রামপ্রসাদের গানে মুণ্ডমালিনী হয়ে উঠলেন ভালো মা

রামপ্রসাদের গানে মুণ্ডমালিনী হয়ে উঠলেন ভালো মা

মা কালী, শিব-সুন্দরের এক শক্তি, তিনি ঘোর কৃষ্ণা। শুধু কৃষ্ণাঙ্গী নন, তিনি বিকট-দশনা, উলঙ্গিনী, প্রলয়ংকরী শ্যামা। শিব, যাকে বলা হয় প্রলয়ের দেবতা – তিনি এই কৃষ্ণাঙ্গী শ্যামার কাছে স্তব্ধ শান্ত হয়ে পড়ে আছেন শবের মতন। সমস্ত শান্ত, স্তব্ধ, সুন্দরকে ধ্বংসিত করার মূর্তিতে। প্রকৃতিতে অজ্ঞাত নয়। স্নিগ্ধ তুমি, হিংস্র তুমি, পুরাতনী তুমি নিত্য-নবীনা।

এই শিব-শক্তির মধ্যে কালী বা কালিকা বাংলাদেশে শক্তি সাধনার ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত সর্বেশ্বরী হয়ে ওঠেন – সেখানে মনসা শীতলা অন্য দেবীরা ম্লান হয়ে পড়েছেন। চণ্ডিকা অম্বিকা বা কাত্যায়নী নানা নামে তিনি শাস্ত্রে কল্পিত হয়েছেন।

তবে এই বিচিত্ররূপিনী দেবী মহিষ অসুর, শুম্ভ নিশুম্ভ, মধুকৈটভ, আদি দেবতাদের নিধন করেছেন সত্য, কিন্তু দেবীর সে রূপ প্রচলিত কালীর রূপের সাথে তুলনা করা যায় না। মধ্যযুগে নারীদেবতার প্রাধান্যলাভের পটভূমে সমকালীন ইতিহাস জড়িত আছে কি না তা গবেষণার বিষয়।

ADVERTISEMENT

এক-একবার মনে হয়, অপমানিত নারীর প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের চিত্র ফুটে উঠেছে মেয়ে দেবতাদের মধ্যে। মনসা, চণ্ডী, শীতলা ধাপে ধাপে হিংস্রতার উগ্রতায় ভীষণ থেকে ভীষণতর হয়ে উঠেছেন। সতী ও দুর্গা শিবের গৃহিণী। সতী অতি নিরীহ নারী, পতিনিন্দা শুনে প্রাণত্যাগ করেন। দুর্গা তেমন শান্ত বধূ নন। তিনি স্বামী শিবের দ্বারা অমর জীবন বরপ্রাপ্ত অসুর, দৈত্য দানবদের বধ করলেন। তৃতীয় ভার্যা কালী রণরঙ্গিণী মূর্তিতে শিবের বুকের উপর দাঁড়িয়ে পড়েছেন, পদতলে চেতনাহীন স্বামীকে দেখে লজ্জায় জিভ কেটেছেন যেন। শিবের সঙ্গীরা ভূত-প্রেত, শিব-শক্তির সঙ্গিনী, যোগিনী, ডাকিনী, হাঁকিনীরা, পুরুষ দেবতার পুরুষ অনুচর, মেয়ে দেবতার মেয়ে সঙ্গিনী। শিব দক্ষ-যজ্ঞ ধ্বংস করবার সময় ভূত-প্রেত সঙ্গে নিয়েছিলেন, অসুরনাশিনী কালির সঙ্গে আছেন ডাকিনীরা। মোটকথা, সমাজ-সংসারে হিন্দু নারীর হীন অবস্থার প্রতিক্রিয়ার জন্য নারীদেবতাকে এমন শক্তিশালিনী করে কল্পনা করা হল কি?

“কালী করালবেদনা, ঘোর মুক্তকেশী, চতুর্ভূজা মুণ্ডমালা বিভূষিতা, দেবীর অধঃহস্তে সদ্যছিন্ন মুণ্ড, উর্ধহস্তে খড়গ, আর দক্ষিণদিকের উর্ধহস্তে ‘অভয়মুদ্রা’ এবং অধঃহস্তে বরমুদ্রা। দেবী মহামেঘ-প্রভা শ্যামা দিগম্বরী। দেবীর কন্ঠস্থিত মুণ্ডমালা থেকে বিগলিত রুধির ধারায় তার দেহ চর্চিত। দুটি শবশিশু দেবীর কর্ণভূষণ হওয়াতে তাঁকে ভয়ংকরী দেখাচ্ছে। তিনি ঘোরদ্রষ্টা করাল আস্যা, পীনোন্নত পয়োধরা। তাঁর কাঞ্চি শবহস্ত নির্মিত। তিনি হাস্যময়ী। দেবীর দুই ওষ্ঠাধার থেকে রক্তধারা বিগলিত হওয়ায় তিনি দীপ্ত বসনা। মহারৌদ্রী শ্মশানবাসিনী তিনি ঘোররবকারিণী, তিনি ত্রিনয়না।… তিনি দস্তুরা। তাঁর কেশরাশি ডানদিকে এলায়িত, তাতে মুক্তো খচিত। দেবী শবরূপী মহাকালের সঙ্গে বিপরীত রতি নিয়ত। তিনি সুখপ্রসন্নবদনা এবং তাঁর মুখপদ্ম ঈষৎ হাস্যযুক্ত।       

এই শিব-সুন্দরের শক্তি, বোঝাতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখছেন: "শক্তি' শব্দের সাধারণ যে-অর্থ, যে-অর্থ নানা চিহ্নে, অনুষ্ঠানে ও ভাবে শক্তিপূজার মধ্যে ওতপ্রোত এবং বাংলাদেশের মঙ্গলকাব্যে যে-অর্থ প্রচারিত হয়েছে আমি সেই অর্থই আমার রচনায় গ্রহণ করেছি।

একটি কথা মনে রাখতে হবে, দস্যুর উপাস্য দেবতা শক্তি, ঠগীর উপাস্য দেবতা শক্তি, কাপালিকের উপাস্য দেবতা শক্তি। আরো একটি ভাববার কথা আছে, পশুবলি বা নিজের রক্তপাত, এমন কি, নরবলি স্বীকার করে মানত দেবার প্রথা শক্তিপূজায় প্রচলিত। মিথ্যা মামলায় জয় থেকে শুরু করে জ্ঞাতিশত্রুর বিনাশ কামনা পর্যন্ত সকল প্রকার প্রার্থনাই শক্তিপূজায় স্থান পায়”।

রবীন্দ্রনাথের কালী বিরোধিতার পিছনে হয়ত এইসব চিন্তাধারাই প্রকাশ পেয়েছে। এছাড়াও শৈশবে ঠনঠনের পথে যেতে যেতে রবীন্দ্রনাথ দেখেছিলেন বলির বীভৎসতা - এক নিম্নশ্রেণির স্ত্রীলোক রক্তে হাত ডুবিয়ে শিশুর কপালে তিলক কেটে দিচ্ছিলেন সঙ্গে ছাগশিশুর আর্তনাদ — যা রবীন্দ্রনাথের মগ্নচেতনে কালী সম্পর্কে বিরূপ ভাব তৈরি করে। এই ধরণের হিংস্র হত্যার উপাসনাকে কোনো তত্ত্ব বা প্রতীকের অজুহাতেই স্বীকার করে নিতে রাজি ছিলেন না তিনি, যার আভাস পাওয়া যায় ১৯৩০ সালে রঁলার লেখা রামকৃষ্ণ ও বিবেকানন্দ সম্পর্কিত গ্রন্থ বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের পাঠ-প্রতিক্রিয়ায়। 

এইসব ভাবনার জের টেনেই ‘বিসর্জন’ নাটকে ‘ত্রিপুরেশ্বরী’র মূর্তি কল্পনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এছাড়া বলি সম্পর্কে তাঁর বিরোধীতা উজাড় করে দিয়েছিলেন এই কবিতায়।

