ওয়েবসিরিজ রিভিউ – পঞ্চায়েত

ওয়েবসিরিজ রিভিউ – পঞ্চায়েত

পঞ্চায়েত (অ্যামাজন প্রাইম)

(জিতেন্দ্র কুমার, রঘুবীর যাদব, নীনা গুপ্তা, চন্দন রায়, ফয়সল মালিক)

পরিচালক: দীপক কুমার মিশ্র 

4.5 / 5

 

রিস্থিতির চাপে আপনাকে মানিয়ে নিতে হচ্ছে, অথচ আপনি কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারছেন না বা চাইছেন না, অথচ না মানিয়ে নিয়েও উপায় নেই, এবং আপনি উপরমহলের চাপে পর্যুদস্ত, এবং আপনি নাচার কেননা ওই উপরমহলের নির্দেশ আপনাকে মানতেই হবে, অথচ মানলে আপনি জনরোষের শিকার হবেন, অথচ আপনাকে মাথা ঠান্ডা রেখে সবাইকে হাত করার চেষ্টা করতে হবে—–উফফ!! এই এত্তগুলো ‘অথচ’ আপনার জীবনে একসাথে কোনোদিন এসেছে? যদি এসে থাকে তাহলে আপনার মুখের অবস্থাটা কিরকম হতে পারে? সেই মুখটাকে বড্ড বেশি জীবন্ত করে তুলেছেন জিতেন্দ্র কুমার ওরফে অভিষেক ত্রিপাঠী!

ADVERTISEMENT
Swades Times Book
অভিষেক ত্রিপাঠীর ভূমিকায় জিতেন্দ্র কুমার

ক্যাম্পাস প্লেসমেন্ট এ সুবিধে করতে না পারা তরুণ ইঞ্জিনিয়র অভিষেক মাত্র কুড়ি হাজার টাকার মাসমাইনেতে উত্তরপ্রদেশের ফুলেরা গ্রাম পঞ্চায়েতের সচিব হিসাবে যোগদান করার প্রথম দিনেই বুঝতে পারেন যে তিনি এখানে বেশিদিন টিকতে পারবেন না। সহকর্মী হিসাবে পেলেন পঞ্চায়েত প্রধান রঘুবীর যাদব(ব্রিজভূষণ দুবে) কে যিনি তাঁর স্ত্রী নীনা গুপ্তা কে মারাত্মক ভয় করেন। তাঁর স্ত্রীই প্রকৃতপক্ষে প্রধানজি। আছেন উপপ্রধান প্রল্হাদ পান্ডে (ফয়সল মালিক) আছে নতুন বিয়ে করা এক যুবক যার নাম বিকাশ! বিকাশ(চন্দন রয়), আর আছে গ্রামের লোকগুলো! প্রত্যেকে ভীষণ সরল, কিন্তু স্বার্থে আঘাত লাগলে এদের কারো কারো কুটিল রূপটা মাঝেমধ্যেই বেড়িয়ে পরে। অভিষেক রাতের অন্ধকারে বসে ক্যাট এর প্রস্তুতি নেন, আর সারাদিনের কাজের খতিয়ান দেন শহরে লাখ টাকার মাইনেতে চাকরি করা বন্ধু প্রতীক কে। প্রতীক আর অভিষেক, দুজনেই নিজের জীবনে অতৃপ্ত! দুজনে দুজনকে বোঝাতে থাকেন অপরজন কতটা লাভবান, জীবনের দিক দিয়ে।

গ্রামের পঞ্চায়েতে সচিবের কাজটি সহজ নয়। সচিবকে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ সবই করতে হয়, গ্রামের হোমড়া চোমড়া নেতার মেয়ের বিয়েতে নিজের ঘরটি খয়রাতির জন্য ছেড়ে দিতে হয়। কাজও করতে হয় প্রচুর, কথাও শুনতে হয় মিঠেকড়া!  তাঁকে ‘ভূতা পের'(ভূতুড়ে গাছ) এর সমস্যার সমাধান করতে হয়, কেননা সরকারি খরচে পাওয়া গ্রামের তেরো নম্বর সোলার লাইট টি পঞ্চায়েত অফিসে লাগাতেই হবে, ভূতা পের কে আলোকিত করতে গেলে পঞ্চায়েত অফিস অন্ধকারে ডুবে থাকবে আজীবন!  তাই শহুরে বাবু অভিষেক গ্রামের লোকজনের অন্তর আলোকিত করার চেষ্টা করেন এবং সফলও হন!সরকারি স্লোগান লিখে গ্রামবাসীর রোষের মুখে পড়তে হয়, সেই স্লোগান মুছে বি.ডি.ও সাহেবের গাল খেতে হয়, আবার প্রধানের হাতে পায়ে পড়ে সেই স্লোগান পুনরায় লেখাতে হয়। প্রধান সচিবকে মাসিক দুধের বন্দোবস্ত করে দেন নিখরচায় কেননা তাঁর প্রচুর গাভী আছে! কিন্তু স্ত্রীর চাপে পরে সেই টাকা আবার চেয়ে নিতে বাধ্য হন সচিবের কাছ থেকে। কখনো সচিব শহরের বন্ধুদের উইকএন্ড পার্টি দেখে মন খারাপ করে থাকেন, তিনি জীবনে প্রথমবার মদ্য কিনে স্টাইল করে তা খেয়ে সোশাল মিডিয়ায় ছবি দিতে চান, কিন্তু পারেন না, কুড়ি হাজারি  গ্রাম সচিবের  বিবেকবোধ বাধা দেয়। সেদিন তিনি দোর বন্ধ না করে শুতে যান ফলস্বরূপ অফিসের কম্পিউটার টি চুরি হয়ে যায়। প্রধান রেগে যান, পুলিশ অভিষেক কেই চোর সন্দেহ করে। আর এসব সময়ে বিকাশ অভিজ্ঞ আত্মীয়ের মত তাঁকে সামলাতে থাকে!সচিব মনখারাপ করে বিকাশ কে বলেন তাঁর এই গ্রামে কেউ নেই, তিনি চলে যেতে পারলে বাঁচেন। এই কথা শুনে সেদিন রাতে প্রধান উপপ্রধান আর বিকাশ তিনজনে মিলে অভিষেককে  সারপ্রাইজ পার্টি দেয় বনের অন্ধকারে! এ এক আলাদা উপলব্ধি! শুধু তাই নয় প্রধান পুলিশ কে বলেন তিনি মানুষ চেনেন, অভিষেক কম্পিউটার চুরি করতে পারেন না। পরদিন দেখা যায় যে চোর টিভি ভেবে ভুল করে কম্পিউটার চুরি করেছিল, ভুল বুঝে সে পরদিন সেটি ফেরত দিয়ে যায়, সাথে ক্ষমা চেয়ে একটি চিঠি। এরকম অনেক ঘটনা ঘটতে থাকে যেগুলির মধ্যে দিয়ে গ্রাম্য জীবনের সরলতা কুটিলতা জটিলতা ধরা দিতে থাকে সহজবোধ্য আঙ্গিকে। কিন্তু এই সচিবের মন গ্রামের সাথে  কিভাবে ওতপ্রোতভাবে  জড়িয়ে যায় তা দেখতে গেলে ওয়েব সিরিজটি দেখতে হবে।

রঘুবীর যাদব ও নীনা গুপ্তা

অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই৷ জিতেন্দ্র কুমার আর রঘুবীর অনবদ্য! নীনা গুপ্তা মৌখিক গ্রামপ্রধান, একদম সাধারণ মহিলার ভূমিকায় অনন্য। তবে ছাপিয়ে গিয়েছেন চন্দন রয়, বিকাশের ভূমিকায়। বুদ্ধিদীপ্ত, কিন্তু সাদামাটা! সচিব, প্রধান এঁদের কড়া কথাতেও কিছু মনে না করা, ভূতের ভয়ে ভীতু মানুষটা কিন্তু নিজের ব্যক্তিত্ব ও মতামত স্পষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে জানে। তাঁর জন্য এই সিরিজটি আরো কয়েকবার দেখা যায়। আবহ সঙ্গীত যথাযথ! গ্রামের রাতের দিকের দৃশ্যগুলোয় আলোর বাড়াবাড়ি নেই,  যা সম্পূর্ণ সহায়ক হয়েছে বিশ্বাসযোগ্যতার ভিত্তিতে। গ্রামের মানুষগুলো কেউ কেউ নিরেট বোকা, চরিত্রায়ন যথাযথ! সিনেমাটোগ্রাফি তে রুক্ষ গ্রাম্য প্রকৃতি ধরা পরে! আর অভিষেক ত্রিপাঠীর মুখ বলে দেয় তিনি ফুলেরা গ্রামে কতটা অসুখী! চোখেমুখে অভিনয় লেগে আছে তাঁর! এই ভূমিকায় জিতেন্দ্র আর বিকাশের ভূমিকায় চন্দন লম্বা রেসের ঘোড়া!

জিতেন্দ্র কুমার ও চন্দন রায়

সিরিজ শেষে ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে দ্বিতীয় পর্ব খুব শিগগিরই আসবে হয়ত! 

প্রতীক্ষায় রইলাম ফুলেরা গ্রাম আর সেখানকার অধিবাসীদের সাথে আবার দেখা করার জন্য!

 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait