হাতরাস এর ঘটনার প্রতিবাদ জানানোর ভাষা নেই। কোন বিশেষণে একে বিশেষিত করবো জানা নেই। শিউরে ওঠা ছাড়া কোনো কাজও নেই। শুধু ভয় আছে একরাশ, ঘৃণা আছে একবুক।
বিশেষজ্ঞগিরি থাক। আচ্ছা বলুন তো দলিত কে, বা কারা? সমাজের পিছিয়ে পরা বর্গ? শিক্ষার আলো না পৌঁছনো শ্রেণী? অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ না করতে পারা মুখ? উচ্চশ্রেণীর পাড়া দিয়ে যেতে গেলে দুশো বার ভাবা একটি জাতি? সমাজের নোংরা পরিষ্কার করা লোকজন? যাদের ছুঁয়ে ফেললে জাত যায় তারা? নাকি আরো কিছু আছে?
আসলে দলিত আমরা সবাই! দলিত, অর্থাৎ যাদের পায়ে দলা যায়। কোনো অন্যায় দেখে যারা গলা তুললে ওদের বলা যায় 'চুপ করে থাকো, নাহলেই সর্বনাশ'। রোগা শরীরের ক্লাস নাইন এর হট প্যান্ট পরা মেয়েকে বলা যায়, 'ওহ, অমুক বাবুর মেয়ে? ওটা তো একটা নোংরা মেয়ে, এই বয়স থেকেই নেমে পড়েছে....'। ঘরের বৌ কে যা ইচ্ছে বলা যায়। 'অফিস থেকে রাত করে ফেরে, রোজ নিত্যনতুন চুড়িদার। ভাবে কেউ যেন জানে না কোথা থেকে জোটায়।' অথবা, 'রোজ বিকেলে ছাদে কেনো ওঠে জানি না ভেবেছো....?'
ADVERTISEMENT
![Tuhu Momo Video Teaser](https://swadestimes.com/uploads/_3219_1647281592_6794_poster buy.jpg)
মাথা উঁচু করে যাদের এই সমাজ থাকতে দেয় না, তাদের বলে দলিত। যারা শিক্ষাগত যোগ্যতায় আশেপাশের লোকজনদের চ্যালেঞ্জ করতে পারে, তাদের বলে দলিত। যাদের কাজে পান থেকে চুন খসলে একবাড়ি লোকের খাপ পঞ্চায়েতে উচিত অনুচিত শেখানো যায়, বাড়ির শিক্ষা নিয়ে কথা বলা যায় তাদের বলে দলিত। যাদের সহযোগিতায় কেউ এগিয়ে আসলে তার ও ভয় থাকে একঘরে হবার, তাদের বলে দলিত। যাদের জিভের ধার কে অপবাদ দিয়ে ঢাকার চেষ্টা হয়, তাদের বলে দলিত। মাথা বেশি উঁচু করলে অপমানের পর অপমান করে, যন্ত্রনা দিয়ে মাথাটা ধারালো অস্ত্র বা মানসিক অত্যাচার করে কেটে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, তাদের বলে দলিত। যন্ত্রনা বা রক্তক্ষরণের কোনো সহভাগী যারা পায় না, তারা দলিত। যাদের নিরুপায় দেখে হাসাহাসি করা যায়, তারা দলিত। যারা সাক্ষী পায় না, তারাই দলিত।
আমি আপনি নারী পুরুষ অনেকে দলিত। মেয়ে হয়ে গয়নার বদলে বই কিনেছেন কখনো? আপনি মহাদলিত। পুরুষ হয়ে পরিবারের বিরুদ্ধে গিয়ে স্ত্রীর পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা কখনো করেছেন? আপনি মশাই মহা মহা দলিত। আপনাকে পায়ের তলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া যায়।
উচ্চবর্ণ আর দলিত, সব আমাদের মনে। মনে রাখবেন, পরম পূজ্য গুরু মহারাজ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব রানী রাসমণির মন্দিরে পুজো করতেন। স্বামী বিবেকানন্দ প্রথম যে মেয়েটিকে কুমারী হিসাবে পুজো করেছিলেন, সে ভিন্ন জাতের ছিল। বিদ্যাসাগর মশাই প্রথম একটি বিধবার বিবাহ দিয়েছিলেন নিজের পুত্রের সাথে, সে মেয়ে অব্রাহ্মণ ছিল। স্মরণ করুন রাজা রামমোহন এর কথা, চিতা থেকে কোনো বালবিধবা কে বাঁচানোর সময় তিনি জাতপাত দেখতেন না।
আসুন, পুরুষ আর নপুংসক এর মধ্যে বিভেদ টা দেখার চেষ্টা করি আমরা সবাই। রাতের অন্ধকারে জঘন্য কাজ যারা করে, তারা পুরুষ তো নয়ই, জন্তুও নয়, মানুষ ও নয়। যেদিন আমরা নারী পুরুষ, দলিত ব্রাহ্মণ না দেখে শুধু মানুষ দেখবো, সেদিনই আমরা 'মান' আর 'হুঁশ' এ ফেরত আসবো।
ততক্ষনের জন্য মনীষা বাল্মীকি, তোমার জন্য তোমার দেশেরই এক দলিতের পক্ষ থেকে একরাশ শুভকামনা। ন্যায় তুমি পাবেই, আশা। ঠাকুর বলেছেন, তোমরা 'হরির জন'। মনে রেখো, সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের বিচার কিন্তু কারো কুক্ষিগত নয়।
Image Courtesy: The Economics Times
0 comments