মাতার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে গরুড় এবার স্বর্গ অভিমুখে বেগে ধেয়ে চললেন। পথে তিনি পিতা কশ্যপ এর সাথে দেখা করে তাঁর ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য কিছু খাবার চাইলে কশ্যপ তাঁর পুত্র কে বিশালকায় দুটি গজ ও কচ্ছপ ভক্ষণ করতে বললেন। গরুড় গজ কচ্ছপ ভক্ষণ করে বায়ুবেগে স্বর্গের দিকে ধাবিত হলেন।
দেবতারা নানাবিধ অস্ত্র দিয়ে গরুড়কে প্রহার করতে উদ্যত হলেন। কিছুক্ষণ পরে গরুড় এর বলে ভীত হয়ে দেবতারা পালাতে লাগলেন। দেবশিল্পী বিশ্বকর্মা অমৃতভাণ্ড পাহারা দিচ্ছিলেন। তিনি গরুড় এর সাথে যুদ্ধ করতে এসে ক্ষতবিক্ষত হলেন। গরুড় তখন স্বর্ণময় ক্ষুদ্র দেহ ধারণ করে অমৃতভাণ্ড নিতে গিয়ে দেখলেন দুটি বিষাক্ত সর্প ওই ভাণ্ড টি পাহারা দিচ্ছে। গরুড় তাদের ভক্ষণ করে অমৃত আহরণ করে আকাশপথে ধাবিত হলেন।
আগের পর্বের লিঙ্ক : মহাভারতীয় পর্ব – ১ (গরুড়ের উপাখ্যান)
এবার স্বয়ং দেবরাজ ইন্দ্র গরুড় এর পথ আটকালেন। তিনি গরুড় এর থেকে অমৃত চাইলেন। গরুড় তা দিতে অস্বীকার করলে ইন্দ্র তাঁর ত্রিকালজয়ী অস্ত্র বজ্র দিয়ে গরুড় কে প্রহার করলেন। এই বজ্র দধীচি মুনির পাঁজর দিয়ে তৈরি,অদ্ভুত এর ক্ষমতা। কিন্তু এই অস্ত্রের প্রহারে গরুড় এর কোনো ক্ষতি হল না। তিনি মহর্ষি দধীচির সন্মান রক্ষার্থে তাঁর শরীর থেকে একটি পালক খসিয়ে দিলেন। তাঁর এই অত্যদ্ভূত ক্ষমতা দেখে দেবতারা তাঁর নাম দিলেন ‘সুপর্ণ’।
স্বয়ং পালনকর্তা বিষ্ণুদেব গরুড় এর এই বীরত্ব লক্ষ্য করে খুশিতে প্রীত হয়ে তাঁকে বরদান করতে চাইলেন। গরুড় বললেন – “হে ভগবান, বর দাও আমি যেন অমৃত পান না করেই অমর হতে পারি। সর্পগণ যেন আমার ভক্ষ্য হয়”। ভগবান বললেন “তথাস্তু”। গরুড় ভগবান কে এবার বললেন তাঁর কাছ থেকেও কিছু বর চেয়ে নিতে। ভগবান বললেন, “তুমি অমৃত পেয়েও তা নিজে না খেয়ে তোমার সাপ ভাইদের জন্য নিয়ে যাচ্ছ। তোমার এই সততায় আমি ভীষণ প্রীত। আমি চাই তুমি আমার বাহন হও”। গরুড় স্বীকৃত হলেন। দেবরাজ ইন্দ্র গরুড় এর কাছ থেকে সাহায্য চাইলেন যাতে অমৃত সাপেরা ভক্ষণ করতে না পারে। গরুড় বললেন ,”আমি অমৃত নিয়ে গিয়ে সাপেদের দেবো। তুমি সেখান থেকে অমৃতভাণ্ড টি নিয়ে চলে এস”। ইন্দ্র রাজি হলেন।
গরুর সাপেদের অমৃতভাণ্ড দিলেন। তারা বিনতা কে মুক্তি দিয়ে স্নান করতে গেল। ততক্ষণে ইন্দ্র অমৃত নিয়ে পলায়ন করলেন,শুধু ভাণ্ড টি রয়ে গেল। এরপর সাপেরা স্নান করে এসে অমৃত কাড়াকাড়ি করে খেতে গেল এবং ভাণ্ড টি ধারালো ছিল বলে তাদের জিভ গুলি চিরে গেল ।সেই থেকে সাপেদের জিভ চেরা।
এইভাবে গরুড় তাঁর মাতৃভক্তির নিদর্শন রেখেছেন । সেই থেকে তিনি সাপেদের শত্রু এবং তাদের ভক্ষণ করেন।
(গরুড় পর্ব সমাপ্ত)
0 comments