মায়ের কথা

মায়ের কথা

শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ লীলাপ্রসঙ্গকার শ্রীমৎ স্বামী সারদানন্দজী মহারাজ কে কিছু জ্ঞানী সন্ন্যাসী একবার অনুরোধ করেছিলেন, “আপনি লীলাপ্রসঙ্গ লিখে জগতের মহা উপকার করেছেন। দয়া করে মায়ের সম্পর্কেও কিছু লিখুন।” এর উত্তরে সারদানন্দজী শুধু একটু হেসেছিলেন এবং তাঁর জবাব ছিল —
“তোর রঙ্গ দেখে রঙ্গময়ী অবাক হয়েছি,
হাসিব কি কাঁদিব তাই বসে ভাবিতেছি।
এতকাল রইলাম কাছে বেড়াইলাম পাছে পাছে
চিনিতে না পেরে এখন হার মেনেছি।”

বাস্তবিকই তাই। তিনি যদি কৃপা করে নিজের স্বরূপ আমাদের দেখিয়ে না দেন তাহলে তাঁকে চেনার কোনো উপায়ই নেই। কোনো কোনো ভাগ্যবান কখনো কখনো তাঁকে বুঝতে পেরেছেন। যেমন স্বামী অভেদানন্দজী। তাই তো তিনি লিখলেন “প্রকৃতিং পরমাং অভয়াং বরদাং ” নামক স্তোত্র’টি। স্বামী প্রেমানন্দজী বলছেন, “মা কে আর কে বুঝেছে ? ঠাকুরের তবু বিদ্যার ঐশ্বর্য ছিল। কিন্তু মা তাঁর মহাশক্তির দ্বারা সেই ঐশ্বর্য পর্যন্ত লুপ্ত করে রাখতেন।” এবার সবথেকে গুরুতর কথাটি বললেন স্বামী বিবেকানন্দ। বললেন, “মা কে এখন কেউ চেনে নি, কালে কালে বুঝবে মা কে! তিনি হলেন জ্যান্ত দুর্গা!” স্বামী ব্রহ্মানন্দজী বললেন, “মাকে চেনা বড় শক্ত। ঠাকুর না চিনিয়ে দিলে আমরাই কি তাঁকে চিনতে পারতাম?”

ADVERTISEMENT

আরও পড়ুন – বিজ্ঞান বনাম ভগবান : এই প্রভেদ কার সৃষ্টি

এহেন মা কে আমাদের মত অবোধ সন্তানদের চেনানোর জন্য ঠাকুরেরই শরণাপন্ন হতে হয়। বৃহদারন্যক উপনিষদ এ মৈত্রেয়ী বলছেন , “য়েনাহং নাম্রিতা স্যান কিমহং তেন কুর্যাম (যার দ্বারা আমি অমৃত লাভ করতে পারব না তা দিয়ে কি হবে)?” এই অমৃত মানে জ্ঞান অমৃত।

সারদাদেবীকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করলেন ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস দেব

আজ ফলহারিণী কালীপুজো। ঠাকুর আমাদের জ্ঞানচক্ষু উন্মীলিত করার জন্য দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন এক এইরকমই ফলহারিণী কালীপুজোর দিন মাতৃজ্ঞানে মাকে দেবীর আসনে বসিয়ে পুজো করলেন। নিজে হাতে তাঁর পুজো করে ভক্তদের উদ্যেশ্যে বললেন “মন্দিরের মা ভবতারিণী আর তোদের মা অভেদ।” তিনি সেদিন বিশ্বমাতৃত্বের আসনে মাকে বসিয়ে দিলেন। কেননা তিনি জানতেন যে তাঁর শরীর বেশিদিন থাকবে না। মাকে দায়িত্ব নিতে হবে আমাদের মত আর্ত নিপীড়িত জনেদের। মায়ের জীবন পর্যালোচনা করলে আমরা দেখতে পাব জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবাইকে তিনি আশ্রয় দান করছেন। ভেদাভেদ একেবারে উঠিয়ে দিচ্ছেন। বলছেন “আমার শরৎ যেমন তেমন এই আমজাদ ও আমার ছেলে।” সন্তানদের এঁটো তুলছেন, আবার তাদের দীক্ষা দিয়ে তাদের হয়ে জপটাও করে দিচ্ছেন। এককথায় তাদের ইহকাল ও পরকালের সব ভার নিজে নিয়ে নিচ্ছেন। প্রকৃত মা তিনি। বলছেন, “আমি পাতানো মা নয়, কথার কথা মা নয়, সত্য জননী।” নিজের স্বরূপ চেনানোর জন্য এই একটি উক্তিই যথেষ্ঠ। এই বিশ্বমাতৃকা কে চেনার জন্য বেশি কিছু লাগে না, শুধু চাই অকৃত্রিম ভালবাসা। কারন ঈশ্বর ভয় বা ভক্তির বশ নন, তিনি ভালবাসার বশ। চিরকালই। তাই তো তিনি কখনো বৃন্দাবনের রাখাল সেজে ননী চুরি করে খান তো কখনো মন্দিরের পূজারী হয়ে এসে তামাক খাবার জন্য আঁকুপাকু করেন। আবার কখনো মা হয়ে এসে কোল পেতে দেন।

তাঁর সম্পর্কে অজ্ঞ আমি আর কি লিখব ? শুধু আজকের এই পুণ্যদিনে তাঁর পাদপদ্মে সশ্রদ্ধ প্রণতি। “তব কৃপা হি কেবলম”!!

 

0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 31st Aug, 20 12:39 pm

প্রণাম মা।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait