বঙ্গ রাজনীতির স্বার্থপর চরিত্রের করুণ চেহারা ‘তখন কুয়াশা ছিল’

বঙ্গ রাজনীতির স্বার্থপর চরিত্রের করুণ চেহারা ‘তখন কুয়াশা ছিল’

বিনোদন ডেস্ক: শৈবালের সিনেমায় দর্শক প্রায় প্রতিটি ফ্রেমে, নেতা-মস্তানদের সংলাপে, গ্রামের অদ্ভূত পরিবেশে আজকের সময়টাকে উপলব্ধি করবেন যা আজকের বাংলা ছবিতে বিরল। এবার সেই দৃশ্যই ফুটে উঠেছে শৈবাল মিত্রের ছবিতে। ‘তখন কুয়াশা ছিল’ সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ উপন্যাসটি লিখেছিলেন সাম্প্রতিক বঙ্গ রাজনীতির ঘোলাজলে স্বার্থপর নেতাদের মাছ ধরার সত্যি ঘটনা নিয়ে। পরিচালক শৈবাল মিত্র সেই কাহিনি নিয়ে বাংলায় একই নামে ছায়াছবি করেছেন। ‘তখন কুয়াশা ছিল’  নিশ্চয়ই একটা দুঃসাহসী প্রয়াস। ছবির প্রথম অংশ দেখতে দেখতে মনে হয় এমন চওড়া বুকের পাটা এই শহরে তাহলে এখনও আছে! যিনি কোনও ভনিতার আশ্রয় না নিয়ে সরাসরি রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন নিয়ে এমন বুক চিতিয়ে কথা বলতে পারেন। গণ ফ্রন্ট এবং বাংলা বাঁচাও, এই দুই পার্টি যে কোন দলের প্রতীক সেটা বুঝে নিতে দর্শকের বিন্দুমাত্র অসুবিধে হবে না।

ADVERTISEMENT

গণ ফ্রন্টের সমর্থক প্রবীণ মাস্টারমশাই এবং বেকার শিক্ষিত তরুণ পুটু কিঞ্চিৎ যেন বিভ্রান্ত। ঠিক এমন পরিস্থিতিতে গলাকাটা শচীন খুন করে প্রতিপক্ষের এক কর্মীকে। পুটু সেটা মানতে পারে না। নিজের অক্ষমতায় জর্জরিত এবং বিবেকের তাড়নায় সে শচীনকেই খুন করে বসে। গণ ফ্রণ্টের নেতা বাঁচিয়ে দেয় পুটুকে। তিন মাস পর জেল থেকে বেরিয়ে পুটু নিজেই নতুন এক ‘আতঙ্ক’ হয়ে ওঠে গ্রমের মানুষের কাছে। রাজনীতির বদল ঘটে, কিন্তু দুর্বৃত্তায়ন বদলায় না। এমন ইঙ্গিতেই ছবির সমাপ্তি। মূল কাহিনির মধ্যে আজকের জীবনের প্রতিফলন দেখা যায়। পরিচালক শৈবাল কিন্তু ছবির কাঠামোয় আরো কিছু সিনেমাটিক এলিমেন্ট রেখেছেন, যা অনেক দর্শকের কাছে কিছু প্রশ্ন তুলবে। মাষ্টারমশাই এর মেয়ে মৌয়ের সঙ্গে পুটুর নীরব প্রেমের ইঙ্গিতের সঙ্গে শচীনের সম্পর্ক রাখাটা কি জরুরি ছিল? শচীনের সন্তান গর্ভে নিয়েই মৌ পুটুকে বিয়ে করতে রাজি হয়। কিন্তু এই মৌ আবার পুটুর মৃত্যুর পর বিধবার সাজ পরে পুটুকে প্রত্যাখ্যান করেছে। এ কেমনভাবে সম্ভব? গল্পের এই জটিলতার সঙ্গেই আবার ফিল্মি স্টাইলে আন্তর্জাতিকতা  (হিটলারের ছবি, যুদ্ধের ছবি, বেলা চাও গানের ব্যবহার) আনতে চাওয়া বড্ড আরোপিত লাগে। তা দর্শকদের বিভান্তির কারণ হতে পারে। 

এই ছবির আর একটা বড় গুণ আবহ, যা করেছেন তেজেন্দ্র মজুমদার। কোথাও নাটকীয় বা সোচ্চার নয়, অথচ পরিস্থিতির সঙ্গে অতীব মানানসই। ছবির শেষ পর্বে “আমি যে তোর আলোর ছেলে…” গানটির ব্যবহারই পর্যাপ্ত, ‘বেলা চাও…’ গানের সুর না থাকলেও অসুবিধে হত না। অভিনয়ে পুটুর ভূমিকায় একেবারে অন্য এক শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে  দর্শক পাবে। নিজের সব ম্যানারিজম সরিয়ে তিনি পুটু হয়ে ওঠায় কোনও ত্রুটি রাখেননি। প্রবীণ মাস্টারের চরিত্র  সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়  ছাড়া আর কেইবা থাকতে পারতেন! মৌয়ের চরিত্রে বাসবদত্তার তেমন অভিনয় দেখানোর সুযোগ ছিল না। যেটুক পেয়েছেন, মন্দ করেননি।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait