পুজোটা ওঁদেরও!! হয়ত ওঁরা সেরকম গুরুত্ব পান না! কিন্তু এই পুজোয় ওঁদের ভূমিকাই সবথেকে বেশি!
পুজোর জামা জুতো না হলে তো আমাদের পুজো শুরুই হয় না। এখন যদিও সারাবছর ধরেই কেনাকাটা চলে তবুও পুজোর কেনাকাটার মজাই আলাদা। ওঁরা দিনরাত ডিউটি করে অক্লান্ত হাসিমুখে আমাদের জামাকাপড় সরবরাহ করতে থাকেন। অন্তত কুড়িটা জুতোর বিশেষত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তারপর একটা জুতো হয়ত বিক্রি করতে পারেন! তাতেও ক্লান্তি নেই৷ হ্যাঁ,ওঁরা জামাকাপড় ও জুতোর দোকানের কর্মী। আজও একটি পোশাক পাল্টাতে গিয়ে ওঁদেরকেই দাঁড়িয়ে ডিউটি করতে দেখলাম! ওঁদের কি ছুটি নেই?
সাজসজ্জার দোকান সকাল থেকে রাত খোলা। খোলা বিউটি পার্লার! আমরা পায়ের নখ থেকে চুল পরিপাটি, ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে! তাঁদের ও ডিউটির সময় বেড়ে বারো থেকে ষোল ঘন্টা। ফল পাড় পিকোর দোকানের কাকিমারা দিদিরা তখনও মেশিন এ পা চালাচ্ছেন। অষ্টমী রাত আটটা অবধি এইসব পার্লার দোকানদানিখোলা। রাতে যখন আমরা পরিপাটি সেজে বেরিয়েছি,ক্লান্ত কয়েকটা মুখ পরিবারের জন্য পোশাক কিনে বাড়ি ফিরছে। চুল এলোমেলো,ঘামে ভেজা শরীর। চিনে নেওয়া যায় সহজেই।
ADVERTISEMENT
শহরের রাস্তা জুড়ে ইতিউতি গজিয়ে ওঠা ফাস্টফুড এর দোকান,ঠান্ডা পানীয় আইসক্রিম এর দোকান। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা আপাত মলিন পোশাক পরে বজ্রকঠিন মুখে বিক্রি করছে উপাদেয় ডেজ়র্ট। এদের পাঁচ টাকা বেশি দিতে আমাদের হাত কাঁপে। কিন্তু বড় শহরের বড় হোটেল এ ডিনার এ গিয়ে অনেক টাকা বেশি দিয়ে খাই সহজেই। রেস্তোরাঁয় তত্পর মুখগুলো অর্ডার নিয়ে ঝটপট খাবার দিয়ে যাচ্ছে টেবিলে। মুহূর্তে সে খাবার উদরস্ত। অনেক সময় ভিড়ের চাপে এঁদের মেজাজও ঠিক থাকে না। ত্রুটি একটু হলেই তুইতোকারি,গালিগালাজ। দেরি একটু হলেই বাবুদের মাথা গরম। এঁদের মেজাজের খবর কে রাখে? আজও ফুচকা আর চটপটি না খেলে পুজো শুরু হয় না আমার। অনেক পাওয়ার ভিড়ে আর সেই হারানো ছোটবেলাটাকে ফিরে না পাওয়ার যন্ত্রণাটাকে সামান্য একটু মলম লাগানোর চেষ্টা হয়ত। কিন্তু অমৃত সেই স্বাদ,আজও,একই! কোথায় লাগে দামী হোটেল এর ডিনার এই আনন্দের কাছে?
রাস্তায় রাস্তায় কত ভিখারী! জামা ধরে টানছে দুটো টাকার জন্য। রেগে যাই,তারপর আবার ওদের ডেকে কিছু দিই। কাউকে কাউকে কিছু কিনে দিই। নাহলে অপরাধী মনে হয় নিজেকে।
মণ্ডপগুলোতে ভূত জোকার কার্টূন এইসব সেজে আছেন অনেক মানুষ। ওঁদেরও তো পরিবার সন্তান আছে। তাদের পুজো কিভাবে কাটে? খবর রাখি না। আত্মমগ্ন হয়ে থাকি। মনটা মাঝখান থেকে খারাপ হয়ে যায়।
সর্বোপরি Police বিভাগ কে ধন্যবাদ। ওঁরা না থাকলে পুজো এত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হত না। এত ভীড় সামলেও হাসিমুখে রসিকতা করেন পরস্পরের সঙ্গে, ভাল লাগে। স্বাস্থ্য বিভাগ ও অন্যান্য জরুরি বিভাগের কর্মীদেরও ধন্যবাদ জানাই। পুজোর সময় কয়েকবার বিপদে পড়েছি বয়স্ক মানুষদের নিয়ে,এঁদের সহায়তায় কাটিয়ে উঠতে পেরেছি।
সবমিলিয়ে আনন্দে বিষাদে পুজো কাটল ভালই। যাঁদের কথা লিখলাম তাঁদের ছবি দিলাম না। এঁরা আমার আপনার পাশে হাজারে হাজারে আছেন। চিনে নিন নিজেরাই।
এই মনটাকে নিয়েই যত সমস্যা। বড় হলাম না আর । হতেও চাই না। বছর বছর পুজো এইভাবেই কাটাতে পারলেই আমি খুশি। অবাধ্য মনটা যেন এইরকমই থাকে।
শুভ শারদীয়া !!!!
0 comments