১
সিঁদুর পরাটা রক্তিমার অভ্যাসে পরিণত হয় নি। গোল সেদিনই বেঁধেছিল, যেদিন বিবাহের তৃতীয় দিনেই স্নান সেরে ও সিঁদুর পরতে ভুলে গিয়েছিল। ওই দিন থেকেই নামের পাশে শ্রীমতীর আগে একটা উহ্য 'অলক্ষী' জুড়ে গিয়েছিল। এসবে রক্তিমার কিছু যায় আসে না। শূন্য সিঁথিতেই নতুন সংসার সাজাচ্ছিলো রক্তিমা। সময়ের সাথে, একদিকে যতই নতুন বৌয়ের শাখা পলার গুঞ্জন, রান্নাঘরের বাসনের আওয়াজে মিশে যেতে থাকে, অন্যদিকে ততই উহ্য স্বরে তুলে রাখা 'অলক্ষী' পদবী প্রকট হতে থাকে। অলক্ষী পদবী প্রথম ভাষায় প্রকাশ পায়, যেদিন বিয়ের শাঁখাজোড়া বছর ঘোরার আগেই ভেঙে যায়, থুড়ি বেড়ে যায়। সেই থেকে 'অলক্ষীর' প্রসার বৃদ্ধি পেতে থাকে। ক্রমেই একদিন রক্তিমার পরিচয় ঘটে, তার নতুন পদবীর সাথে। সেই দিনে 'অলক্ষী' শব্দটা কানের মধ্যে দিয়ে হৃদয়কে পেষণ করে, ধমনীর মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে, বিষের মতো মিশে গিয়েছিল রক্তের সাথে।
ADVERTISEMENT
২
স্বামী যে মাদকাসক্ত, সেটা রক্তিমার জানা ছিল না। প্রতি রাত্রে রক্তিমা, ওর সুচরিত্র, নেশাগ্রস্ত, স্বামীকে আগলিয়ে নিয়ে আসে বিছানায়। ওর সেবা যত্ন করে লক্ষীমন্ত স্ত্রীর মত।
সেদিন ভীষণ বৃষ্টি। রাত্রি ঘন কালো। ঘড়ির কাঁটায় রাত দুটো। রক্তিমা অপেক্ষা করছিলো তার স্বামীর জন্য। জানালার গ্রিলের পিছন থেকে বেশ দূরে একটা বেসামাল অবয়ব দেখে চিনে নিতে অসুবিধা হলো না। দরজা খুলে একটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য বেরোতেই, একটা তীব্র, ভীষণ দ্রুত আলো দেখে আঁতকে উঠল। বিপদ বুঝতে পেরে, প্রায় বিদ্যুৎ বেগে ছুটে গিয়ে স্বামীকে ঠেলে ফেলে দিল রাস্তার ধরে। আবার প্রচন্ড শব্দ, তারপর নিস্তন্ধতা। রক্তিমার সিঁথি রাঙিয়ে এখন বয়ে যাচ্ছে রক্তবন্যা। সিঁথি আর শূন্য নেই।
0 comments