অ্যামাজন প্রাইম ভিডিও
অভিনয়ে : অভিষেক বচ্চন (অবিনাশ সাবারওয়াল), নিত্যা মেনন (আভা), অমিত সাদ (কবির সাওন্ত), হৃশিকেশ জোশি ( ইন্সপেক্টর প্রকাশ), এবং আরো অনেকে!
নির্দেশক: ময়ঙ্ক শর্মা
ব্রিদ সিজনের দ্বিতীয় পর্বের ট্রেলার দেখার পর থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলাম! দুটো কারণে! প্রথমত, প্রথম সিজনে আর. মাধবন প্রত্যাশার পারদ টা অবিশ্বাস্য রকম বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত, অভিষেক বচ্চন, তাও ব্রিদ এ! সন্তানের জন্য বাবা মা কতদূর যেতে পারেন, এমনকি নৃশংস অপরাধও করতে পিছপা হন না, ব্রিদ এর উদ্দেশ্য সেটা দেখানো! যেটাতে প্রথম সিজন এ মাধবন ভীষণরকম সফল! সন্তানের অঙ্গ প্রতিস্থাপন এর জন্য একের পর এক অপরাধ করে চলেন এক বাবা, সন্তানকে বাঁচাবার আকুতি নিয়ে! কিন্তু দ্বিতীয় সিজন এ মানুষের মনস্তাত্বিক গঠন নিয়ে কথা বলা হয়েছে! এক মানুষের মধ্যে দ্বৈত সত্বা, একজন সাধারণ মানুষ, যিনি খুব সফলও নিজের পেশায়, একজন ভাল স্বামী এবং বাবা! কিন্তু তাঁর অতীতটা বা শৈশব টা খুব একটা ভাল করে কাটেনি! অনাথ এক শিশু, যার মা ছিলেন প্রধান ভালবাসার মানুষ, তিনি মারা যাবার পর ভালবাসার আকুতি নিয়ে বড় হওয়া এক শিশু যাকে কেউ বুঝত না, বরং দোষারোপ করত বা বিরক্ত করত, সেই শিশু যার নাম অবিনাশ, বড় হওয়ার পথে তাকে আগলে রেখেছিলেন বোর্ডিং স্কুলের প্রধান শিক্ষক! তিনিই আবিষ্কার করেন অবিনাশ এর মধ্যেকার এক অপরাধপ্রবণ সত্বা কে, যে অবিনাশ কে নিয়ন্ত্রণ করে, যে অবিনাশকে চেনে অথচ অবিনাশ তাকে চেনে না! সেই অপরাধী সত্বা কে শিক্ষক মশাই পরম যত্নে আগলে রেখেছিলেন! তাঁর মৃত্যুর পর সেই সত্বা স্বাধীন হয়ে যায়!
ADVERTISEMENT
স্বাধীন হয়ে সে একের পর এক অপরাধ করতে থাকে অবিনাশ আর আভা আর তাদের বছর ছয়েকের মেয়ে সিয়া কে ঢাল করে। সে কাহিনীও জমজমাট। আর আগের সিজনের মতো ইন্সপেক্টরদ্বয় কবীর সাওন্ত আর প্রকাশ কাম্বলের উপস্থিতিতে ঘটনাপ্রবাহ এগিয়ে চলে নাটকীয় থেকে নাটকীয়তর গতিতে! সে কাহিনী এখানে বলে দিলে দেখতে বসে মজাটা নষ্ট হবে!
বরং আসা যাক সমালোচনায়! ব্রিদ দ্বিতীয় সিজনের পজিটিভ দিকগুলি হল, অভিষেক, নিত্যা, অমিত ও হৃশিকেশের অসাধারণ অভিনয়! অভিষেক বচ্চন সাইকায়াট্রিষ্ট এর ভূমিকায় ও অমিত ক্রাইম ব্রাঞ্চ অফিসার এর ভূমিকায় এবং বাদবাকি অভিনেতারা নিজ নিজ ভূমিকায় অনবদ্য! আবহ সঙ্গীত গা ছমছমে পরিবেশ সৃষ্টি করে! প্রত্যেকের অভিব্যক্তি সময় স্থান কাল পাত্র অনুযায়ী যথাযথ! অবিনাশ এর অতীতটা বেশ ভালভাবে দেখানো হয়েছে এবং শিশু মনস্তত্ব কিরকম হওয়া উচিত এবং তাদের সাথে কিরকম ব্যাবহার করা উচিত সে ব্যাপারে স্পষ্ট আলোকপাত করা হয়েছে! শিশু অবিনাশ এর ভূমিকায় যে ছেলেটি অভিনয় করেছে তার মুখখানি সারল্য মাখা! ক্রাইম দৃশ্যগুলিতে একজন আনাড়ি এবং কাঁচা অপরাধীর অবসাদ ভালভাবে ধরা পড়েছে! চিত্রনাট্য নিখুঁত না হলেও টানটান! স্বজনপোষণ যে সবক্ষেত্রেই আছে, ইন্সপেক্টর জেবার ভূমিকায় শ্রদ্ধা কল তা দারুণ ফুটিয়ে তুলেছেন!
এবার আসি নেগেটিভ দিকগুলির সমালোচনায়! অভিষেক বচ্চন তাঁর স্প্লিট 'জে' র ভূমিকায় অত্যন্ত সফল। কিন্তু জে' র মুখোশ টা একটু দেরিতে উন্মোচিত হলে দর্শকের আগ্রহ আরো বাড়ত! জে' র বান্ধবী শার্লি একটু রহস্যাবৃত থেকে গেলেন! কবীর এর চরিত্রটি এমনিই খুব তুখোড়! তাঁর সাথে প্রত্যেক সিজনে একজন বান্ধবীকে না জুড়লেও চলবে! শুধু একজন নায়িকাকে জুড়ে দিয়ে আজগুবি গল্প ফেঁদে দিয়ে লাভ হয়নি এবারে কোনো! সেই নায়িকা কেন কবীরের জীবনে এলেন আর কেনই বা চলে গেলেন, উত্তর পাওয়া গেল না! হৃশিকেশ ও বা কেন দিল্লি এসেই এক বান্ধবীর সাথে উড়তে লাগলেন, সে মশলাও গন্ধ ছড়াতে ব্যর্থ! আর প্রতিবারের মতই, সব ধাঁধাঁর উত্তর সবার জানা! সমাপতন কি এতটাই সহজ? মনে প্রশ্ন জাগে! জে এগিয়ে গেছেন মৌখিক অভিব্যক্তির দিক থেকে, সেখানে অবিনাশ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যর্থ! ঠান্ডা মাথার খুনি মনে হয় না অবিনাশ কে একেবারেই! জে কে মনে হয় !
পরিশেষে একটা সূক্ষ ইঙ্গিত আছে পরবর্তী সিজনে অবিনাশ আর জে র ফেরত আসার! কিন্তু "ব্রিদ ইনটু দ্য শ্যাডোজ" দেখতে দেখতে আগের সিজনের মাধবন কে আপনি মিস করবেনই করবেন, এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না!
ছবি সৌজন্য-গুগুল
0 comments