অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার

অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিসঅর্ডার

রোগটি ভীষণ চেনা। প্রতি বছর প্রায় দশ লক্ষ মানুষ শুধুমাত্র ভারতবর্ষেই এই অসুখে আক্রান্ত হন। মূলত ব্যাখ্যাতীত কোনও সমস্যা বা ভয়ের কারণে এই অসুখের বীজ রোগীর মনে বাসা বুনতে থাকে। যেমন জীবাণু সংক্রমণের ভয়। সবসময় রোগীর মনে হতে থাকে যে কারও সাথে হাত মেলালে বা জামাকাপড়ে নোংরা লেগে থাকলে সেই জামাকাপড় ধুয়ে নিতে হবে। রোগী বারবার হাত ধুতে থাকে অথবা স্নান করতে থাকে। রাস্তাঘাটে একটু নোংরা জায়গা দিয়ে আসতে গেলে বা ভুলক্রমে নোংরা মাড়িয়ে ফেললে ঘরে এসে সমস্ত কিছু কেচে স্নান করার ইচ্ছে হতে থাকে এই অসুখে। রোগীর মনে হতে থাকে সর্বত্র জীবাণু রয়েছে। এদের ঘর গোছানোর একটা বাড়াবাড়ি রকমের প্রবণতা দেখা যায়। সবসময় সব জিনিস ঠিক জায়গায় না থাকলে এঁরা যতক্ষণ না সঠিক জায়গায় এনে সেই জিনিসটি রাখছেন ততক্ষণ অন্য কোনও কাজে এঁরা মন দিতে পারেন না। ঘরে তালা ঠিকঠাক দেওয়া হয়েছে কিনা বা গ্যাস বার্নার এর সুইচ ঠিকমত বন্ধ করেছেন কিনা সেই ব্যাপারে এঁরা সন্দিহান হয়ে থাকেন এবং বারংবার লক্ষ্য করতে থাকেন। আরও নানারকম লক্ষণ রয়েছে এই অসুখের। অনেকটাই আমাদের অজানা।

ADVERTISEMENT

 

 

 

 

 

 

 

 

এঁদের মেজাজ বেশিরভাগ সময়েই উগ্র হয়ে থাকে। এঁরা সর্বদা উত্কণ্ঠায় ভোগেন, নিজের মত অন্যকে মেনে চলতে বাধ্য করার চেষ্টা করেন এবং সবসময় সতর্ক থাকেন যে তাঁর বাসস্থান জামাকাপড় বা অন্য কোনও ব্যবহার্য জিনিসে নোংরা লেগে রইল কিনা। একান্ত ব্যক্তিগত জিনিস যেমন মোবাইল ফোন বা টাকা রাখার ব্যাগ পর্যন্ত অল্প নোংরা লেগে থাকলে এঁরা জল দিয়ে ধুয়ে নিতে পছন্দ করেন যেটা হয়ত ঝাড়াঝুড়ি করে নিলেও চলত। এঁরা একই কথা বারবার বলতে থাকেন,একই কাজ বারবার করতে থাকেন। এঁদের বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু বোঝানো প্রায় অসম্ভব। এঁরা একা থাকতে খুব পছন্দ করেন মূলত দুটি কারণে। প্রথমত,অন্যেরা ভাবেন এঁরা শুচিবায়ুগ্রস্থ আর দ্বিতীয়ত,এঁরা ভাবেন অন্যেরা অপরিচ্ছন্ন। শুধু তাই নয় এঁরা ভাবেন যে এঁদের কেউ পছন্দ করেননা। এঁরা প্রচন্ড আচার বিচার মেনে চলেন। এক কথায় প্রকৃত অর্থে শুদ্ধ আচার মেনে চলেন। কিন্তু কখনো কখনো তাঁদের ব্যাবহার পরিবার বা বন্ধুদের কাছে বিসদৃশ মনে হতে থাকে। তখনই সংঘাত এর আবহ তৈরি হয়। এরপরই রোগী কারও সাথে মানিয়ে না নিতে পেরে অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়তে থাকেন। এঁদের অসুখটা কেউ ধরতে না পেরে হাসাহাসি করতে থাকেন, ফলে এঁরা সমাজের থেকে নিজেকে বিছিন্ন করে নেন একটা সময়ে। আর হ্যাঁ,পুরুষ ও মহিলা উভয়েরই এই অসুখ হতে পারে।

 

 

 

 

 

 

 

 

রোগটা জটিল। আমাদের আশেপাশে এরকম অনেকেই আছেন। কিন্তু মনযোগের অভাবে তাঁদের এই অসুখটা কখন যে বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায় তা এঁরা এবং এঁদের পরিবারের মানুষজন জানতেও পারেন না। এই রোগ একবার ধরে গেলে সারাজীবন ধরে একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে চরম সীমায় পৌঁছে যায় আর তখনই আমরা রোগীকে শুচিবায়ুগ্রস্থ আখ্যা দিয়ে দিই। কখনো এইধরনের রোগীকে বুঝতে চেষ্টা করিনা। বুঝলে হয়ত রোগের প্রকোপ কিছুটা হলেও কমানো যেত।

 

 

 

 

 

 

 

 

রোগীকে কখনো বলতে নেই যে তিনি রোগগ্রস্থ বা তাঁর অসুখের মাত্রা বেড়ে গেছে। এই অসুখটি মানসিক অসুখ। শরীরের অসুখের যেমন চিকিত্সা আছে তেমন মনোরোগেরও আছে। রোগীকে সময় দিতে হবে,বুঝতে হবে। একমাত্র সহৃদয় ব্যাবহার করে আমরা রোগীর মনকে কিছুটা হলেও শান্তি দিতে পারি।

 

(বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে ও কয়েকজন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করে লেখা। ডাক্তারের মত জানা হয়নি। তথ্যসূত্র:গূগল ও উইকিপিডিয়া, ছবি সৌজন্য – Google)

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait