গল্প : ফাঁদ
কলমে : শাওনা চক্রবর্তী ঘোষ
রোজ সকালে ঘুমঘুম চোখে উঠেই দৃশ্যটা দেখে অভ্যেস হয়ে গেছে উষসীর। এখন আর ঘৃণা আসে না, তাই বমিও পায়না। অভ্যস্ত হাতে ঝাঁটা নিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নরম মাংস, তাজা রক্তের ফোঁটাগুলো ধুয়ে দেয় জল ঢেলে। এ তার প্রায় রোজকার কাজ। এই কাজ করতে করতে নিজের সাথে শ্মশানের চণ্ডালের কোনো পার্থক্য খুঁজে পায় না সে।
খুব সকালবেলা উঠে ছেলেকে স্কুলের জন্য তৈরী করতে করতে উঠোনে রাতের এই হত্যালীলা দেখে প্রথম প্রথম সে নিজেকে সামলাতে পারত না। ঘৃণা হত তার। খাবার রুচতো না মুখে। সারাদিন কি যেন এক অব্যক্ত কষ্টে কাটত তার। কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতেও পারত না। এইটুকু বিষয়, লোকে হয়তো আধিখ্যেতা ভাবতে পারে! বৃন্ত থেকে ছিঁড়ে নেওয়া গোলাপ কি আর ফৌজদারী কোর্টে বিচার পায়? কিন্তু কোর্টে বিচার না হলেও, নিজে বিচারক হতে ক্ষতি কি? সব খুনি, সব ধর্ষক কি আর বিচার পায়? নিজের সন্তানকে চোখের সামনে খুন হতে দেখলে যদি মা নিজের হাতে অস্ত্র না তুলে নেয়, তাহলে সেই মাকে ধিক্কার!
ADVERTISEMENT
আজও সেই এক দৃশ্য। নরম কিছু মাংস, কয়েকটা নখ আর সাদা সাদা কিছু পালক। ভোগ হয়ে গেলে উচ্ছিষ্ট যেমন পড়ে থাকে। উষসীর একঝাঁক পায়রা ছিল। শান্তির দূত তার বাড়িতে এসে বাসা বেঁধেছিল। কিন্তু তার সন্তানসম সেই পায়রাগুলোর এক ঘাতক প্রেমিক জুটলো। অন্ধকারে তার চোখদুটো জ্বলজ্বল করে, লোভে। শরীরের লোভে, নরম মাংসের লোভে। সেই প্রেমিক যে খুব ক্ষুধার্ত! এক এক করে অনেক পায়রা খেয়েছে সে।
প্রাণে মারেনি উষসী তাকে। সেদিন ব্যবস্থা করে রেখেছিল একহাঁড়ি কষকষে গরম জলের। তার আগে অবশ্য সেই দস্যু প্রেমিককে যত্ন করে মাছ ভাত খেতে দিয়েছে সে! রূপের অহংকার? উষসীর সব সন্তানকে ভোগ করার বাসনা? আজই শেষ ওর রূপের অহংকার।
বেড়ালটা বুঝতেও পারেনি কখন তার গায়ে একরাশ গরম জল এসে পড়েছে! যন্ত্রনায় ছটফট করছিল সে। ঐ গা ভর্তি রুপোলি রোম একনিমেষে পুড়ে গেল তার।
শুধু উষসীর মুখে নির্মল হাসি। পেরেছে সে তার সন্তানের খুনিকে শাস্তি দিতে। এ আনন্দ পৈশাচিক নয়, বরং শুদ্ধ। শান্তির দূতেরা আকাশের ঠিকানায় পৌঁছে গেছে কবেই! আজ বোধহয় তাদের আত্মারও শান্তি হল।
0 comments