মাতৃস্তনচ্যুত ভীত পশুর ক্রন্দন

মুখরিত করে মাতৃ-মন্দিরপ্রাঙ্গণ।

অবলের হত্যা অর্ঘ্যে পূজা-উপচার—

এ কলঙ্ক ঘুচাইবে স্বদেশমাতার,

তোমারে জানাই নমস্কার।

একই ভাব নিয়ে লেখা ‘রাজর্ষি’ উপন্যাসেও জয়সিংহ বলেছে—“এইজন্যই কি তোকে সকলে মা বলে মা? তুই এমন পাষাণী! রাক্ষসী, সমস্ত জগৎ হইতে রক্ত নিষ্পেষণ করিয়া লইয়া উদরে পুরিবার জন্য তুই ঐ লোল জিহ্বা বাহির করিয়াছিস? স্নেহ প্রেম মমতা সৌন্দর্য ধর্ম সমস্তই মিথ্যা, সত্য কেবল তোর ঐ অনন্ত রক্ততৃষা? তোরই উদর-পূরণের জন্য মানুষ মানুষের গলায় ছুরি বসাইবে, ভাই ভাইকে খুন করিবে, পিতাপুত্রে কাটাকাটি করিবে। 

‘বাল্মীকী প্রতিভা’ নাটকে কালী দস্যুদের উপাস্য, তাঁর পুজোয় নরবলি চাই। এই দেবীর প্রতিকূলে রবীন্দ্রনাথ দাঁড় করালেন স্নিগ্ধতার প্রতিমূর্তি দেবী সরস্বতীকে। মনের বিরূপ ভাব রবীন্দ্রসাহিত্যে কালী প্রসঙ্গে ছায়া ফেলেছে বারবার। ‘বিসর্জন’ নাটকের জনতা চরিত্রগুলিও কালীকে রক্তপিয়াসী দেবীই বলেছে। বলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর জনৈক জনতার উক্তি— ‘মা পাঁঠা পায়নি, এবার তোদের এক একটাকে ধরে মুখে পুরবে।’ শেষপর্যন্ত ‘বিসর্জন’ নাটকে রঘুপতিও কালীকে ‘ নির্দয়’ , ‘রাক্ষসী’, ‘পিশাচিনী’ বলবে। বিসর্জন দেবে কালীমূর্তি। একবার ‘বিসর্জন’  নাটকের অভিনয়ের সময় একবার রবীন্দ্রনাথ হয়েছিলেন রঘুপতি। অবনীন্দ্রনাথের স্মৃতিচারণ থেকে জানা যায়, কথা ছিল মূর্তি বিসর্জনের অংশে মূর্তি তুলে মঞ্চের পাশে রাখতে হবে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ অভিনয়ের ঘোরে সত্যিই সেই মূর্তি তুলে ফেলে দিতে গিয়েছিলেন। সে এক কাণ্ড!

তবে দেবী চামুণ্ডে, কালিকের ‘করাল দংষ্ট্রারেখা’ ছাপিয়ে তিনিও মা। 'শ্যামা মা'। নাঃ, কালী শ্যামা হয়ে উঠেছিলেন কিন্তু রামকৃষ্ণেরও প্রায় একশো বছর আগে, রামপ্রসাদের হাত ধরে। 
বাংলায় কালী পুজোর প্রবর্তক বলা যায় নবদ্বীপের কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশকে। তন্ত্রসাধক। কৃষ্ণানন্দের আগে বাংলায় তন্ত্রসাধনা ছিল বেশ একটা গা ছমছম ব্যাপার। কৃষ্ণানন্দ এসে তাকে একটু নরম সরম করলেন। সাধারণের কাছে আনলেন একটু। এখন যে মা কালীর শান্ত রূপ। সেই দক্ষিণাকালী, তাঁর হাত ধরেই। যাই হোক, রামপ্রসাদ কৃষ্ণানন্দের শিষ্য ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি তাঁর রামপ্রসাদী গানের সুরে, ভয়ংকরী কালীকে করে তুললেন উমার মতোই ঘরের মেয়ে। মেয়ে নয়, বলা ভালো, মা..।

