং গোরা ভাষাও নাকি বুঝতে পারে । বলতে পারে। আমি যেহেতু কলকাতা থেকে আসছি জানে। তাই অর্ভথ্যনাতে তেমন ত্রুটি রাখে নি। স্পষ্ট বাংলাতেই আমাকে জিজ্ঞাসা করলো,

– ” আসতে অসুবিধা হয় নি তো বাবু। রাস্তা টা এই দিকটায় অন্ধকার একটু।”
-“না তেমন কিছু অসুবিধা হয় নি।  তবে বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা পেয়ে  গেছি।”
বাইরে নিঝুম অন্ধকার। অন্ধকারের মধ্যে বৃষ্টির ধারা প্রবল পড়ছে। যেন ক্লান্তিহীন কোনো নারী অঝোরে কেঁদে চলেছে।
করম দাস বললো,
– ” এই মহলা বাড়িটা  তিন তলা বটে। তবে আপনাকে এই একতলায় ডানদিকের ঘরটায় থাকতে হবে। মূলত এই বাড়িটা সমতল অঞ্চলে  পাকাবাড়ি। বাড়িটার চারপাশে আশ্চর্য রকমের নীরবতা। মানুষের কলরব  হীন বৃষ্টি মুখর পরিবেশ এক অদ্ভুত ভাবের উদ্ভব ঘটায়। রাত আটটা  নাগাদ করম দাস রুটি মাংসের ঝোল এনে ঘরে রাখলো। বললো,
– ” নিন গরম গরম খেয়ে নিন। বৃষ্টি মনে হয় একটু ধরবে। রাতে আবার ঝড়বে। একটা কথা…”

” কী কথা বলুন..?” আমি বললাম।
– ” এই বাড়ির অন্য কোনো তলায় ওঠার আর দরকার নেই। পাশের ঘরেই আছি। হ্যারিকেন  জ্বলছে  দরজার পাশে। দরকার পড়লে ডাক দেবেন।” .. করম দাস বললো।
” কেন বলুন তো বাড়ির অন্যত্র যাওয়া যাবে না? এই বাড়ি টা কেমন নিস্তব্ধ! কেমন রহস্য জনক!” .. আমার এই কথা শুনে করম দাস কেমন অদ্ভুত এক ঠান্ডা দৃষ্টি দিয়ে ঘর থেকে চলে গেলো।    হালকা আলোয়  আমার ঘরটা  দেখা যাচ্ছে। ঘরে একটা খাট পাতা। একটা টেবিল আর চেয়ার। টেবিলে নোট প্যাড আর পেন। একটা জলভর্তি জগ। আমার লাগেজ ঘরের একপ্রান্তে  রাখা হয়েছে।

সেই রাতে রুটি , মাংস কষা  খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাতে বৃষ্টি কিছুটা ধরলেও  মধ্য রাতের পর বৃষ্টি বাড়লো। আমার অস্বস্তিতে ঘুম যেন হালকা হলো। বার বার মনের কোণে ঘুমের ঘোরে একটা  ওয়েল পেইন্টিং ছবি ভাসতে লাগলো।
বেশ ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো। আশ্চর্য রকম ভাবে ভোরে বৃষ্টি ধরলেও ট সকালে বৃষ্টি আবার শুরু হয় । পরদিন সকালে করম দাস পাউরুটি , ডিম টোস্ট, ফ্রুট জুস ব্রেকফাস্টে নিয়ে  এলো। আমি করম দাসকে জিজ্ঞাসা করলাম,
– ” আচ্ছা এই এত বড় বাড়িতে আপনি একা থাকেন? আর কেউ নেই! আপনার ভয় করে না? এই বাড়ির আসল মালিক কে?”
করম দাস একটা ঠান্ডা চাউনি দিলো। বললো,
– ” নাহ ! কোনো ভয় করে না। একাই থাকি। অন্য কেউ তেমন বেশী দিন এখানে থাকতে পারে না।  বাড়ি টা আসলে কৌশল সাহানি  নামে এক নামী বড় চিত্র শিল্পীর।  ওনার সময় থেকেই এই বাড়িতে আমার থাকা। মালিক মারা যাবার পর আমি একাই বাড়িটা  দেখাশোনা করি।”
– ” আচ্ছা এই বাড়িতে কোনো ওয়েল পেইন্টিং ছবি আছে?” আমি জিজ্ঞাসা করলাম।
করম দাস একটা ক্রুর  দৃষ্টিতে যেন আমায় ধ্বংস করতে চাইছে। তবু নিজে চুপ করে রইলো। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম,
– ” এই যে বললেন এই বাড়িতে কেউ থাকতে পারে না! কিন্তু কেন?”
করম দাস কোনো সদুত্তর না দিয়ে শুধু বললো,
-“চিত্র শিল্পী মানুষের বাড়ি। কাজেই ওয়েল পেইন্টিং ছবি কোনো না কোনো ঘরে থাকবেই। আরেকটা কথা ঘুরতে বেরোলে  তাড়াতাড়ি আসবেন। আর সন্ধ্যা করবেন না। অঞ্চল টা চেনেন  না তাই বললাম।” এই বলে পাউ রুটি ডিম টোস্ট, চা, ফ্রুট জুস টেবিলে রেখে করম দাস ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। আমি বুঝলাম করম দাসের নীরবতা  বেশ অর্থ বহ। আমি আমার টুরিস্ট ব্যাগে মেডিসিন , ছাতা, টর্চ, ছুরি , দড়ি ইত্যাদি গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

চলার পথে আমাকে সঙ্গ দেয় চারপাশের অসাধারণ সুন্দর সব পাহাড়। কখনও আমাকে চারপাশ থেকে ঢেকে দেয় মেঘ। প্রকৃতির মধ্যে নিজেকে মনে হবে বিশ্বভ্রমণে বেরিয়ে পড়া যাযাবর। কখনওবা পাহাড়ের ঢালে সরু রাস্তার আরেক পাশেই গভীর খাদ। এ এক ‘ভয়ঙ্কর সুন্দর’ দৃশ্য।
বৃষ্টি ও সকাল থেকে ঝির  ঝির করে  পড়ছে।

স্ট্যালাগ মাধই পাথরের শিবলিঙ্গ ,ডাবল ড্রেকার  রুট ব্রিজে সিঁড়ি বেঁয়ে ২,৫০০ ফুট উপরে উঠতে হয় আবার বিকালের মধ্যে নেমে যেতে হয়। পায়ে হেঁটে দেখা মেলে জঙ্গল, ঝর্ণা, নদী ও নদীর ওপরের এক সুন্দর লিভিং রুট ব্রিজের। কাজেই নিজের ভ্রমণ সংক্ষিপ্ত করে কেন জানি দ্রুত বাংলোতে ফিরে আসি।  আমার ভিতর থেকে কিছু একটা বার বার টানছে  একটা ওয়েল পেইন্টিং ছবিতে! বার বার ঝাপসা  হয়ে  চোখের সামনে এক সুন্দর নৃত্য রতা  মহিলার ছবি আসছে । আবার হারিয়ে যাচ্ছে!
সন্ধ্যার মধ্যেই বাংলো বাড়িতে নিজের ঘরে গরম  চা নিয়ে  বসলাম। করমদাস  চা বানায়  ভালো। রাতে কী খাবো জেনে করম দাস চলে গেলো রান্না ঘরে।

সারা বাড়িটা  বড় নিস্তব্ধ। যেন আমায় গিলে খেতে চায়। হঠাৎ যেন আমার মনে হতে লাগলো ঘরের বাতাসটা অস্বাভাবিক রকমের ঠান্ডা । যেন দম বন্ধ করা পরিবেশ তৈরী হয়েছে। যেন আলো আঁধারিতে কোনো এক সুন্দরী মহিলা ঘরের মধ্যে রয়েছে। অথচ তাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না। কোনো একটা হাত যেন বার বার নজরে এসে হারিয়ে যাচ্ছে। আমি চিৎকার করে উঠলাম,
– ” কে কে কে? কে এই ঘরে?”
কোনো কিছুর  সাড়া পাওয়া গেল না। করম দাস আমার চিৎকার শুনে ঘরে ছুটে আসে। আমি ঘামছি। করম দাসকে আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
-” এই বাড়িতে কে আছে? কোনো এক মহিলা এখানে থাকে কি? কার হাত দেখলাম ? একটা ওয়েল পেইন্টিং বার বার আমার চোখে আসে কেনো? আপনি সব জানেন । বলুন।”
করম দাস খুব গম্ভীর ভাবে বললো, – ” কেউ তো নেই এখানে?
আমি ছাড়া এখন কেউ থাকে না! রাতের খাবার আনছি। খেয়ে শুয়ে পড়ুন।” এই বলে করম দাস দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। করম দাসের ‘ এখন কেউ থাকে না ! ‘ কথাটা আমার মনে খচখচ করছিলো। রাতে তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পড়লাম। রাত তখন কটা হবে। রাত সাড়ে বারোটা  হবে। আমার ঘুম টা হঠাৎ ভেঙ্গে গেলো। কোনো এক অজানা শক্তির বলে আমি খাট  থেকে নেমে টর্চ  হাতে ঐ বাড়ির দোতলার  সিঁড়ি বেয়ে  উপরে হাঁটা লাগালাম। কিছু যেন আমায় বশ করেছে। আমি চলেছি  দোতলায়। দোতলায় সামনের ঘরটার  দরজাটা ভেজানো  রয়েছে। ঘরে আলো নেই। আমি ধাক্কা দিতেই খুলে গেলো। আমি টর্চ  জ্বেলে  ঘরে ঢুকলাম। বাইরে অবিশ্রান্ত বৃষ্টি এখনও চলছে।ঘরের বাতাস টা তখনকার মতো আবার অস্বাভাবিক ঠান্ডা আর দম বন্ধ করা মনে হতে লাগলো। মনে হলো ঘরে জিনিস পত্র তেমন কিছু নেই। টর্চের আলোয়  সামনের দেওয়ালে টাঙ্গানো একটা ওয়েল পেইন্টিং নজরে পড়লো। মনে হলো ওয়েল পেইন্টিং এ রয়েছে সুদর্শনা কোনো মহিলা ! যিনি নৃত্য রতা। আমার মনে হলো মহিলার চোখ গুলো যেন আমায় ইশারায় কাছে ডাকছে। আমি ওয়েল পেইন্টিংটার কাছে গেলাম। কি মনে হলো জানি না।ওয়েল পেইন্টিংটা নিজে হাতে ছুঁয়ে দেখতে গেলাম। তারপর এক অবর্ণনীয় ঘটনায় আমি কেঁপে উঠলাম। আমি স্পষ্ট দেখলাম একটা হাত ওয়েল পেইন্টিং টা থেকে বেরিয়ে আমার হাতটা  চেপে ধরেছে। আমি কিছুতেই নিজের হাত টা ছাড়াতে  পারছি না। হাত তো নয় যেন ঠান্ডা বরফ চাপা পড়েছে আমার হাতে । আর ফিসফিসিয়ে একটা মহিলা কন্ঠ ধ্বনি কোথা থেকে ভেসে আসছে ,
– ” আয় , আয় , আয়!”
আমি চিৎকার করে উঠলাম ,
– ” বাঁচাও  ! ছাড়ো আমার হাত ! “
আমার চিৎকারে করম দাস ছুটে আসে দোতলার  ঐ ঘরে। বলে ওঠে,
-”  আপনি এই ঘরে এতো রাতে এসেছেন কেনো?”
আমি কোনো উত্তর দিতে পারি নি। সে আমায় কোনো ক্রমে টেনে দোতলায় নামিয়ে আনতে যাবে এমন সময় হঠাৎ দোতলার  ঘরের দরজা বন্ধ হয়ে  গেলো। আমি অনুভব করলাম কোনো এক কঙ্কালের হাত পিছন দিক থেকে আমার গলা চেপে ধরেছে।
হাওয়ায় একটা মহিলা কন্ঠ ধ্বনি  ফিসফিস করে বার বার করে ঘুরছে,
-” আয়, আয় , আয়!”
করম দাস আমাকে বাঁচাবার চেষ্টা করে চলেছে। আমি ঘটনার আকস্মিকতায় জ্ঞান হারাই। পরের দিন খুব ভোরে আমার জ্ঞান ফিরে আসে। চোখ মেলে দেখি নিজে সেই একতলায় নিজের ঘরটাতে  বিছানায় শুয়ে আছি। সারা শরীরে অবশ  করা এক যন্ত্রণা। কালকের রাতের ঘটনা সব মনে পড়ে গেলো।নিজের ঘাড়ের কাছে হাত দিয়ে দেখলাম চাপ চাপ রক্ত! বুঝলাম গলার পিছনে ঘাড়ে কারুর দ্বারা আঘাত পেয়েছি। ঘরের দরজার কাছে করম দাসকে মেঝে বসে থাকতে দেখলাম । আমি ধড়পড়িয়ে বিছানায় উঠে বললাম,
– ” কে ছিলো ঐ ঘরে কাল? কেন বলেছিলেন এই বাড়ির অন্য কোথাও যাওয়া যাবে না? কালকে রাতের  ঘটনাটা আপনিও জানেন। সত্যিটা  বলুন । গোপন করবেন না।”
করম দাস এড়িয়ে যেতে বললো,
– ” ঘাড়ে যন্ত্রণা করছে! ব্যান্ডেজ  করতে হবে। চোট পেয়েছেন।”
আমি চিৎকার করে উঠলাম,
– ” সত্যি বলুন। এড়িয়ে যাবেন।”
করম দাস আমার চিৎকার শুনে ঘাবড়ে মাটিতে বসলো। তারপর যা বললো তা শুনে আমি হতবাক। বিস্মিত। ভীত।ত্রস্ত।
– ” এই বাড়ি টা এক মস্ত  বড় নামী চিত্র শিল্পী কৌশল সাহানির। তার সঙ্গে এক সুন্দরী মহিলার পরিচয় ছিলো। যার নাম ছিলো কঙ্কাবতী। যে মডেল হিসাবে কাজ করতো। তার সঙ্গে  চিত্র শিল্পী কৌশল সাহানির প্রেমের সম্পর্ক ছিলো বহুদিনের। কৌশল সাহানি  কঙ্কাবতীকে  খুবই ভালোবাসতো। চোখে হারাতো। নিজের বাড়িতেই কঙ্কাবতীকে  এনে রেখেছিলেন। অনেকটা রক্ষিতার  মতো। উনিই  কঙ্কাবতীর দোতালার  ঘরের ছবিটা নিজে হাতে আঁকেন।  কিন্তু পরবর্তী কোনো এক সময়ে কোনো এক অন্য ব্যবসায়ীর সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে কঙ্কাবতী। সেটা পরে আমার মালিক কৌশল সাহানি  জানতে পারেন। হাতেনাতে  ধরেও  ফেলেন। কৌশল সাহানি কিছু দিন পর  প্রতিশোধ বশত  ঐ ঘরেই কঙ্কাবতীকে গলায়  দড়িতে ফাঁস লাগিয়ে খুন করেন । যদিও হাতের গ্লাভস গুলো প্রমাণ স্বরূপ লোপাট  করেন। আমি সবটাই জানতাম। কিন্তু মালিকের নুন খেয়ে তার বিরুদ্ধে বেইমানি করতে পারি নি। কিছু কাল পর কৌশল সাহানি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে আশ্চর্য জনক ভাবে বেশ অল্প বয়সে  মারা যান।

তারপর সময় কেটে গেছে বহু বছর। আমার এখন প্রায়  আশি বছর বয়স। পরবর্তী কালে এই বাড়ি কৌশল সাহানির ভাইয়ের ছেলে হর্ষ সাহানি , সুহান  চৌধুরীর কাছে বিক্রি করেন। কেউ এই বাড়ি থেকে কোনো দিনই চলে যেতে বলে নি।সুহান  চৌধুরী ও এই একই ভাবে ঐ ওয়েল পেইন্টিং দ্বারা আকর্ষিত হন। ঐ ভাবে অদৃশ্য এক হাত ওকে চেপে ধরে। আমি ওনাকে উদ্ধার করি। এই ভাবে আরো দুজন পর্যটক ঐ ওয়েল পেইন্টিং এ হাত দিয়ে বিপদে পড়েছিলেন। আমি তাদের রক্ষা করি। আপনি ভালো মানুষ। আমি চাই নি আপনি বিপদে পড়ুন। তাই বারণ করেছিলাম বাড়ির সর্বত্র ঘুরতে না।”

করম দাস চুপ করলে পর আমার যেন সম্বিৎ ফিরে আসে। সাহস করে দোতলার  ঐ ঘরে যাই। ওয়েল পেইন্টিং করা কঙ্কাবতীর ছবিতে ঐ মোহময়ী চোখ দুটো দেখে আমি যেন বিহ্বলিত এবং বিবশ  বোধ করতে থাকি। দ্রুত নিজের ঘরে ফিরে লাগেজ  গুছিয়ে বাংলো বাড়ি ছেড়ে স্থানীয় এক হোটেলে থাকার জন্য বেরিয়ে পড়ি। বিদায় কালে করম দাস বাড়ির মূল ফটকে এসে এগিয়ে দিয়ে যায়। তখন প্রায় বিকেল হয়ে  যায়।

হঠাৎ কানের কাছে ভেসে এলো ফিসফিসে  গলায়, – “ফিরে আয়, ফিরে আয়!”

 

(সমাপ্ত)

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait