শ্রী শ্রী ঠাকুর রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের 'ডাক্তার', প্রসিদ্ধ চিকিৎসক ডক্টর মহেন্দ্রলাল সরকার আজকের দিনে ধরাধামে জন্মগ্রহণ করেন (২ নভেম্বর ১৮৩৩ - ২৩ ফেব্রুয়ারী ১৯০৪)। তিনি 'ইন্ডিয়ান এসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অফ সায়েন্স' নামক এক সংস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন, বিজ্ঞানচর্চাই ছিল যার মুখ্য উদ্দেশ্য। হাওড়া জেলার পাইকপাড়া নামক গ্রামে তাঁর জন্ম। হিন্দু কলেজের ছাত্র ছিলেন, কিন্তু সেখান থেকে তিনি ডাক্তারি শাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনার জন্য কোলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। তিনি ছিলেন কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম. ডি. হিসাবে ডিগ্রি অর্জন করিয়েদের মধ্যে যুগ্ম দ্বিতীয়, আরেকজনের নাম ডক্টর জগবন্ধু বসু।
আশৈশব নাস্তিক, ডাক্তার সরকার প্রথম জীবনে এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দিয়ে কর্মজীবন শুরু করেন। ঈশ্বরের অস্তিত্বকে তিনি সুদৃঢ় যুক্তির দ্বারা খণ্ডন করতেন। কিন্তু তাঁর সব যুক্তি ওলোটপালোট হয়ে গেলো ভগবান শ্রী রামকৃষ্ণের সান্নিধ্যে এসে। শ্রীরামকৃষ্ণদেব তখন শ্যামপুকুর বাটিতে চিকিৎসাধীন, গলায় গলরোগ, কবিরাজ বলে গেছেন তা রোহিনীরোগ, ইংরেজিতে যাকে বলে ক্যান্সার। নামি দামি এলোপ্যাথিক চিকিৎসক, কবিরাজ কেউ বাকি নেই, সবাই জবাব দিয়ে গেছেন। এমতাবস্থায় ডাক পড়লো ডাক্তার সরকারের। ডাক্তার তখন এলোপ্যাথ ছেড়ে হোমিওপ্যাথ চিকিৎসা ধরেছেন, চারিদিকে তাঁর ভীষণ নামডাক। প্রথমে তিনি রামকৃষ্ণদেব কে গ্রাহ্যের মধ্যেই আনেন নি, ভেবেছিলেন একজন সাধারণ পুরোহিত। ঠাকুরের কাছে প্রথম জানলেন যে ঈশ্বরকে দেখা যায়। প্রথমদিন একটাকা ফিস নিয়েছিলেন, এরপর যতদিন ঠাকুরের চিকিৎসা করেছেন একটা কানাকড়িও নেন নি। বরং শিষ্যদের নানাভাবে সাহায্য করে গেছেন। ঠাকুরের যখন ভাবসমাধি হতো, এরকম একদিন ঠাকুরের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখেছিলেন ঠাকুরের শরীর স্পন্দনহীন, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় ঠাকুর তখন 'মৃত'। কিন্তু কিছুক্ষন পরে দেখলেন ঠাকুর তাঁর বহুচর্চিত ভাবসমাধি থেকে নেমে এসে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলছেন, সেইদিন ডাক্তারের বিশ্বাস হলো যে ঠাকুর সত্যিই একজন বিশেষ কেউ।
রামকৃষ্ণদেব কে ডাক্তার 'ওহে পরমহংস' বলে ডাকতেন, 'তুমি' করে কথা বলতেন। একটু বড় ছিলেন ঠাকুরের থেকে, তাই বন্ধুর মত মিশতেন। ক্রমে এমন হলো যে ঘন্টার পর ঘন্টা ঠাকুরের কাছে এসে বসে আছেন, ডাক্তারি মাথায় উঠলো। বলতেন, ''এই পরমহংসের জন্য ডাক্তারি লাটে উঠলো, তা উঠুক, তুমি কিন্তু শুধু আমার সাথেই কথা বোলো হে পরমহংস, অন্য কারো সাথে নয়, বুঝলে?" এ সাবধানবানীর অর্থ, ঠাকুরের তখন কথা বলা বারণ, বললে গলার ব্যাথা বাড়তো।
ঠাকুরের দেহত্যাগের দিন শেষবারের মত এসেছিলেন কাশিপুরের বাড়িতে, ঠাকুরের শেষযাত্রার ছবি তুলে রাখার জন্য শিষ্যদের টাকা দিয়ে যান। সেই যে গেলেন, আর আসেন নি ঠাকুরের শিষ্যদের কাছে।
এই হলেন ঠাকুরের 'ডাক্তার' মহেন্দ্রলাল সরকার। যাঁকে নাস্তিক থেকে ঈশ্বরবিশ্বাসী করে তুলেছিলেন ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণদেব। ডাক্তারের পুন্য আবির্ভাব দিনে তাঁকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই।
ADVERTISEMENT
0 comments