এই তো সেদিনের কথা। পূজোর জোগাড় করতে করতে অনেকটাই বেলা হয়ে গিয়েছে। মা’এর ভোগ দিতে হবে, মা’কে গান শোনাতে হবে... প্রায় দৌড়তে দৌড়তে গঙ্গায় স্নান করতে যাচ্ছিলেন কালীসাধক রামপ্রসাদ। গঙ্গার ঘাটের একটু আগেই একটি শ্যামবর্ণ মেয়ে তাঁর পথ আটকে দাঁড়ালো। কোমর পর্যন্ত কোঁচকানো ঘন কালো চুল, টানা টানা চোখ... খানিকটা আবদারের সুরেই সে বললো, ‘শোনো না...সবাই বলে তুমি নাকি খুব ভালো গান করো, আমাকে একটা গান শোনাবে...?’। রামপ্রসাদের তখন দম ফেলার সময় নেই, তিনি মেয়েটিকে অনুরোধের সুরে বললেন, ‘মা... আজ আমার খুব তাড়া রয়েছে, মা’এর পুজো বাকি আছে...তুমি বরং আমার বাড়িতে এসো, আমি মা’এর পুজো শেষ করেই তোমাকে গান শোনাব’। মেয়েটি খিল খিল করে হেসে উঠে বললো, ‘ তোমার মা কে গো ?’ রামপ্রসাদ বলেলেন, ‘শ্যামা মা... আমাদের সবার মা... কালী’।
‘ও তাহলে কালী ঠাকুরকে গান শুনিয়ে তারপর আমাকে শোনাবে ? এখন শোনাবে না? আচ্ছা, ঠিক আছে, তুমি যাও... আমি কিন্তু ঠিক তোমার গান শুনতে যাব’।
রামপ্রসাদ আর দাঁড়ালেন না, তার হাতে আর একটুও সময় নেই। একপ্রকার দৌড়তে দৌড়তে গঙ্গাস্নান শেষ করে বাড়ি ফিরে শ্যামাপুজোয় বসলেন রামপ্রসাদ।
পুজো করতে করতে তিনি নিজেকে হারিয়ে ফেলতেন, ওই সময় শ্যামা মা’এর সঙ্গে আত্মিক যোগাযোগ হত তার। মা যেন সত্যি সত্যিই তাঁর সামনে এসে তাঁর পুজো গ্রহণ করতেন, তাঁর গান শুনতেন। রামপ্রসাদ চোখ বুজে গান ধরলেন......
‘মন তোর এত ভাবনা কেনে?
একবার কালী বলে বস রে ধ্যানে...
জাঁকজমকে করলে পুজা অহংকার হয় মনে মনে,
তুমি লুকিয়ে তারে করবে পুজা, জানবে না রে জগজ্জনে’।

গানের সুরে একাত্ম হয়ে সাধক যেন তখন সাধনায় আত্মমগ্ন, যে সাধনার পুস্পার্ঘ্য হলো তাঁর সঙ্গীত, কিন্তু গানে বিভোর রামপ্রসাদ এ কি দেখছেন ! তাঁর নিজের চোখকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি, হঠাৎই গান থামিয়ে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেললেন... তাঁর চোখের সামনে মৃন্ময়ী শ্যামা মা, চিন্ময়ী রুপ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। গঙ্গার ঘাটে দেখা হওয়া সেই মেয়েটিই তন্ময় হয়ে তাঁর গান শুনছে। মেয়েটি যেন তাকে বলছে, ‘ কি রে... গান কর, আমি তো তোর গান শুনতেই এসেছি’।
রামপ্রসাদ’এর চোখ দিয়ে তখন ঝরঝর করে জল পড়ছে... হাত জোড় করে তিনি মা’কে বললেন, ‘মা... আমি তোমাকে চিনতে পারি নি, গঙ্গার ঘাটে তুমিই আ্মার পথ আটকেছিলে, তুমিই আমার গান শুনতে চেয়েছিলে...শোনাব মা, আজ আমি তোমাকে অনেক গান শোনাব’। রামপ্রসাদ গাইলেন...
মা তোমারে বারে বারে জানাব আর দুঃখ কত

ভাসিতেছি দিবানিশি দুঃখ-নীরে স্রোতের শ্যাওলার মত।

আর একদিন, রামপ্রসাদ বাড়ির সামনে বেড়া বাঁধছিলেন। আর তাঁর ছোট মেয়ে হাতে দড়ি ধরিয়ে দিচ্ছিল। একসময় বালিকা উঠে চলে যায়। কিন্তু প্রসাদ ঠিক হাতে দড়ি পেতে থাকেন। বেড়া বাঁধা চলতে থাকে। অনেক পরে মেয়ে ফিরে এসে বলে, বাবা কে দড়ি ধরিয়ে দিল? তখন প্রসাদের হুঁশ ফেরে। বোঝে এতক্ষণ মেয়ে তার কাছে ছিল না। বালিকা রূপে স্বয়ং এসেছিলেন মহামায়া।

রামপ্রসাদ তাঁর জীবদ্দশাতেই জনপ্রিয় হয়েছিল। রামকৃষ্ণের হাত ধরে তিনি সবস্তরের মানুষের কাছেই পৌঁছে গেলেন। রামকৃষ্ণের হাত ধরে কালী থুড়ি শ্যামা ভাব পৌছলো অসামান্য উচ্চতায়। তন্ত্রসাধনা হয়ে উঠল আরও কাছের। মানুষের কাছে তা ভয়ের থাকলেও, হল ভক্তিরও। শ্যামা মা’কে, ভয় মিশ্রিত ভক্তি আবেগে কাছে টানল বাংলা। ভেবে দেখুন, ঠিক আমার-আপনার মায়ের মতো। মা’কে ভয় পাই, মা আবার কাছেও টানেন। মায়ের ওপর রাগ করি, মায়ের কাছে আবদারও করি, মারও খাই। উমা যেখানে ঘরের মেয়ে, শ্যামা সেখানে 'মা'। ভয়ংকরী কালীকে মা ভাবতে বাধ্য করলেন রামকৃষ্ণ। যুক্তিবোধ ভাসলো বিশ্বাসবোধে। অবিশ্বাস আর অস্তিত্বের সংকটের অন্ধকার কাটলো দীপাবলীতে। এমনকি বিবেকানন্দের দৌলতে, ইংরেজদের বিরুদ্ধেও লড়াইয়ে শক্তি জোগাতেন মা কালীই। মহাকালের বিজয়ীতা, মহাকালী। আর মা’কে ছেড়ে আমরা যাই কোথায় বলুন তো?  

শেষমেষ রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনে কালীবিদ্বেষের কথা সর্বজনবিদিত হলেও রবীন্দ্রসাহিত্যে কিন্তু বিশেষ ভঙ্গিতে এসেছিলেন এই দেবী।

‘সন্ধ্যা হল গো ও মা, সন্ধ্যা হল, বুকে ধরো। 
অতল কালো স্নেহের মাঝে ডুবিয়ে আমায় স্নিগ্ধ করো।’

এই কবিতাটি লেখা হয়েছিল কালীপুজোর দিন। এই প্রসঙ্গে মনে পড়ে গীতবিতানের স্বদেশ পর্যায়ের ২১ সংখ্যক গানটি—

ভয়ঙ্করী, নগ্নিকা কালী নয়! রবীন্দ্রনাথ কালীকে সাজিয়েছেন নিজের মতো করে।

“ডান হাতে তোর খড়গ জ্বলে, বাঁ হাত করে শঙ্কাহরণ,
দুই নয়নে স্নেহের হাসি, ললাটনেত্র আগুনবরন!
ওগো মা, তোমার কি মুরতি আজি দেখি রে”!

এই রৌদ্রবসনী মাকে দেখে দেখে আঁখি ফেরে না। রবীন্দ্রনাথের সূক্ষ্ম সৌন্দর্য আর রুচিবোধে এই যেন কালীর আদর্শ রূপ। 

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait