তন্ত্রমতে ধর্মীয় ভাবনা কতটা যুক্তিসঙ্গত!

তন্ত্রমতে ধর্মীয় ভাবনা কতটা যুক্তিসঙ্গত!

বিষয়-ধর্ম-ধারণা-প্রতীকের সঙ্গে সংযোগ-আচরণে প্রতীকের ব্যবহার
 

'ধর্ম ধারয়তি ইতি'- শাস্ত্র বচনটি কালের স্বাভাবিক প্রভাবে এবং আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যে সমস্ত ধর্মমত ক্রমানুযায়ী বিশ্বাসের ক্ষেত্রে স্থায়ী আসন লাভ করেছে তাদের মধ্যে বহুল পরিচিত শাখা হলো হিন্দু ধর্ম, জৈন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, ইসলাম ইত্যাদি। এই সমস্ত ধর্মের এক বা একাধিক প্রতীকের ব্যবহার আমরা লক্ষ্য করি। যেমন উদাহরণ হিসাবে ইসলাম ধর্মের চন্দ্রকলা এবং তারা,যাকে আঞ্চলিক পরিভাষায় চাঁদ তারা বলা হয়। খ্রিস্টান ধর্মে থাকে ক্রশচিহ্ন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে ধর্মের পরিচায়কদের বোঝাতে এসেছে প্রতীক। স্বামী বিবেকানন্দ ধর্ম প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে সবার প্রথমেই প্রতীককেই গুরুত্বপূর্ণ স্থান দিয়েছেন।

ADVERTISEMENT

ধর্ম হল এক জীবন্ত বিশ্বাস। যে বিশ্বাস মানুষের চৈতন্যের ক্রমবিকাশের সুদৃঢ় বুনিয়াদের উপরেই প্রতিষ্টিত। কিন্তু বিশ্বাস এর প্রাথমিক স্তরে বিষয়বস্তুর সমস্তটাই থাকতে পারে বিমূর্ত বা অস্পষ্ট রূপে। প্রায় সব ধর্মের মূল কথা হলো ইস্টে চিত্ত নিবিষ্ট করা। কখনো সাকার আবার কখনো নিরাকার। এই সাকার এবং নিরাকার পরিশেষে রূপ নেয় এক অদ্ভুত প্রতীকায়িত রূপে। কখনো এই প্রতীক নির্মিত হয় ইঁট,কাঠ,পাথর,মাটি এবং বিভিন্ন ধাতুতে। কখনো তা তৈরি হয় কাগজ বা কাপড়ের উপর বিচিত্র বর্ণের নকশায় এবং তার রৈখিক গঠনের প্রকাশে- যেমন এক খন্ড কাপড়কে বলা হয় দারুব্রক্ষ্ম শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেব, আবার একখণ্ড গোলাকৃতি বিশেষ চিহ্নযুক্ত পাথরকে বলা হয় শালগ্রাম শিলা অর্থাৎ নারায়ণ, আবার একটি কাগজের উপর মন্ত্র ওঁ লিখে ইস্ট এর প্রতিকীকরণ করা হয়। সুতরাং বলা যেতে পারে যে একটি বিশেষ অর্থবহ বিশ্বাস যখন কোন একটি বিশেষ বস্তু বা চিহ্ন বা কোন বিশেষ শব্দ এবং ভাষায় আরোপিত হয় তখন সেই বিশেষ বস্তু, চিহ্ন,শব্দ বা ভাষা উক্ত বিশ্বাস এর অন্তর্নিহিত অর্থে প্রতীক হয়ে আমাদের কাছে ধরা দেয়।শিল্পের আদলে প্রতীকের ধর্মীয় ভাব ব্যতিরেকে কোন কালজয়ী শিল্প হয় না। তাই আমাদের ভারতীয় সভ্যতার ধীরে ধীরে একের পর এক ধর্মীয় প্রতীক অথবা বিভিন্ন দেবদেবীর রূপকল্প থেকে কিভাবে শিল্প অগ্রগতি লাভ করেছিল তার সম্যক ধারণা হওয়া দরকার।

 

শিবলিঙ্গ :

শিবলিঙ্গে মূল পরিচয় হয়েছিল বিমুর্ত পরিকল্পনা। প্রথম কল্পনায় এবং পরে ভারতীয় শিল্পীরা বিভিন্ন মাধ্যমে সৃষ্টি করেছিলেন তাদের সৃষ্ট রূপকল্প। এই শিবলিঙ্গ হল লিঙ্গ ঔর্যের সরলীকৃত ও বিমূর্তরূপ। এখানে পুরুষ অর্থে শিব এবং প্রকৃতি অর্থে দেবী দুর্গা।সামগ্রিকতার বিচারে এটি হলো সৃষ্টির প্রতীক।  জগৎ-সংসার তথা ব্রহ্মাণ্ড এর সমস্ত কিছু প্রতিনিয়ত সৃষ্টি হয়ে চলেছে এই চিরন্তন এবং শাশ্বত পুরুষ ও প্রকৃতির মিলনে। এই ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ভাবনার বাইরের আকৃতি ঘিরে রয়েছে শিল্পের পরিধি। পাথরের শিবলিঙ্গ উৎকৃষ্ট ভাস্কর্যের প্রতিফলন নিয়ে নিশ্চয়ই কারুর মতভেদ থাকতে পারেনা। সুতরাং তিনটি সূত্র এই মুহূর্তেই পাওয়া যাচ্ছে এখান থেকে তা হলো,প্রথম - ধর্ম ও বিশ্বাস,দ্বিতীয় - প্রতীক এবং তৃতীয়- শিল্প। অর্থাৎ একই বস্তুর মধ্যে তিনটি জিনিসের নির্যাস যার মধ্যবর্তী স্থানে রয়েছে প্রতীক এবং তার একদিকে রয়েছে ধর্ম এবং আর একদিকে রয়েছে শিল্প।

শালগ্রাম শিলা :

শালগ্রাম শিলার মধ্যেও একই ভাবে মিশে রয়েছে ধর্ম,প্রতীক এবং শিল্প।  একখণ্ড বিশেষ আকৃতির পাথরকে শালগ্রাম শিলা মনে করা হয়।যার মধ্যে হিন্দু ধর্মের মানুষজন বিশ্বাস করেন এবং সৃষ্টির বীজ ভগবান শ্রীবিষ্ণুর কল্পনা করেন।কল্পনা করেন এই জন্যই বলা যায় যে মুষ্টিমেয় কয়েকজন ভাগ্যবান দ্রষ্টা এবং মহাযোগী ছাড়া এর অভ্যন্তরস্থ ভগবান বিষ্ণুর পূর্ণ কায়া সাধারণ মানুষের পক্ষে দর্শন সম্ভব হয় না।

 

ক্রশচিহ্ন :

খ্রিষ্টধর্মের একটি প্রতীক এর মধ্যেও ধর্মবিশ্বাসের পাশাপাশি আছে শিল্প।  এটি একদিকে যেমন ভাস্কর্য অন্যদিকে তেমনি এর স্থাপত্যের দিকও আমাদের চোখে পড়ে। বিভিন্ন গির্জার একেবারে শীর্ষদেশে খ্রীষ্টের প্রতীক হিসাবে এই ক্রশচিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এটিকে স্থাপত্য এই কারণেই বলা যায় যে এর উপর খোদিত প্রভু যীশুর মূর্তি একটি উৎকৃষ্ট ভাস্কর্য হতে পারে এবং যেহেতু এই ক্রশ চিহ্নটিকে আশ্রয় করেই এই ভাস্কর্যটি তৈরি রয়েছে তাই এটিকে অনায়াসেই স্থাপত্য বলা যেতে পারে।  কারণ আমরা জানি তথা স্থাপত্যের আবির্ভাব ঘটেছে উপযোগিতা তথা প্রয়োজনীয়তার দিক থেকে। এক্ষেত্রে এই ক্রশচিহ্নের উপযোগিতা হল প্রভু যীশুর মূর্তি কে আশ্রয় দেওয়া। এছাড়া অলংকরণ শিল্পের বর্তমান যুগে এটি নকশা ডিজাইন হিসাবে সহজেই আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

তন্ত্র :

পৃথিবীতে ধর্মের সাথে সাথেই এসেছে প্রতীক। কারণ কোন ধর্মই কোন বিশেষ দেবতা বা দেবীকে কোন সূক্ষ্ম ঈশ্বরীয় স্তর থেকে পূর্ণ চৈতন্যের স্তরে সাধারণ মানুষের চোখের সামনে উপস্থিত করতে পারে না।তাই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে প্রতীকের। আবির্ভাবের দিক দিয়ে সবথেকে প্রাচীন এই সনাতন হিন্দু ধর্মের মধ্যে সবথেকে বেশি প্রতীকের ব্যবহার আমরা দেখতে পাই।হিন্দুধর্মের মধ্যেও আবার তিনটি স্তরে সাধনপদ্ধতি আমরা দেখতে পাই তা হল শৈব,শাক্ত এবং বৈষ্ণব। এই ত্রয়ী সাধন পদ্ধতির মধ্যে শক্তিবর্গের যারা সাধক তাদের অধিকাংশকেই বলা হয় তান্ত্রিক।  তান্ত্রিক অর্থাৎ যারা তন্ত্র পথে সাধনা করেন।তাহলে গোড়াতেই যে প্রশ্ন চিহ্ন টা আসতে পারে তা হল তন্ত্র কি?

তন্ত্র এই ছোট্ট শব্দটির অর্থ অত্যন্ত গভীর এবং ব্যাপক। তন্ত্র কথাটির অর্থ হল বিস্তার। এই বিস্তার বলতে সাধারণত জ্ঞানের বিস্তরণকেই বোঝায়। যদিও অনেক পণ্ডিত মনে করেন পুরুষ এবং প্রকৃতির মিলনই হল তন্ত্র আবার অনেকের মতে তন্ত্র-সাধনা বলতে শুধুমাত্র বামাচারকেই বোঝান। তবে তন্ত্র হল সাধারণভাবে একটি ধর্মাচরণ পদ্ধতি যদিও নানান পন্ডিত বিদ্বজন একে নানান ভাবে তাদের নিজের ভাবে ব্যক্ত করেছেন। তন্ত্র একটি প্রাচীন ধর্মাচরণ পদ্ধতি এবং প্রত্যেকটি ধর্ম কোন না কোনভাবে তন্ত্রের কাছে ঋণী।যদিও বলা হয় বৌদ্ধ রাজতন্ত্রকে একটি সম্পূর্ণ শাস্ত্র হিসেবে মানুষের সামনে নিয়ে আসেন আনুমানিক ছয়শত খ্রিস্টাব্দে কিন্তু তার আগেও তন্ত্র ছিল।এর প্রধান কারণ হল অতি প্রাচীন কালেও গুহাবাসী মানুষের মধ্যে মন্ত্রের অলৌকিক শক্তিতে বিশ্বাস। জাদু শক্তির উপর প্রয়োগ, যাদুমন্ত্রের প্রয়োগ,বশীকরণ, তুকতাক,এগুলি প্রচলিত ছিল।আবার এগুলি তন্ত্রের একটা অঙ্গ।তন্ত্র শাস্ত্রে এই বিদ্যাকে কৃত্যা বলা হয়।জাদু শক্তির আধার।  জাদু শক্তির আধার কৃত্যা দেবী একজন নারী।তাহলে নিঃসন্দেহে এই সিদ্ধান্তে আসা যেতে পারে যে,গুহাবাসী মানুষের সময়ও পৃথিবীতে হীনতন্ত্রের এক অপেক্ষাকৃত উন্নত পরিকাঠামো লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণত মন্ত্র বলতে আমরা যা বুঝি তা হল বৃহৎ শক্তির কাছে ক্ষুদ্র শক্তির কোন কিছু বিষয়ে আবেদন তথা প্রার্থনা আবার অন্যভাবে বলা যায় মন্ত্র হল ভগবানের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একখানি প্রার্থনা। আরও একটু বিশেষভাবে বললে বলা যায় মন্ত্র হল সেই বিশেষ অর্থ যুক্ত শব্দ মনে মনে যার স্মরণ, মনন বা চিন্তন মাত্রই অভিষ্ঠ সিদ্ধ হয় অথবা প্রতিকূল পরিস্থিতি থেকে প্রাণ পাওয়া যায় তাকেই মন্ত্র বলা হয়।

প্রতীকী তাৎপর্য বিশ্লেষণ এর ক্ষেত্রে তন্ত্র-মন্ত্রের পরেই চলে আসে যন্ত্র। খুব সহজ ভাবে বললে যন্ত্র হল এক প্রকার জ্যামিতিক আকার যার মধ্যে তান্ত্রিকরা দেবত্ব প্রতিষ্ঠা করে সাধনা করে থাকেন।  এই যন্ত্রের কিছু নির্দিষ্ট আকৃতি আছে এক কথায় বলা যেতে পারে যন্ত্র হল এক প্রকার জ্যামিতিক সংরচনা যা আমাদের বাইরের দৃষ্টিকে একটি নির্দিষ্ট স্থানে আবদ্ধ রাখবার বা একাগ্রতা বাড়াবার কৌশল। আপাতদৃষ্টিতে এটি একটি জ্যামিতিক নকশা হলেও তার মধ্যে প্রতীকী গঠনরূপের মাধ্যমে বিন্যস্ত থাকে বিভিন্ন শক্তির ভিন্ন ভিন্ন রূপ সুতরাং যন্ত্র হল একাগ্রতা বৃদ্ধির নিমিত্ত বিভিন্ন শক্তির একত্রিত গঠন বিন্যাস।

এই তন্ত্র এবং যন্ত্রের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে বহু মৌলিক সত্তার আবিষ্কার করা যায়। তার জন্য মন্ত্রের উপাচার এবং উপাচার্যের প্রয়োজন আবশ্যক।  তন্ত্র প্রক্রিয়ার বিধি এবং নির্দেশকে কাজে লাগিয়ে যন্ত্রের ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়ে থাকে। সেই বিষয়গুলি নিয়ে একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা আবশ্যক। প্রধানত তান্ত্রিকরা এই আচরণ, নিয়ম এবং বিধি সহযোগে পালন করে থাকেন। প্রাচীন তন্ত্র এবং মন্ত্রকে কাজে লাগিয়ে যন্ত্রের শক্তির সাহায্যে জীবজগতের সমস্ত বিষয়টি নির্ধারণ করা সম্ভব।

 

বশীকরণ :

যে কর্মের দ্বারা সমস্ত লোকেরা আজ্ঞাকারী হয় তাকে বশীকরণ বলে।  এই কার্য পূর্ব মুখে বসে সপ্তমী তিথিতে জপ করতে হয়। বশীকরণ কর্মের দেবতা হলেন বাণী,উত্তর কাল বসন্ত।  বশীকরণের আসন হল স্বস্তিকাসন,মুদ্রা হল পাশমুদ্রা এবং তত্ত্ব হল বহ্নিতত্ত্ব। বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ হলেও এখনও  কিছু এমন অনেক মানুষ আছেন যারা আজও তান্ত্রিক কাজকর্মে দৃঢ়বিশ্বাসী অর্থাৎ মন্ত্র তন্ত্র বলে কাউকে বশে আনা যায় এমন কর্মে বিশ্বাসী। তখনই তারা গণতান্ত্রিক যজ্ঞের আয়োজন করে থাকেন আর তান্ত্রিক সাধক গণতন্ত্রসম্মত যন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে এই কাজে প্রচুর বৈদিক মন্ত্র আজও ব্যবহার করছেন।  সাধারণত কোন স্ত্রী বা পুরুষকে বশ করার জন্য বশীকরণ ক্রিয়া করা হয়।  তান্ত্রিক সাধকগণ বশীকরণ করার ক্ষেত্রে তাদের বিভিন্ন তন্ত্রগত অনুষ্ঠানের সাথে সাথে বৈদিক মন্ত্র ও উচ্চারণ করে থাকেন।

 

স্তম্ভন :

যে ক্রিয়ার সাহায্যে সকলের প্রবৃত্তি রোধ করা যায় তাকে স্তম্ভন বলে। তান্ত্রিক পদ্ধতিতে স্তনের দেবতা রমা,কাল শীত। স্তম্ভন কার্য চন্দ্র ও বুধবারের শুক্লাপঞ্চমী ও পূর্ণিমাতে বিকটাসনে পশ্চিমমুখে করতে হয়। এই কার্যের মুদ্রা হল গদা, মুদ্রা এবং তত্ত্ব হল পৃথ্বীতত্ত্ব। এক্ষেত্রে সাধ্য ব্যক্তির নামের আদিতে ও অন্তের মন্ত্র লিখতে হয়। উনবিংশ শতাব্দীতে ভারতের মহামনীষী রাজা রামমোহন রায় যে বিষয়টির জন্য সর্বাধিক উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন তা হল সতীদাহ প্রথা বন্ধ। এই সতীদাহ প্রথার কথা আমরা বৈদিক সাহিত্যে পাই এবং অথর্ববেদে বেশ কয়েকটি মন্ত্রে সতীর এই প্রবৃত্তিকে রোধ করার জন্য ঋষি কন্ঠে আকুলভাবে মন্ত্র ধ্বনিত হয়েছে। কাম, ক্রোধ,ঈর্ষা,দ্বেষ মানুষের মানসিক প্রবৃত্তি গুলিকে বিশেষভাবে ক্ষতিসাধন করে থাকে। এই সমস্ত প্রবৃত্তি রোধের জন্য অনেকে তান্ত্রিকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় বহু মানুষ বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন কোন অসৎ উদ্দেশ্যে দ্বারা প্রণোদিত হয়ে। এই প্রবৃত্তিকে রক্ষার বিষয়টিও স্তম্ভনের মধ্যে পড়ে। এই স্তম্ভন শক্তিকে যেমন কোনো ভালো দিকে ব্যবহার করা হয় একইভাবে খারাপ দিকেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সেগুলি বিশেষভাবে ক্ষতিসাধন করে কারণ বশীকরণ বা স্তম্ভন সবই সাধারণ প্রাকৃতিক শক্তির বিরুদ্ধে গিয়ে একজন তান্ত্রিককে করতে হয়।

বিদ্বেষণ :

যে তান্ত্রিক ক্রিয়ার দ্বারা একে অপরের মধ্যে বিদ্বেষ সৃষ্টি হয় তাকে বিদ্বেষণ বলা হয়।এটিও বিচারকার্য এইসব কাজ পাপ মধ্যে গণ্য।পারিবারিক ব্যাপার,সম্মান প্রতিষ্ঠা ও সম্পত্তির হানি ইত্যাদি বিষয়ে কোনো উপায় না থাকলে তখন এই পথ অবলম্বন করে থাকেন অনেকেই। বিদ্বেষণ কার্যের দেবতা জ্যেষ্ঠা,কাল গ্রীষ্মকাল,বুধ ও বৃহস্পতিবার এ পঞ্চমী, দ্বিতীযয়া, তৃতীযয়া, ও সপ্তমী তিথিতে দক্ষিণ মুখে বসে মুদ্রায় আকাশ তত্ত্বের উদযয়ে বিদ্বেষণ কার্য করতে হয়।

 

উচ্চাটন :

এটিও একটি  বিচার প্রক্রিয়া এর মধ্যে মানুষের মনকে অশান্ত করে তোলা হয়ে থাকে।যাতে তার জীবনে শান্তি না থাকে।  সর্বোচ্চ প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হয়ে সারাজীবন অশান্তিতে থাকে।বিক্ষিপ্তভাবে এদিকে ওদিকে ঘুরে বেড়ায়। এক্ষেত্রে অত্যাচারীকে যখন প্রতিরোধ করার আর কোনো পথ থাকে না,শত্রু যখন খুব ক্ষতিপ্রবণ হয়ে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে,তখন এই প্রক্রিয়ার প্রয়োগ হয়ে থাকে।তন্ত্র মতে এই কাজের জন্য হোম,জপাদি নৈঋতকোণে অভিমুখে করতে হবে।  হোমের কুণ্ড ত্রিকোণাকার হবে,অগ্নিকোণ অভিমুখে জপ করতে হবে এবং পদ্মবীজের মালা ব্যবহার করতে হবে।এই কার্যের দেবতা হলেন দুর্গা,ঋতু বর্ষা,তিথি শনিবার যোগে কৃষ্ণাচতুর্দশী,কাল প্রদোষকাল।যে সমস্ত শত্রুদের আমরা দ্বেষ করি বা শত্রুতা ও তারাও আমাদের প্রতি বিদ্বেষভাবাপন্ন হয়,তাদের ক্ষেত্রেই অথর্ববেদ অনুযায়ী সপ্তম সূক্তে বর্ণিত এই মন্ত্র জপ করেন তান্ত্রিকরা।

 

মারণ :

তন্ত্র শাস্ত্রে এই কার্যটি খুবই নিন্দনীয় একটি কার্য এবং এই কার্যে বশীভূত ব্যক্তির প্রাণসংশযয়ের

আশঙ্কা থাকে। মারণ কার্যের দেবতা কালি,অগ্নিকোণ,ঋতু শরৎকাল,তৃতীয় মঙ্গলবার কৃষ্ণাষ্টমী, অমাবস্যা তিথি ও মৃত্যুর যোগে মারন কার্য বিধেয়। শত্রু বাধা বিলাসী ব্যক্তি এই মরণ মন্ত্রের বিধিমত পাঠের সাহায্যে শত্রুর অবসান ঘটান।যখন একেবারে আর কোন উপায় অবশিষ্ট থাকে না,শত্রুর দ্বারা প্রাণসংশয়ের আশঙ্কা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে তখন মারণের সাহায্য গ্রহণ করতে সহায়তা করেন তান্ত্রিকরা।যদিও তন্ত্রসাধনার ক্ষেত্রে এটি সর্বাধিক গর্হিত কাজ বলেই গৃহীত।এককথায় পাপকর্ম। এই কর্মে বিফলতা লাভ করলে উক্ত ব্যক্তিরও প্রাণ সংশয়ের  সম্ভাবনা তৈরি হয়।

সাধারণ মানুষ ইস্ট লাভ করতে চায়।অনিষ্ট পরিহার করতে চায় আর শত্রুকে বিনাশ করতে চায়।সে বিশ্বাস করে মন্ত্র শক্তি বলে অলৌকিক উপায়ে এসব কর্ম হতে পারে কারণ তন্ত্র-মন্ত্রের ক্ষমতা সম্পর্কে অনেকেই অবগত আছেন।যোগিনী তন্ত্র ও স্বতন্ত্র শান্তিকর্ম, বশীকরণ,স্তম্ভন,বিদ্বেষণ, উচ্চাটন, এই

ষটকর্ম করা হয়।এই সমস্ত বিচারাধীন চর্চা বেদেও স্থান পেয়েছে বিশেষত অথর্ববেদে এসব ধরনের কথা জানা যায়।

 

তথ্যসূত্র :

Heehs, P (2002). Indian Religions: A Historical Reader of Spiritual Expression and Experience. New York: New York University Press. ISBN 0-8147-3650-5.
Human Rights Watch; Press, Seven Stories (2006). Human Rights Watch World Report 2006. Seven Stories Press. ISBN 1-58322-715-6.
Ludden, David E (1996). Contesting the Nation: Religion, Community, and the Politics of Democracy in India. University of Pennsylvania Press. ISBN 0-8122-1585-0.
Makkar, SPS (1993). Law, Social Change and Communal Harmony. ABS Publications. ISBN 81-7072-047-8.
Oberlies, T (1998). "Die Religion des Rgveda". Wien.
Olson, James Stuart; Shadle, Robert (1996). Historical Dictionary of the British Empire. Greenwood Press. ISBN 0-313-29367-8.
Radhakrishnan, S; Moore, CA (1967). A Sourcebook in Indian Philosophy. Princeton University Press. ISBN 0-691-01958-4.
Rinehart, R (2004). Contemporary Hinduism: Ritual, Culture, and Practice. ABC-Clio. ISBN 1-57607-905-8.

Image Source : yogananda.com.au & Internet


0 comments

Saurav Chakraborty

Saurav Chakraborty

Shared publicly - 29th Oct, 20 11:27 am

Informative

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait