“বারশো ষাট আটই পৌষ মায়ের আবির্ভাব
মা এল রে দূর করিতে ত্রিতাপ শোকতাপ।
দুখীর ঘরে জন্ম নিল ভক্তজন তরাতে-
জয়রামবাটিতে” …
১৮৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ২২শে ডিসেম্বর (১২৬০ সালের ৮ই পৌষ) বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী (Jayrambati) গ্রামে কৃষ্ণাসপ্তমীর রাতে তাঁর জন্ম। মাতা শ্যামাসুন্দরী দেবী ও পিতা রামচন্দ্র মুখোপাধ্যায় প্রথম সন্তানের জন্মের আগে দেখেছিলেন লাল কাপড় পরা অতিসুন্দরী এক কন্যা তাদের কাছে আসছেন। দরিদ্র, সরল, ভক্ত দম্পতি আভাস পেয়েছিলেন কোনও দেবীর আগমন হতে চলেছে।
আর খাস কলকাতাতেই সেই দেবীর অর্থাৎ জগতের ‘মহত্তমা নারী, শ্রীরামকৃষ্ণদেবের দিব্য ‘বিশ্বপ্রেম ধারণের পাত্র’ (তাঁর নিজেরই লেখনিজাত শব্দ) শ্রীমা সারদা দেবীর সাক্ষাত পেলেন লোকমাতা নিবেদিতা। যিনি নিবেদিতার মতে জ্ঞানে, প্রেমে, কর্মে, পবিত্রতায়, সেবায়, ত্যাগে, আত্মজীবন ও সংসার জীবনের সমন্বয়ে এক অনন্য, অতুলনীয় চরিত্ররূপে – শঙ্করীপ্রসাদ বসুর মতে ‘ধ্রুবমন্দির’ রূপে তাঁর কাছে প্রতিভাত হয়েছেন। এই অমৃত জীবনধারায় স্নাত হয়েই তিনি ঘোষণা করেছেন দ্বিধাহীন চিত্তে শ্রীশ্রীমা’র সম্বন্ধে ‘জগতের মহত্তমা নারী’। এই অভাবনীয় সৌভাগ্যের অধিকারী তিনি এখানে এসেই যে হয়েছেন, তা স্বীকারে তাঁর কোনও দ্বিধা ছিল না।
তাই ১৮৯৮-এর ১৭ মার্চ তারিখটি মার্গারেটের গোটা জীবনের দিন গুলোর মধ্যে সেরা সেরা দিন। ওই দিনই সারদা মা’র সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল। মার্গারেট, সারা বুল এবং জোসেফিন যখন কলকাতায় এসে পৌঁছেছিলেন তখন সারদা মা কলকাতায় ছিলেন না। তিনি তখন ছিলেন তাঁর গ্রামের বাড়ি জয়রামবাটিতে। ১৭ মার্চের দিন কয়েক আগে সারদা মা কলকাতায় ফিরে আসার পরই স্বামীজী স্থির করেন তাঁর তিন বিদেশিনী শিষ্যাকে তিনি তাঁর গুরু-পত্নীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবেন। সেই মতোই ১৭ তারিখ সারা বুল, জোসেফিন ম্যাকলয়েড এবং মার্গারেটকে নিয়ে বাগবাজারে যান তিনি। ওই দিনটি আবার ছিল সেন্ট প্যাট্টিক্স ডে। মার্গারেট ওই দিন তাঁর ডাইরিতে লিখেছিলেন “day of days” (A particularly noteworthy day; the day on which a milestone or especially memorable event occurs.)। খস খস করে কথাটা লিখে ফেললেন তিনি।
প্রশ্ন জাগতে পারে ভগবান যিশুর জননী পবিত্রতমা মাতা মেরি কি তবে তাঁর কাছে শ্রীমা সারদাদেবীর তুলনায় নগণ্য ছিলেন? না নিশ্চয়ই নয়। তবে তিনি আদর্শ হিসাবে এক হলেও, তাঁকে শ্রীশ্রীমা’র মতো জীবন্তভাবে পাওয়া যায়নি। আর তাঁর জীবন ও কার্যাবলী সকলের জ্ঞাত নয়। শুধু ঈশ্বরজননীরূপেই তিনি খৃষ্টসমাজে পূজিতা। তাঁর কোনও ব্যক্তিগত বা সমাজকেন্দ্রিক ভূমিকার কথা জানা নেই, বা তাঁর কোনও ক্রিয়াকর্মেরও উল্লেখ নেই। তাই শ্রীশ্রীমা’র সঙ্গে বসবাস করে নিবেদিতা প্রত্যক্ষ করেছেন এক মহান দৈবী জীবনচর্যা যা একটি পরিবারকেন্দ্রিক হয়েও বিশ্বজীবনের সঙ্গে অনায়াসে মিলিত হয়েছে, দেখেছেন এক ব্যাবহারিক ও ঐশ্বরিক প্রজ্ঞার সুষ্ঠু মিলন, যা উচ্চতম ও দীনতমের মধ্যে সমীকরণে সফল।
প্রথম সাক্ষাতকারটি কেমন ছিল? লিজেল রেমঁ বিবরণ দিয়েছেন এভাবে, “সারদা দেবীর সাথে তিন বিদেশিনী দেখা করতে আসার পরে পাড়ায় একটা সাড়া পড়ে গেল। তিনিও একটু বিচলিত হলেন বইকি। গাড়ি থেকে নামতেই পাড়ার ছেলের দল তিনজনকে ঘিরে ফেলল। সারদা দেবীর বাড়ির দরজা আধ খোলা। ভিতরে একটা গুনগুনানি ও চাপা হাসি শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। দরজা ঠেলতেই খুলে গেল। একঝলক চড়া রোদের তেজ অন্ধকার বাড়িটায় ছড়িয়ে পড়ল। সব চুপচাপ। দালানের মেঝেয় জল-ভরা বড়বড় জালা বসানো, এটা নিবেদিতার নজরে পড়ল। অনাবৃত কাঁধ আর দীর্ঘ পিঠ ছড়ানো কালো কেশের আধার চোখে পড়ে। খালি-পা দুখানি আলতায় টুকটুক করছে। বিদেশিনীরা নত হয়ে প্রণাম জানাতেই উনি কপালে হাত ঠেকিয়ে প্রতি নমস্কার করলেন। ঘরের মেঝেয় খসখস শব্দ তুলে আর একটি মেয়ে সন্তর্পণে পা কাটিয়ে এগিয়ে এলো। সারদা দেবীর সামনে তিনখানা কাজ করা ছোট ছোট মাদুর সযত্নে পেতে ইশারায় এঁদের বসতে বলে মেয়েটি সরে গেল। ঘরের নিস্তব্ধতা যেন ভারি হয়ে উঠেছে। কেমন একটা অস্বস্তি লাগছে। চারিদিক থেকে সবাই তার দিকেই চেয়ে আছে বুঝতে পেরে নিবেদিতার আর চোখ তুলে তাকাতে সাহস হয় না, কান ঝাঁ ঝাঁ করছে, বুক ঢিপঢিপ করছে দ্বিগুণ। ওরই মধ্যে শুনতে পেলেন কে যেন হাই তুলল, নোনা ধরা দেওয়ালে একটা টিকটিকি গুটিগুটি পায়ে চলছে। হঠাৎ নিবেদিতা শোনেন মেয়েরা কি যেন ফিসফিস করছে। সবার চোখে একটা কৌতূহল। ব্যাপার কি? এবার এক মহিলা এঁদের তিনজনের সামনে পিতলের রেকাবিতে কাটা ফল, মিষ্টি আর সেই সঙ্গে চা ধরে দিচ্ছেন। সারদা দেবীর জন্য চিনামাটির পাত্রে ওই একই জলযোগ আনা হয়েছিল। সবাইকে অবাক করে দিয়ে পরম নিষ্ঠাবতী শ্রীশ্রীমা তাঁর সাগরপারের এই তিনটি মেয়ের সঙ্গে একসাথে বসে খেতে লাগলেন” ।
এই দিনটার ঘটনাপ্রবাহ বিবেকানন্দকে আহ্লাদিত করেছিল। তিনি রামকৃষ্ণানন্দ কে চিঠি লিখতে গিয়ে লিখলেন, “ভাবতে পারো, মা, ইউরোপীয় আমেরিকান মহিলাদের সঙ্গে একসঙ্গে খেয়েছেন! কি অদ্ভুত ব্যাপার তাই না?”
‘তাঁর মুখে ও কিসের আলো’? মৌন ভেঙে নিবেদিতা হঠাৎ উঁচু গলায় বলে উঠলেন. ‘কি যে অপরূপ দেখতে’! পঁয়তাল্লিশ বছরের প্রৌঢ়ার মুখ কি পবিত্র আর নির্মল, সৌম্য প্রসন্নতার ভাব। আত্মার মণিদ্যুতি যেন ঠিকরে পড়ছে তাঁর মুখে। নিবেদিতা স্তব্ধ হয়ে চেয়ে রইলেন।
‘সারদা দেবী হাসলেন। ইংরেজি-জানা একটি মেয়ের মারফৎ দিব্যি আলাপ জমে উঠল। তাঁর এই খৃষ্টান মেয়েদের সব খবর শ্রীমা জানতে চান। ‘তোমরা বাড়িতে কিভাবে ঠাকুর পূজো করো? কি ধরণের প্রার্থনা করো তাঁর কাছে? তোমাদের বাপ-মা এখনও বেঁচে আছেন?’ অন্তঃপুর বাসিনী হলেও বাইরের জগতের খবর রাখতেন সারদা দেবী, ওতে তাঁর আনন্দ ছিল। কত বিচিত্র রূপেই না এ বিশ্বে দেবতার প্রকাশ। কথাবার্তায় এমন একটা অন্তরঙ্গতা নিবিড় হয়ে উঠল যে নিবেদিতা ভাবতে লাগলেন, এমন বিমল আনন্দের ভাগ নিতে স্বামীজী আসছেন না কেন’? উনি এদিক ওদিক তাকাতে লাগলেন, মনে ধারণা স্বামীজী হয়ত দরজার বাইরে কোথাও আছেন। শেষে তাঁর কথা জিজ্ঞাসাই করে বসলেন। নিবেদিতার প্রশ্নে মেয়েরা যেন একটু আমোদ পেয়েছেন মনে হল। সেই সঙ্গে এতক্ষণে একটানা আলাপেও একটা ছেদ পড়ল। এর মানে কি? কিছু বুঝতে না পেরে নিবেদিতা উঠি উঠি করছেন। ইচ্ছেটা নিজেই স্বামীজীকে ডেকে আনবেন। এমন সময়ে হঠাৎ দ্রুত পায়ে দালান পার করে কে যেন সিঁড়ি দিয়ে উঠে আসছেন মনে হল। সবারই চোখ দরজার দিকে। কিন্তু স্বামীজী ঘরে ঢোকবার আগেই নিবেদিতা তাঁর অসঙ্গত প্রত্যাশার ভুল বুঝতে পেরেছেন। এর মধ্যেই খসখস শব্দে সবার শাড়ির আঁচল উঠে এসেছে মাথায়, মুখ ঢাকা পড়েছে। প্রত্যেকটি মেয়েকে মনে হচ্ছে অবয়ব অবোধ্য নিঃসাড় শুভ্র একটা বস্তুপিণ্ড।
নিবেদিতার চোখের সামনেই স্বামীজী এগিয়ে এসে মাটিতে মাথা ঠেকিয়ে দণ্ডবৎ প্রণাম করলেন সারদা দেবীকে। শ্রীমা মাথায় হাত দিয়ে আশীর্বাদ না করা অবধি ভক্তিভরে স্থির হয়ে মাটিতে মাথা রেখে পড়ে রইলেন। তারপর একটি কথাও না বলে উঠে দাঁড়ালেন। ঘর থেকে যাবার আগে মা’র কাছ থেকে বিদায় নিতে নির্দেশ দিয়ে গেলেন। তিনি চলে যেতেই সারদা দেবী মাথার ঘোমটা খুলে এঁদের আশীর্বাদ করলেন। তারপর কিছুক্ষণ নিবেদিতার দিকে চেয়ে থেকে বললেন, ‘তুমি আসায় ভারি খুশি হয়েছি মা’। ‘মায়ের এই সম্ভাষণটুকু নিয়ে পাড়ায় জোর আলোচনা হতে লাগল। বাগবাজারের মেয়েরা গঙ্গাস্নানে গিয়ে পরস্পর বলাবলি করত, জান, শ্রীমা আমাদের মতই ওই মেয়েটিকেও ‘মা’ বলে ডেকেছেন।
মার্গারেট তাঁর বান্ধবীকে এই চিঠিটা যখন লিখেছেন, তখন সারদা দেবীকে আরও কয়েকবার বেশ কাছ থেকেই তিনি দেখেছেন। সারদা দেবীর সঙ্গে একটু ঘনিষ্ঠতাও তৈরি হয়েছে ততদিনে। ‘দ্য মাষ্টার অ্যাজ আই স হিম’ গ্রন্থে সারদা দেবী সম্পর্কে নিবেদিতা লিখেছেন,
“আমার সব সময় মনে হয়েছে তিনি যেন ভারতীয় নারীর আদর্শ সম্বন্ধে শ্রী রামকৃষ্ণের শেষ বাণী। কিন্তু তিনি কি একটি পুরাতন আদর্শের শেষ প্রতিনিধি, অথবা কোনও নতুন আদর্শের অগ্রদূত? তাঁর মধ্যে দেখা যায়, অতি সাধারণ নারীরও অনায়াসলভ্য জ্ঞান ও মাধুর্য, তথাপি আমার কাছে তাঁর শিষ্টাচার আভিজাত্য ও মহৎ উদার হৃদয় তাঁর দেবীত্বের মতই বিস্ময়কর মনে হয়েছে। কোনও প্রশ্ন যত নতুন বা জটিল হোক না কেন উদার এবং সহৃদয় মীমাংসা করে দিতে তাঁকে ইতস্তত করতে দেখিনি। তাঁর সমগ্র জীবন একটানা নীরব প্রার্থনার মতো। তাঁর সকল অভিজ্ঞতার মূলে আছে বিধাতার মঙ্গলময় বিধানে বিশ্বাস। তথাপি তিনি সবরকমের পারিপার্শ্বিক অবস্থার ঊর্ধ্বে বিরাজ করেছেন। তাঁর পরিবারের কেউ যদি দুর্বুদ্ধিবশতঃ তাঁকে পীড়ন করে তবে তাঁর মধ্যে এক অদ্ভুত শান্ত ও প্রগাঢ়ভাব প্রকাশ পায়। তাঁর বুদ্ধির অতীত কোনও নতুন সামাজিক ব্যবস্থা থেকে উদ্ভূত জটিল চক্রে আবর্তিত অথবা উৎপীড়িত হয়ে কেউ যদি তাঁর কাছে আসে তিনি তৎক্ষণাৎ অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে হৃদয়ঙ্গম করে প্রশ্নকর্তাকে বিপদ থেকে উদ্ধারের পথ নির্দেশ করেন। যদি কোনও কারণে কঠোর হবার প্রয়োজন হয়, অর্থহীন ভাব প্রবণতার দ্বারা তিনি কখনও বিচলিত হয়ে ইতস্তত: করবেন না। কোনও ব্রহ্মচারীকে মাধুকরী করে এত বছর কাটাতে হবে বলে আদেশ দিলে, তাকে এক ঘণ্টার মধ্যে সে স্থান ত্যাগ করতে হবে। কোনও ব্যক্তি তাঁর সামনে শ্লীলতা ও মর্যাদার সীমা অতিক্রম করলে আর কখনো তাঁকে মুখ দেখাতে পারবে না। এই ধরণের অপরাধ করেছিলেন এমন এক ব্যক্তি শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছিলেন, ‘দেখতে পাচ্ছ না, তুমি ওর নারীত্বকে আঘাত করেছ? এমন করা মহা অনর্থকর’। তবু তাঁর এক শিষ্যা সঙ্গীতে তাঁর সহজাত ক্ষমতা সম্বন্ধে যা বলেন, বাস্তবিকই তাঁর প্রকৃতি সেইরকম ‘সঙ্গীতে ভরপুর’ কোমলতা ও কৌতুকে পূর্ণ।
কয়েক বছর আগে একদিন ইস্টারের দিন বিকেলবেলা তিনি যখন আমাদের বাড়ি আসেন, তখন আমি শ্রীশ্রীমা’র মধ্যে এই শক্তির পরিচয় পাই। এর আগে যখনই তাঁর কাছে গিয়েছি, জীবনে তিনি যে আদর্শ স্থাপন করেছেন, তা আয়ত্ব করবার চেষ্টায় একান্তভাবে তন্ময় থাকতাম। বিপরীত অবস্থায় তাঁকে লক্ষ্য করবার কথা ভাবিনি। যাই হোক, ঐদিন শ্রীশ্রীমা ও তাঁর সঙ্গিনীগণ আমাদের পুরো বাড়িটা ঘুরে দেখবার পরে ঠাকুরঘরে গিয়ে বসে খ্রিষ্টানদের কথা শোনবার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। তারপর আমাদের ছোট ফরাসি অর্গান দিয়ে ইস্টার দিনের গানবাজনা হল। খৃষ্টের পুনরুত্থান সম্পর্কিত স্তোত্রগুলো বিদেশি এবং শ্রীশ্রীমা’র সম্পূর্ণ অপরিজ্ঞাত, তবুও তাঁদের সুক্ষ্ন মর্মগ্রহণ ও গভীর সহানুভূতি প্রকাশের মধ্যে আমরা সর্বপ্রথম ধর্মজগতে সারদাদেবীর অসাধারণ উন্নতিলাভের এক অতীব সুন্দর হৃদয়গ্রাহী চিত্র দেখতে পেলাম। শ্রীরামকৃষ্ণের স্পর্শলাভে ধন্য শ্রীশ্রীমা’র স্ত্রীভক্তগণের মধ্যেও কিছু পরিমাণে এই শক্তির পরিচয় পাওয়া যায়। কিন্ত তাঁর শক্তির মধ্যে যে দৃঢ়তা ও নিশ্চয়তা আছে তা কেবল উচ্চদরের সুগভীর পাণ্ডিত্যেই দেখা যায়।
আর এক সন্ধ্যায় তাঁর এই বৈশিষ্ট্যের পরিচয় আমরা পেয়েছিলাম। অল্প কয়েকজন অন্তরঙ্গ স্ত্রী-ভক্ত পরিবৃত হয়ে তিনি বসেছিলেন, এমন সময় আমাকে ও আমার গুরুভগিনীকে ইউরোপের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পর্কে বর্ণনা করতে বলেন। যথেষ্ট হাসি আর কৌতুকের সঙ্গে তাঁর নির্দেশমতো আমরা একবার পুরোহিতের, পরক্ষণে বরকন্যার ভূমিকায় অভিনয় করে দেখালাম। কিন্তু বিয়ের শপথবাক্য শুনে শ্রীমার মনে যে ভাবের উদয় হল তার জন্য আমরা কেউ প্রস্তুত ছিলাম না।
‘সম্পদে-বিপদে, ঐশ্বর্যে-দারিদ্রে, রোগে-স্বাস্থ্যে যেন আমাদের মৃত্যু বিচ্ছিন্ন না করে’ – এই কথাগুলি শুনেই উপস্থিত সকলেই আনন্দ প্রকাশ করে উঠলেন। কিন্তু শ্রীশ্রীমা’র মতো আর কেউই ঐ কথাগুলির যথার্থ মর্ম গ্রহণ করতে পারেননি। বারবার ওই কথাগুলি তিনি আমাকে দিয়ে আবৃত্তি করালেন এবং বললেন, ‘আহা কি অপূর্ব ধর্মভাবের কথা। কি ন্যায়পূর্ণ কথা’।
নিবেদিতার সঙ্গে মা সারদার এমন মধুর সম্পর্ক ছিল যা বিবেকানন্দের অন্যান্য বিদেশি শিষ্য-শিষ্যাদের সঙ্গে গড়ে ওঠে নি। আক্ষরিক অর্থে মা-মেয়ের সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল দুজনার মধ্যে। সারদা মা আদর করে নিবেদিতাকে সম্বোধন করতেন ‘খুকি’। নিবেদিতাও বরাবর তাঁর গুরুপত্নীকে মাতৃজ্ঞানেই সেবা করে এসেছেন। সারদা মা’র প্রথম ফটোগ্রাফটি নিবেদিতাই উদ্যোগ নিয়ে তোলেন। শ্রী মা ছিলেন লজ্জাশীলা, মায়ের প্রায় সব কটি ছবিতেই তিনি অবগুণ্ঠিতা, স্বামী চেতনানন্দ তাঁর "যা দেবী সা সারদা" বইতে লিখছেন, “বরদা মহারাজ (স্বামী ঈশানানন্দ) আমাকে খুব স্নেহ করতেন, তিনি আমার অনুরোধে শ্রী শ্রী মায়ের যে ছবি পূজিত হয়, তার original copy অদ্বৈত আশ্রমকে দেন । তিনি বলেছিলেন, “এই ছবি নিবেদিতার কাছে ছিল, তা এখন আমার কাছে আছে”।
স্বামী চেতনানন্দ তাঁর স্মৃতি থেকে লিখছেন " বরদা মহারাজ বলেছিলেন " মায়ের নত দৃষ্টি ছবিই প্রথম ফটো । লজ্জাশীলা মা হাত ঢেকে ছবি তুলতে বসেন। তিনি ভাবস্থা ছিলেন , ফটোগ্রাফার ঐ অবস্থার ছবি তোলেন, তারপর তিনি দ্বিতীয় exposure এর জন্য ক্যামেরা তে দ্বিতীয় নেগেটিভ সেট করেন এবং অপেক্ষা করতে থাকেন। একটু পর মা ভাবেন , ছবি তোলা হয়ে গেছে। তিনি গোলাপ-মাকে জিজ্ঞাসা করেন, "গোলাপ হয়েছে? "তখন মিসেস বুল মাকে আর একটু বসতে অনুরোধ করেন। কারণ তিনি মায়ের front view এবং যাতে পা দেখা যায় সেভাবে ছবি চান বলায় মা রাজি হন। ঐকালে নিবেদিতা মায়ের কাপড় ও চুল যথাযথ বিন্যাস করে দেন। মায়ের এই ছবি সর্বত্র পূজিত হয়, তারপর নিবেদিতার আগ্রহে মা ও নিবেদিতার মুখোমুখি বসা একটি ফটো তোলা হয়।"
এবার প্রশ্ন হতে পারে, নিবেদিতা কিভাবে মাকে সাজালেন, "যা দেবী সা সারদা" বইতে পাই, স্বামী গম্ভীরানন্দ লিখছেন , “ভগিনী নিবেদিতা তাঁহাকে বসাইয়া চুল ও আঁচল প্রভৃতি বিন্যাস করিয়া দেন” আবার, প্রবাজিকা মুক্তিপ্রানা মাতাজি লিখছেন "মিসেস বুল, শ্রী মাকে বসাইয়া মাথার কাপড়, চুল প্রভৃতি ঠিক করিয়া দেন", স্বামী চেতনানন্দ নিজে মনে করছেন যে, "নিবেদিতা মায়ের সঙ্গে খুব free ছিলেন, তাই তিনিই মাকে সাজানোর ব্যাপারে active part নিয়েছেন এবং মিসেস বুল সাহায্য করেছেন।
সম্ভবত নিবেদিতা মায়ের কাপড়ের border টা ভিতরের জড়ানো কাপড়ের সঙ্গে একটি safetypin আটকে দিয়েছেন এবং সামনের কাপড়ের ভাঁজগুলিকে পরতে পরতে সুন্দর ভাবে বিন্যাস করেছেন , এই ভাঁজগুলি মায়ের front view ছবিতে পরিষ্কার দেখা যায় । তারপর ডানদিকের কণ্ঠ হাড়ের ওপর দিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হয় মায়ের ঘন কৃষ্ণ দীর্ঘ কেশরাশি - যা ঐ safetypin কে ঢেকে দিয়েছে । এভাবে পাশ্চাত্য নারীদের শিল্পিসুলভ মন আমাদের দান করেছে এক অপূর্ব সাজানো করুণাময়ী দেবী মূর্তি-- যা এখন সারা বিশ্বে অগণিত মানুষের দ্বারা পূজিত হচ্ছে।
শুধু তাই নয়, নিবেদিতার স্ত্রী-শিক্ষা প্রচারের কাজে সারদা মা’র ছিল নিরন্তর উৎসাহ। এই কাজে নিবেদিতাকে বরাবরই তিনি সমর্থন জুগিয়ে গেছেন। অবশেষে এলো সেই মহালগ্ন। ১৮৯৮ সালের ১৩ নভেম্বর। রবিবার। সে দিন কালীপুজো। ১৬ নং বাড়িতে এলেন স্বয়ং শ্রীমা। এলেন বিবেকানন্দ, ব্রহ্মানন্দ ও সারদানন্দ এবং আরও কেউ কেউ। প্রথাগত পূজাপাঠ সমাপন করে শ্রীমা সারদা মৃদুকণ্ঠে উচ্চারণ করলেন আশীর্বাণী, “আমি প্রার্থনা করি এই বিদ্যালয়ের ওপর জগন্মাতার আশীর্বাদ বর্ষিত হোক। এখান থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত মেয়েরা আদর্শ কন্যা হয়ে উঠুক।” নিবেদিতার মেয়েদের স্কুলটি তিনিই উদ্বোধন করেছিলেন। এই স্কুলে বেশ কয়েকবার পদার্পণও করেছিলেন সারদা মা। ‘খুকির স্কুলে’ মেয়েদের পড়তে পাঠানোর উপদেশও দিতেন ভক্তদের।
মা ও মেয়ের ভালবাসার অটুট বন্ধনে নিবেদিতাকে শ্রীশ্রীমা একবার চিঠি লিখেছিলেন। মূল চিঠিটি পাওয়া যায়নি। মার চিঠি ইংরেজিতে অনুবাদ করে স্বামী সারদানন্দ পাঠিয়েছিলেন (১১ এপ্রিল, ১৯০০)। চিঠির সম্বোধনে ছিল, ‘স্নেহের খুকি নিবেদিতা, শেষে ছিল ‘তোমার মাতাঠাকুরাণী’। মা-যে চিঠিটি লিখেছিলেন তাতে একটি কথা উল্লেখ করার মতো, -
“বাংলা ভাষা যেন ভুলিয়া যাইও না, নতুবা তুমি যখন ফিরিয়া আসিবে, তোমার কথা আমি বুঝিতে পারিব না”।
মা’র চিঠি পেয়ে নিবেদিতা, ছোট্ট মেয়ের মত খুশি হয়েছিলেন। দশ বছর পরে নিবেদিতারও সারদা-মা’র প্রতি প্রগাঢ় ভক্তি শ্রদ্ধার প্রমাণ পাওয়া যায় একটি চিঠিতে। ১৯১০ সালের ১১ ডিসেম্বর কেম্ব্রিজ থেকে নিবেদিতা এই চিঠি লিখেছিলেন সারদা মা’কে। চিঠিতে সম্বোধন করেছিলেন ‘আদরিণী মাগো’। চিঠির শেষে সই করেছিলেন ‘তোমার চিরকালের বোকা খুকি’।
“আদরিণী মাগো
সবার জন্য প্রার্থনা করব বলে আজ খুব ভোরে আমি গির্জায় গিয়েছিলাম। সবাই সেখানে যীশুজননী মেরীর কথা চিন্তা করছে, আমার হঠাৎ মনে পড়ে গেল তোমার কথা। তোমার সেই মনোরম মুখখানি, সেই স্নেহভরা চাহনি, পরনে সাদা শাড়ি, তোমার হাতের বালা-সবই যেন তখন বাস্তব হয়ে ফুটে উঠল। আমার মনে হল তোমার এই ভাব-সত্তাই যেন বেচারি এস সারার রোগকক্ষে নিয়ে আসবে শান্তি ও আশীর্বাদ। আমি আরও কি ভাবছিলাম জানো মা? ভাবছিলাম শ্রীরামকৃষ্ণের সন্ধ্যারতির সময় তোমার ঘরে বসে আমি যে ধ্যান করবার চেষ্টা করেছিলাম, সেটা আমার কি নির্বুদ্ধিতাই হয়েছিল। আমি কেন বুঝিনি যে, তোমার বাঞ্ছিত চরণতলে ছোট্ট একটি শিশুর মত বসে থাকতে পারাটাই যে যথেষ্ট। মাগো, ভালবাসায় পরিপূর্ণ তুমি। আর তাতে নেই আমাদের জগতের ভালবাসার মত উত্তেজনা ও উগ্রতা। তোমার ভালবাসা হচ্ছে একটি সুগন্ধি শান্তি, যা প্রত্যেককে দেয় কল্পনাস্পর্শ ও যেন বিলাস-বিচিত্র প্রকট স্বর্ণদীপ্তি। কয়েক মাস আগের সেই রবিবারটা কি আশিসই না বয়ে এনেছিল। গঙ্গাস্নানে যাবার ঠিক আগে আমি তোমার কাছে ছুটে গিয়েছিলাম, আবার স্নান করে ফিরে এসেই মূহুর্তের জন্য দৌড়ে তোমার পাশে গেলাম। তোমার ঘরখানির স্বাগত পরিবেশে, তুমি সেদিন আমায় যে আশীর্বাদ করলে, তা আমায় দিয়েছিল এক অদ্ভুত মুক্তির অনুভূতি। প্রেমময়ী মা, চমৎকার একটি স্তোত্র বা প্রার্থনা যদি তোমার উদ্দেশে লিখে পাঠাতে পারতাম! কিন্তু তাতেও মনে হয়, বড় বেশি শব্দ করা হবে। সেটা শোনাবে কোলাহলের মতো। সত্যিই তুমি ঈশ্বরের আশ্চর্যতম সৃষ্টি। শ্রীরামকৃষ্ণের বিশ্ব-প্রেম সুধা ধারণের পাত্র। এই সঙ্গহীন দিনে তুমিই রয়েছ তাঁর সন্তানের কাছে তাঁর প্রতীক; আর আমাদের উচিত তোমার কাছে অত্যন্ত শুদ্ধ শান্ত হয়ে থাকা-অবশ্য, কখনও একটু মজা করবার সময় ছাড়া। বাস্তবিকই ভগবানের যা কিছু বিস্ময়কর সৃষ্টি সবই হচ্ছে অতি শান্ত। ধীর পদক্ষেপে অজ্ঞাতে তারা প্রবেশ করে আমাদের জীবনে যেমন বাতাস, সূর্যের আলো, যেমন বাগানের সৌন্দর্য সুবাস, গঙ্গার স্নিগ্ধতা। এইসব শান্ত নীরব জিনিসই তোমার তুলনা।
বেচারি এস সারার জন্য তোমার শান্তির আঁচলখানি পাঠিয়ে দিও। রাগ-দ্বেষের ঊর্ধ্বে যে গহন প্রশান্তি, সময় সময় তোমার চিন্তা সেখানেই সমাধিত হয় না কি? সেই প্রশান্তি কি পদ্মপাতায় শিশিরবিন্দুর মত ভগবতসত্তায় স্পন্দমান স্নিগ্ধ আশীর্বাদ নয়, পৃথিবীর সংস্পর্শে যা কখনও মলিন হয় না?
বড় সোহাগের মা আমার,
তোমার চিরদিনের বোকা খুকি
নিবেদিতা
মা’ও নিবেদিতার চিঠি পেয়ে খুশিতে ভরে গিয়ে বলেছিলেন, ‘আহা! কি মধুর প্রাণ’। নিবেদিতা অনেক চেষ্টা করে বাংলা শিখেছিলেন। কিছু কিছু বলতে পারতেন খুব আড়ষ্ট বাংলায়। নিবেদিতা তাঁর বাংলা লেখা সম্পর্কে মিসেস বুলকে একটি চিঠিতে লিখেছিলেন, ‘আমার বাংলা একেবারেই আকাট। তবে যাতে বোধগম্য হতে পারি তার পক্ষে সাহায্য পাচ্ছি। জাহাজে খোকা (জগদীশচন্দ্র বসু) আমাকে শিক্ষা দিয়ে গেছে – এবং মাতাদেবী অত্যন্ত খুশি’।
শ্রীমা ও ভগিনী নিবেদিতার কথাবার্তায় যদি ভাষার বাধা না থাকত তাহলে দুজনেই খুব খুশি হতেন, কথাবার্তায় সুবিধা হত তাতে কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু মা ও মেয়ের মধ্যে মনের ভাষা, চোখের ভাষার যে মিল ছিল, মুখের ভাবে – ইঙ্গিতে, আচরণে যে যোগাযোগ ছিল সেখানে মুখের ভাষার খুব বড় একটা ভূমিকা ছিল না। দুজনেই ভাষা বিদ্যাগত সীমান্ত প্রাচীর (Linguis-tic Barrier) অতিক্রম করেছিলেন।
মা’র বোকা খুকি যেভাবে মা-কে বুঝেছিল, তেমন ভাবে খুব কম মানুষই বুঝেছিল। তাঁর অবিচ্ছেদ্য স্নেহের বন্ধনে ধরা পড়েছিলেন সারা বুল, জোসেফিন ম্যাকলাউড, ভগিনী ক্রিশ্চিয়ানা ক্রিস্টিন ও লরা এফ. গ্লেন (দেবমাতা)। মিস্ ম্যাকলাউডকে মা আদর করে বলতেন ‘জয়া’। শ্রীমা নিবেদিতাকে বলেছিলেন ধ্যানের সময় তিনি সারাকে তার বামে ও জয়াকে তাঁর সামনে সারাক্ষণ দেখেছেন। দেবমাতা চলে যাওয়ার পর একটি চিঠিতে নিবেদিতা তাঁকে জানান, -
“মা প্রায়ই তোমার কথা বলে থাকেন। প্রথম রাত্রে তোমার শূন্য স্থানটির দিকে গভীর ব্যথার সঙ্গে দেখলেন” ।
সারা বুলের গুরুতর অসুস্থতার সংবাদে স্নেহময়ী মা গভীর উদ্বিগ্ন হয়ে বারবার তাঁর খোঁজ নিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অধীর হয়ে তাঁর স্নেহের কন্যা সারাকে একটি চিঠি লেখেন। চিঠিটি মায়ের হয়ে লিখে দিয়েছিলেন নিবেদিতা। ওই ইংরেজি চিঠির শেষে মা বাংলায় মস্ত বড় আকারে ‘মা’ শব্দটি লিখে দিয়েছিলেন। অন্তিম যাত্রার পূর্বে ‘শ্রীমা’র ‘মা’ সাক্ষরিত ওই চিঠি ছিল সারার পরম প্রাপ্তি।
একবার নিবেদিতা আনন্দ সহকারে ভোগ রান্না করে ঠাকুরকে নিবেদন করলেন, সেই ভোগ মাকেও দিলেন। মহানন্দে মা সেই প্রসাদ গ্রহণ করলেন। এই নিয়ে রক্ষণশীল সংকীর্ণমনা মেয়ে মহলে নিবেদিতা ম্লেচ্ছ মেয়ে বলে চাঞ্চল্য পড়ে যায়। মা’র ওই কাজের খুব নিন্দা সমালোচনা হয়। মা ওই সব কথায় কোনও কান না দিয়ে, উপেক্ষা করলেন। তিনি সোজাসুজি স্পষ্ট কথায় বললেন, “… নিবেদিতা আমার মেয়ে। ঠাকুরকে ভোগ রেঁধে নিবেদন করার অধিকার তাঁর আছে। তাঁর দেওয়া প্রসাদ পরমানন্দে, কোনও বাঁধা না রেখে আমি নেব; যদি কারও আপত্তি থাকে সে নিজেকে নিয়েই থাক”।….
একবার খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতা (সম্ভবত ১৯০৫ এর মার্চ মাসে)। ডাক্তারের ধারণা টাইফাসের সঙ্গে ব্রেন-ফিভার। প্রায় একমাস যাবৎ জ্বর – মাঝে মাঝে চেতনা হারিয়ে ফেলছেন। ভগিনী ক্রিস্টিন উদ্বিগ্ন চিত্তে তাঁর পরিচর্যা করেন তীব্র অর্থ কষ্টের মধ্যে। একদিন শ্রীমা সারদা দেবী এসে নিবেদিতার শয্যায় বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। মায়ের স্পর্শ সুখে যেন অনির্বচনীয় শান্তি, জ্বরের ঘোরের মধ্যেও নিবেদিতার মনে হয়, “I never saw a face so full of Love”।
কিন্তু ভারতের গ্রীষ্মপ্রধান আবহাওয়ায় অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন নিবেদিতা। ১৯১১ সালে হাওয়া বদলের জন্য জগদীশচন্দ্র বসু ও তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দার্জিলিঙে বেড়াতে গিয়ে ১৩ অক্টোবর সেখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন নিবেদিতা। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪৪ বছর।
মা জীবনে অনেক বড় শোক পেয়েছিলেন। একাধিক প্রিয় সন্তানকে হারিয়েছিলেন। প্রথমে বিচলিত হয়ে, কান্নায় ভেঙে পড়লেও, শোক সহ্য করার তাঁর নিজস্ব এক শক্তি ছিল। নিবেদিতা ছিলেন তাঁর প্রিয়তম কন্যা, আদরের খুকি। তাঁর অকালমৃত্যুর পর তিনি বলেছিলেন, ‘তাঁর জন্যে আজ কত লোক কাঁদছে। ‘যে হয় সুপ্রাণী, তাঁর জন্য কাঁদে মহাপ্রাণী (অন্তরাত্মা)’। শ্রীমা’র অন্তরাত্মার কান্না কখনও থামেনি।
ঋণ: শতরূপে সারদা: স্বামী লোকেশ্বরানন্দ। The Master as I Saw Him: ভগিনী নিবেদিতা। ভগিনী নিবেদিতা: প্রব্রাজিকা ভাস্করপ্রাণা।
স্বদেশ টাইমস এখন টেলিগ্রামেও। সাবস্ক্রাইব করতে এখানে ক্লিক করুন।
Enter your email address to reset your password.
The very name 'SWADES' denotes the philosophical essence and ideological standpoint of our vision. We envisage serving our 'Swades' by providing news, special stories and literary works of the new generation writers which would cater to the interest of the Nation.
Swades Times © 2020 , All rights Reserved
0 comments