মাতৃরূপেণ  সারদাদেবী

মাতৃরূপেণ সারদাদেবী

মাতৃরূপেণ

আমার স্কুলজীবনের পুরোটাই কেটেছে রামকৃষ্ণ সংঘ , সারদা আশ্রমের কড়া শাসন , সুশৃঙ্খল নিয়মানুবর্তিতা , স্বামীজী , রামকৃষ্ণদেব ও সারদা মায়ের আদর্শ ও তাদের সহজ মনোমুগ্ধকর অথচ অপরিমেয় জ্ঞানের ঘেরাটোপে ।পরবর্তী কালে বাগবাজারে ওমেন্স কলেজে পড়াকালীনও তিনি সর্বদা আমার ছায়ার মত ছিলেন ।তাঁর বাড়িটিই ছিল আমার কলেজের পেছনে , ছিল তাঁর নামাঙ্কিত ' মায়ের ঘাট '।কলেজ শেষে মাঝে মাঝে গিয়ে দাঁড়াতুম সেখানে। বিশাল ' আমি ' -র সামনে নিজের ক্ষুদ্র 'আমি ' কে বোঝার বৃথা চেষ্টা করতুম আর কল্পনা করতুম আজও বুঝি মা সে বাড়ির ছাতে উঠছেন চুল শুকোতে বা গঙ্গা দর্শন করতে।

যদিও আমি নিজের জীবনে তাঁদের চিন্তাভাবনা, কথা বা চলার পথের দিক নির্ণায়ণ কতটা আত্তীকরণ করতে পেরেছি তা জানি না, তবে আজও যখনই ভুলের হাতছানি ভরা পথে পা বাড়াই পেছন থেকে অনুভব করি এক অদৃশ্য টান , মনের ভেতরের এক অনুভবনীয় লাগাম , এক শক্ত নোঙ্গর যা মানুষকে আটকে রাখে নিয়ম -নিষ্ঠা - কর্মের আঠালো মাটিতে। আমার মনতরী ভাসতে পারে না জীবনের লোভনীয় , আকাঙ্খাকিত , লালসাময়, পিচ্ছিল জলজ পথের অভিমুখে । হ্যাঁ একথা সত্য যে সবসময় যে আমি আটকে থেকেছি না নয় , চেষ্টা করেছি নোঙ্গর কেটে ভেসে যাওয়ার , গিয়েওছি তবু কিসের এক প্রচ্ছন্ন টানে যেন মাঝপথ থেকে ফিরে আসতে হয়েছে আমায় । মনের মধ্যে এক সূক্ষ্ম অথচ তীব্র এক অদম্য আকর্ষণী শক্তির টান — আর সেটাই মনে হয় সেই পাখি পড়ার মত বলে যাওয়া প্রার্থনার সময়ে কয়েকটি কথা বা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য দেওয়া উদ্বোধন কার্যালয়ের কিছু বই যা স্কুলে চোখ বুজে একঘেয়ে রুটিনের মত আওড়ে যেতাম আর মনে মনে ভাবতাম উফফফ আর কতক্ষন !!

ওই আওড়ে যাওয়া কথাগুলো যে এ বয়স পর্যন্ত মনের মাঝে এঁটেল মাটির মত এঁটে বসে আছে আর পাপ অন্যায় অপরাধের পঙ্কিল জলেও যে তা এখনও ধুয়ে যায়নি তাই আশ্চর্যের ! আর একেই বোধহয় বলে শিক্ষা , সংস্কার যা মানুষকে বিপথের চরম শীর্ষে পৌঁছনোর মাঝপথে হাত টেনে ধরে । অনুরণিত হয় কিছু কথা , জীবনের বিভিন্নপ্রান্তে বিভিন্নরূপের জীবনীশিক্ষা হয়ে ধরা দেন তিনি আমাদের কাছে , হয়ে ওঠেন 'শতরূপে সারদা '।

ঈশ্বর এক, অদ্বিতীয়, অনিত্য, অপরাজেয়, অপ্রকট , অলিঙ্গ। লীলা প্রয়োজনে তিনি রূপ পরিগ্রহ করেন ।কখনও তিনি মানব বা কখনও মানবীরূপে আমাদের সম্মুখে আসেন , প্রকট করেন নিজেকে ।কিন্তু যে মুহূর্তে তিনি এ মরজগতে দেহরূপ ধারণ করেন তিনি হয়ে যান নশ্বর! ঈশ্বরও নশ্বর হন , মহাকাল তাঁকেও গ্রাস করে শুধু নশ্বর হয় না শুধু তার দিয়ে যাওয়া শিক্ষা , জ্ঞান , আনন্দ , পথ । ঈশ্বর যেমন অনিত্য তেমনই তাঁর দিয়ে যাওয়া অমৃতসুধাময় আনন্দরূপ জ্ঞান অবিনশ্বর । তার মধ্যে দিয়েই অক্ষয় থাকেন ঈশ্বর আমাদের মধ্যে । মা বলেছেন —" মনেতেই সব , মনেই শুদ্ধ , মনেই অশুদ্ধ "। আমাদের মধ্যে স্বর্গ আমাদের মধ্যেই নরক , আমাদের মধ্যেই ঈশ্বর আবার আমাদের মধ্যেই শয়তান।

তো ঈশ্বর যখন লীলাধারণে উন্মুখ , সেই মুহূর্তে তিনি তার লীলাসঙ্গিনীর প্রয়োজন অনুভব করলেন । যেমন শ্রীকৃষ্ণ-শ্রীরাধা কিংবা শিব-শক্তি তেমনই শ্রীরামকৃষ্ণের জন্য এলেন সারদামনি দেবী , শ্রীরামকৃষ্ণের সমশক্তিসম্পন্ন আধ্যাত্মিকবিকাশরূপিণী মাতৃস্বরূপা তিনি। রামকৃষ্ণসূর্যের অস্তাচলগমনের সাথে সাথে সারদাশশীর অভ্যুদয় সে সময় রামকৃষ্ণসংঘকে করেছিল যেমন মমতাস্নেহে সিঞ্চিত ,করেছিল বাৎসল্যরসে লালনপালন ,তেমনই মাথা তুলে দাঁড়ানোর শক্তিসঞ্চয় করেছিল তার হৃদমূলে । রামকৃষ্ণআদর্শের যোগ্য ধারক ও বাহক ছিলেন সারদামনি দেবী । নিবেদিতার কথায় — " সত্যিই তুমি ঈশ্বরের অপূর্বতম সৃষ্টি , শ্রীরামকৃষ্ণের বিশ্বপ্রেম ধরণের সেই নিজস্ব পাত্র — যে স্মৃতিচিহ্নটুকু তিনি তাঁর সন্তানদের জন্য রেখে গেছেন — যারা নিঃসঙ্গ , নিঃসহায় । সত্যিই ভগবানের অপূর্ব রচনাগুলি সবই নীরব । তারা অজানিতে আমাদের জীবনের মধ্যে প্রবেশ করে — যেমন বাতাস , যেমন সূর্যের আলো , বাগানের মধুগন্ধ , গঙ্গার মাধুরী —এই সব নীরব জিনিসগুলি সব তোমারই মতো ।  " — সত্যিই তো বিশ্বের অগণিত মানুষের মনকে সারদাশশীর নির্মল জোৎস্না মনের অন্ধকারকে ধুয়ে চলেছে আজও ।

মা বলেছেন — " ব্রহ্মান্ড জুড়ে সকলেই আমার সন্তান "। মাঝে মাঝে সত্যিই তো তিনি যেন আমাদের কাছে শ্রীরামকৃষ্ণের সহধর্মিনী সত্তাটি ছাড়িয়ে শুধু মাত্র চিন্ময়ী মাতৃমূর্তি রূপে প্রতীয়মানা হন । আমরা ভুল যাই তিনি কার স্ত্রীরূপে এসেছিলেন , তিনি কত বড় এক সংঘের চালিকাশক্তি ছিলেন , কার আদর্শই বা তিনি আজীবন প্রচার করে গেছেন । তাঁর পরিচয় আমাদের কাছে যেন শুধু ' মা ' , যে মা সর্বদা সন্ত্রস্ত তার সন্তানের সুখের জন্য , সন্তান ভিন্ন তার অস্তিত্ব যেন নির্বাপিত প্রদীপের ন্যায় । সন্তান যেমন তাঁর হতে সৃষ্ট তিনিও তেমনই সন্তানের জন্যই যেন তৈরী করছেন প্রতিনিয়ত নিজেকে । বাৎসল্যসুধায় পরিপূর্ণ এক প্রচন্ড শক্তির আধার তিনি । জীবনের চরম সঙ্কটমুহূর্তে যেমন আমরা গর্ভধারিনী মায়ের কোলে আশ্রয় নিই তেমনি মা সারদার মুখ নিঃসৃত প্রতিটি বাক্য মাতৃক্রোড়ের মত নরম শান্ত অথচ সুরক্ষা সম্পৃত্ত এক আধার যা আমাদের বিপদে স্থির থাকতে , অকুতভয় হতে , সঠিক দিক নির্বাচনে সাহায্য করেন তা সে নাই বা আমরা তাঁর গর্ভজাত সন্তান হলাম। আদ্যাশক্তি জগৎমাতৃকার মানবীরূপ তিনি | তাঁর অংশ পৃথিবীর সব মায়ের মধ্যেই লুক্কায়িত । ঈশ্বর স্বয়ং নিজে আসতে পারেন না বলেই তো তিনি মা বানিয়েছেন .....

" যারা এসেছে , যারা আসেনি , আর যারা আসবে , আমার সকল সন্তানদের জানিয়ে দিও মা - আমার ভালোবাসা আমার আশীর্বাদ সকলের ওপর আছে । " — তিনি নিজে নেই কিন্তু তিনি আজও আছেন আমাদের মায়েদের মধ্যে । ঘরে ঘরে যত মা আছেন , যত নারী প্রতি মুহূর্তে সন্তান জন্মের সাথে সাথে নিজে মা রূপে নবজন্ম নিচ্ছেন তাঁদের সকলের মধ্যে তিনিই বিরাজমানা ।

শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন :" ও সারদা — সরস্বতী — জ্ঞান দিতে এসেছে ।" , " ও জ্ঞানদায়িনী " । গুরু অর্থ যিনি জ্ঞানদান করেন । তো এরকম জ্ঞানদাতা বা দাত্রী আমাদের চারপাশে অহরহ ঘুরছেন , আমরাও মাঝে মাঝে জ্ঞান দেওয়ার সুযোগ একবার পেলে ছাড়ি না । কিন্তু প্রকৃত জ্ঞান কী ? দিব্যজ্ঞান , বিদ্যাজ্ঞান , শাস্ত্রজ্ঞান , সাংসারিক জ্ঞান , ধর্মজ্ঞান — কোনটা তা সঠিক জানা নেই আমাদের ।

' গু ' শব্দের অর্থ ' অজ্ঞান ' আর ' রু ' অর্থ অজ্ঞাননাশক জ্যোতি । অজ্ঞানরূপ অন্ধকারের মধ্যে জ্ঞানরূপ জ্যোতি প্রদান করেন ' গুরু ' । আনন্দস্বরূপ জ্ঞান দান করেন গুরু । ' সঠিক ' ও ' বেঠিক ' কে চিনে নিতে সাহায্য করেন গুরু ...

অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া।

চক্ষুরুন্মিলিত যেন তস্মৈ শ্রী গুরুবে নমঃ।।


মা ভিন্ন এ জগতে গুরু কে আছেন । সেই যে জন্মদাত্রী মায়ের কড়ে আঙ্গুল ধরে রাস্তার যাবতীয় আবর্জনা টপটাতে শুরু করে ছিলাম আজ এ বিশ্বজননীর হাত ধরে মনের সমস্ত ময়লা রাস্তা পেরিয়ে যাই অক্লেশে ।


শ্রীরামকৃষ্ণ সারদামণিকে জিজ্ঞাসা করছেন —“ কি গো , তুমি কি আমাকে সংসারপথে টেনে নিয়ে যেতে এসেছ ?"

উত্তরে মা দৃঢ় কণ্ঠে বলছেন " না , আমি তোমাকে সংসারপথে কেন টানতে যাব ? তোমার ইষ্টপথেই সাহায্য করতে এসেছি । " কী অদ্ভুত কামবিহীন , দেহজ সম্পৰ্ক বর্জিত অথচ প্রেমভালোবাসাময় নিবিড় এক সম্পর্ক-সাধনা । হ্যাঁ , সাধনাই তো ! একে সাধনা ছাড়া আর কী বলবো ! আশা-আকাঙ্খার উর্দ্ধে স্থিত এমন স্ত্রীপুরুষের সম্পর্ক যে এ সংসারে অচল । নিজেকে শুন্য- রিক্ত করে জীবনসঙ্গীকে লোক-কল্যাণব্রত পথে উন্নীত করার সারদামণির এ তীব্র মানসিক জোরই তো গদাধরকে পরিবর্তিত করেছিল শ্রীরামকৃষ্ণরূপে । রামকৃষ্ণ বলছেন , " ও যদি এত ভাল না হতো , আত্মহারা হয়ে তখন আমাকে আক্রমণ করত , তাহলে (আমার) সংযমের বাঁধ ভেঙে দেহবুদ্ধি আস কিনা কে বলতে পারে ?"

রামকৃষ্ণ বলছেন  " লজ্জা , ঘৃণা , ভয় — তিন থাকতে নয় " , অথচ মা বলছেন " লজ্জা , ঘৃনা , ভয় তিন থাকতে হয় । যার আছে ভয় , তার হয় জয় — বিশেষ করে মেয়েমানুষদের |"

জয়রামবাটির সারদা । শরীরে ছোট্ট খাট্টো সাধারণ এক মেয়ে কিন্তু মনে কী অসম্ভব আত্মপ্রত্যয় ! শুধুমাত্র স্বামীর যোগ্য সহধর্মিনী বলে যে তাঁর সব কথা মুখ বুজে মেনে নেবেন তা কিন্তু নয় , প্রয়োজনে গলা তুলে বলেছেন ঠাকুরের উক্তির উদ্দেশ্যে , করেছেন ধারালো যুক্তিতে তাকে খণ্ডিত — " না না , সে যাঁরা ভগবৎ প্রেমে পাগল , তাঁদের কথা । আমি বলছি —লজ্জা , ঘৃণা , ভয় , তিন থাকতে হয় ।”

সাক্ষাৎ যোগমায়ার অংশবিশেষ তিনি । তিনি জানেন এ সংসার তাঁরই মায়ায় গড়া । ঠাকুর যদি পরমার্থ সাধনের পথ বলেছেন তো মা বলে গেছেন তাঁদের গৃহী সন্তানদের জন্য । পরমার্থ সাধন তো সবার জন্য নয় , সে যে এই পথ বেছে নেন সে পথ তাদের জন্য । আর যাঁরা সংসারমায়ায় বদ্ধ তাঁদের কথা কে ভাববে !

আপাতঃ মনে হতে পারে উঁ , যত লজ্জা , ঘেন্না , ভয় সব বুঝি মেয়েদেরই থাকতে হয় , ছেলেদের বুঝি কিছুই প্রয়োজন নেই ! তবে  মা কেন বলেছেন এ কথা ? গ্রাম্য নিরক্ষর মেয়েরা নিজেকে এক সংকীর্ণ গন্ডির মধ্যে আবদ্ধ করে রাখেন বলেই কি মায়ের এইরূপ চিন্তা ? মা বলেছেন ...

লজ্জা এখানে নারীর গন্ডি , তার সম্ভ্রমের সীমানা ।

ঘৃণা নারীর বীরত্বের প্রতিরূপ যা ভেঙে দেয় শত শত রাবণের মনোবল আর ভয় নারীর নিজেকে সংযত রাখার প্রয়াস মাত্র ।

আসলে নারীর মধ্যে যে সর্বশক্তিমত্তা , যার গর্ভে মধ্যে সমগ্র বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি বীজ নিহিত থাকে , যে স্বয়ং নবনির্মাণের ধারক ও বাহক তাকে সীমানার মধ্যে সীমিত থাকতে হয় বই কি! পৃথিবীর সব শক্তিকেই নিয়ন্ত্রণের শৃঙ্খলে বেঁধে রাখতে হয় নাহলে তা নিয়ে আসে ধ্বংস , অনাসৃষ্টি , প্লাবন । আজ পর্যন্ত নারীশক্তিকে যতবার অপব্যবহার করার চেষ্টা হয়েছে তা ডেকে এনেছে চরম সর্বনাশ । তা সে রাম -রাবণের যুদ্ধ হোক কিংবা কৌরব -পান্ডব বা শুম্ভ -নিশুম্ভ ।

ADVERTISEMENT

 

 

" দ্রৌপদীর ছিলেন মহা তেজস্বীনি , প্রচন্ড ব্যক্তিত্বশালিনী , কিন্তু কৌরবসভায় লজ্জারক্ষার জন্য তিনি কত ব্যাকুল হয়েছেন । "

এবং একই ব্যাপার যদিও পুরুষদেরও জন্য প্রযোজ্য ।নিজেদের পুরুষকার বজায় রাখতে হলে শরীরে মনে " লজ্জা - ঘৃণা -ভয় " থাকা আবশ্যক । লজ্জা ঘৃণা ভয় না থাকলে মানুষ আর মানুষ থাকে না যে , মান আর হুঁশ তার উধাও হয় ।


এই আত্মবিশ্বাসী সারদাই আবার কখনও পতিগতপ্রাণা । একবার তিন দিনের পথশ্রম কাটিয়ে মা এসেছেন ঠাকুর সন্দর্শনে । নৌকা থেকে নামতেই রামকৃষ্ণ বললেন সারদা কে : ' কবে রওনা দিয়েছো ?' সরদার উত্তর শুনে ঠাকুর বললেন 'তুমি বৃহস্পতিবারের বারবেলায় রওনা হয়েছ বলে আমার হাত ভেঙেছে । যাও , যাও যাত্রা বদলে এসোগে । ' সারদা সেদিনই ফিরতে চাইলে ঠাকুর বললেন ' আজ থাক , কাল যেও ।’ শ্রীরামকৃষ্ণের এরূপ রূঢ় ব্যবহার সারদাকে গভীর ভাবে আঘাত করলেও তিনি স্বামীর মুখের ওপর কিচ্ছু না বলেই আবার সেই দীর্ঘ যাত্রা শুরু করলেন জয়রামবাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা বদলের অভিপ্রায়ে । স্বামীকে দেখতেও পেতেন না , দরমার ছোট ফুটো দিয়ে ' ঝাঁকি দর্শন ' করেই শান্ত থাকতেন তিনি । রামকৃষ্ণ লক্ষ্য করলেন যে দরমার ফুতো ক্রমাগত বড়ই হয়ে চলেছে । একদিন সারদাদেবীকে শুনিয়ে ভাইপো রামলালকে বললেন " ওরে রামনেলো , তোর খুড়ীর যে পর্দা ফাঁক হয়ে গেল "!

এমনই ছিলেন সারদা মা । কঠোর -কোমল । কখনও সীতার মত পতিভক্তি আবার সময়ান্তরে দ্রৌপদীর মত ব্যক্তিত্বময়ী প্রতিবাদিনী । আত্মত্যাগী , সহিষ্ণু , পবিত্র , আনন্দময়ী , দৃঢ়চেতা , সর্বংসহা মাতৃমূর্তি ধরিত্রী যেন । শ্রীরামকৃষ্ণ তাঁর দ্বারা সম্পূর্ণ কিন্তু তিনি একাকী স্ব -মহিমায় উজ্জ্বল । জোৎস্নার মত সুনির্মল তিনি কিন্তু চাঁদের কলঙ্কটুকু তাঁর মধ্যে নেই বার বার ঈশ্বরের কাছে কামনা করেছেন —“ চন্দ্রেতেও কলঙ্ক আছে , আমার মনে যেন কোন দাগ না থাকে । " সংসারপাঁকে নিমজ্জিত কিন্তু গায়ে মোহের পাঁক লেগে নেই ।

মা বলেছেন " আমি মৃত্যুঞ্জয় " । কারণ তিনি জানেন , তাঁর এ নশ্বর দেহ ছাই হয়ে উড়ে যাবে কিন্তু তাঁর আদর্শ , কথা , চিন্তা যুগে যুগান্তরে মানব মানবী মাঝে লাভ করবে অমরত্ব । সারদা মায়ের দেহান্তরের সংবাদে মিস ম্যাকলাউড স্বামী সারাদানন্দকে চিঠিতে লিখেছিলেন ( ১৫ ই আগস্ট , ১৯২০ ) : " সেই নির্ভীক , শান্ত , তেজস্বী জীবনের দীপটি তাহলে নির্বাপিত হলো । আধুনিক হিন্দুনারীর কাছে রেখে গেল আগামী তিন হাজার বছরে নারীকে যে মহিমময় অবস্থায় উন্নীত হতে হবে , তারই আদর্শ !"


তথ্য সূত্র : ' চিরন্তনী সারদা '-স্বামী পূর্ণাত্মানন্দ , ' কথামৃত'  , ' লীলাপ্রসঙ্গ '  ও বিবিধ ।

Redirect to Address page

Updating Subscription details

Redirecting...Please Wait